বৈদ্যুতিন এই গতির যুগে, সর্বনাশা অনিয়ন্ত্রিত গতি, অপরিণত শিশু বা নাবালকের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে চলেছে অনেক ক্ষেত্রেই। তার প্রমাণ বর্তমান এই অশান্ত সমাজ। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। সুনাগরিক হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে, কিছু সংস্কার ও সংযোজন প্রয়োজন। চলমান যে কোনও জিনিসের গতি-নিয়ন্ত্রক থাকে। যেমন গাড়ির জন্য স্পিড ব্রেকার। কিন্তু ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সব কিছু থাকলেও, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গতি-নিয়ন্ত্রক নেই। ইন্টারনেটে সব কিছু দ্রুত দেখে, বাস্তবে সে রকমই দ্রুতপ্রাপ্তি ঘটাতে মানুষ দুর্ঘটনার সম্মুখীনও হচ্ছে। আবার সংযম শিক্ষাও হারিয়ে ফেলছে। অপরিণত শিশুদের জন্য বিশেষ বিশেষ তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার্থে, স্ক্রিন ধূসর হয়ে যাওয়া বা স্লো করে দেওয়া, এমন কিছু গতি-নিয়ন্ত্রক জরুরি। এ ছাড়া, মন শান্ত রাখতে, কিছু ধীর গতির কাজও অভ্যাস করা দরকার ছোট থেকে বড় সকলেরই। যেমন গান শোনা, ছবি আঁকা, খেলা, বই পড়া, গৃহকর্ম, হাতের কাজ।
রীনা আইচ পণ্ডিত
নাগরিকত্বের নথি
নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভোটার কার্ডকে নস্যাৎ করার প্রশ্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুবই প্রাসঙ্গিক। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে ভোটার তালিকা এবং ভোটার কার্ড তৈরি হয়। ভোটার তালিকায় নাম থাকার প্রথম এবং প্রধান শর্ত, ভারতীয় নাগরিকত্ব। এই বিষয়ে কারও যদি কোনও সন্দেহ থাকে, তা হলে নথিভুক্ত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আপত্তি জানাতে পারেন। সেই সংস্থানও আইনে আছে। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কেবলমাত্র এনআরসি গ্ৰাহ্য হলে, ভোটার তালিকার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। সে ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন করে এনআরসিকে মান্যতা দিতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সেনাবাহিনী-সহ সমস্ত রকম সরকারি চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করার অন্যতম শর্ত, ভারতীয় নাগরিকত্ব। পরীক্ষায় যোগ্য বলে বিবেচিত হলেও, নিয়োগপত্র দেওয়ার আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে প্রার্থীর নাগরিকত্ব-সহ তাঁর দেওয়া সমস্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়। মাননীয় মন্ত্রীর সুরক্ষায় যাঁরা নিয়োজিত বা দেশরক্ষায় যাঁরা অতন্দ্র প্রহরী, এনআরসি না থাকায় তাঁদের দায়বদ্ধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতায় কোনও ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে কি? আধার কার্ডও যদি নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি না-হয়, তা হলে গ্যাসের ভর্তুকি পাওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হল কেন? অরুণাচল প্রদেশ-সহ ভারতের কয়েকটি সংবেদনশীল এলাকায় বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভারতীয়দেরও বিশেষ অনুমতিপত্রের বিনিময়ে সেখানে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ভোটার বা আধার কার্ড দেখিয়ে এই অনুমতি মেলে। এই দু’টি নথি নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ট বিবেচিত না-হলে, এনআরসি সেই নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হবে, এমন কোনও গ্যারান্টি আছে?
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা
কলকাতা-১০৭
ট্রেন ও হাতি
2 ‘ফের ট্রেনের ধাক্কায় বাতাসীতে মারা গেল পূর্ণবয়স্ক দু’টি হাতি’ (১১-১২) প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ২০০৪ সালে ভারত সরকারের হস্তী-প্রকল্পের তরফে, ৬টি রাজ্যের ১৩টি সংরক্ষিত অঞ্চলকে রেল-হাতি সংঘাতপ্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তরাই ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ছিল অন্যতম। ১৯৮৭-২০০৯-এর মধ্যে, রেল ইঞ্জিনের ধাক্কায় ১৫১টির বেশি হাতির মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য এই অঙ্কটা বহু গুণ বৃদ্ধি পায় ২০০৩ সালের পর থেকে। কারণ, এই বছরই নিউ জলপাইগুড়ি থেকে অসমের নয়া বঙ্গাইগাঁও পর্যন্ত ২৮০ কিমি ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হয়। এর পর থেকে যেন, উত্তরবঙ্গের তরাই ডুয়ার্সের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীদের, বিশেষত হাতির চলাচল ভয়ানক বিপদসঙ্কুল হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র ২০১৩-২০১৯ (জুন) সময়কালের মধ্যেই ৬৭টি হাতি রেলে কাটা পড়েছে (বেসরকারি মতে সংখ্যাটি অনেক বেশি)।
২০১৫-১৬’র মধ্যে, রেলের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু কিছুটা কমেছিল। কারণ, বন দফতরের সঙ্গে আলোচনার ফলে, রেল এই বনাঞ্চলের ভিতর গতি ২৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় নামিয়ে এনেছিল। কিন্তু যাত্রী পরিষেবার দোহাই দিয়ে, রেল আবার গতি বাড়িয়ে দেয়। ফলে, হাতি-মৃত্যুর সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে।
যদিও, মৃত্যু ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, রেল ও বন দফতর বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন, সম্ভাব্য করিডরগুলিতে মৌমাছির কৃত্রিম গুঞ্জনের শব্দ বাজানো। চিলি ফেনসিং, বাঘের কৃত্রিম হুঙ্কার, ঘোড়ার বিকট আওয়াজ, বিভিন্ন ধরনের আর্লি অ্যালার্ম ডিভাইস প্রতিস্থাপন ইত্যাদি। তুখড় বুদ্ধিধারী হাতির দল ওই কারসাজি কিছু দিনের মধ্যেই ধরে ফেলেছে অতি সহজেই। বিফলে গিয়েছে সমস্ত টোটকা। পরিবেশবিদদের মতে, উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেলট্র্যাক কার্যত আজ ‘কিলার ট্র্যাক’-এ পরিণত হয়েছে। এখানে হাতি-মৃত্যু ঠেকাতে, শীঘ্রই বন দফতর ও রেলের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।
ঝন্টু বড়াইক
ইমেল মারফত
সহায়িকা?
সরকারি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির বাংলা মাধ্যমে প্রথম ভাষা, দ্বিতীয় ভাষা ও গণিত পুস্তক বিনামূল্যে দেওয়া হলেও, তা আসলে সহায়িকা পুস্তিকা ক্রয়ের সাহায্যকারী। পাঠ্যবইগুলিতে অধিকাংশ প্রশ্নের সমাধান মেলে না। বাংলা বইয়ে কোনও অনুশীলনী নেই। ইংরেজি পাঠ্য বইয়ে অনুশীলনী থাকলেও, তার সমাধান নেই। গণিত বইয়ে অনুশীলনী ও সমাধান থাকলেও সমাধান-পদ্ধতি নেই। শিক্ষকেরাও প্রায়ই সহায়িকা পুস্তক থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন করেন। ফলে, সহায়িকা পুস্তক কেনাই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়। বহু দুঃস্থ ছাত্রেরই তা কেনার সামর্থ্য থাকে না। তাই অনেক সময়ে, এ কারণেই অনেকে আশানুরূপ ফল করতে পারে না বা অকৃতকার্য হয়। যদি প্রয়োজনীয় সহায়িকা পুস্তক বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হয়, আমাদের মতো বহু শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।
অভ্র কিশোর ভট্টাচার্য
বুনোকালীতলা, হুগলি
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
‘...বাধা ভেঙে ভারত উদয়’ (২০-১২) শিরোনামে আপনাদের পত্রিকা পাঠকদের কী বোঝাতে চেয়েছে, জানি না। ভারত কি এত দিন অস্তমিত ছিল? মনে হচ্ছে, এই পত্রিকা কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত নীতির বিরোধী প্রচারে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। দেশের সরকার- বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিপন্ন অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে, তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপকেও সমর্থন করে চলেছে এই পত্রিকা। আপনারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রতি দিন খুঁজে চলেছেন, এ দেশের কোন বিখ্যাত ব্যক্তি সরকারবিরোধী বক্তব্য পেশ করেছেন। এমনকি সদ্যোজাত শিশুর গলায় সরকার-বিরোধী প্ল্যাকার্ড ঝুলছে, এমন ছবি পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপতে হাত কাঁপছে না।
শশাঙ্ক শেখর মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
বেলগাছিয়া