সুনসান ওয়াহোর রাস্তাঘাট।
আমাদের বাড়ি কলকাতার বেহালা শকুন্তলা পার্কে। স্বামীর কাজের সূত্রে অনেক বছর ধরে ওহায়োতে আছি আমরা। গত ১২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ‘স্টে অ্যাট হোম’-এর কারণে আপাতত চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সবাই প্রায় গৃহবন্দি।
‘স্টে অ্যাট হোম’ চালুর সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের দোকানগুলোতে জিনিস কেনার ধুম পড়ে গেল । যদি পরে না পাই, এই ভয়ে সবাই বেশি বেশি স্টক করছে দেখলাম। লাইনে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছি পৌঁছতে পৌঁছতে সব শেষ না হয়ে যায়! যদিও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসই পেয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত।
তবে দোকানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খুঁজে অনলাইনে পেয়েছি। সবাই কমবেশি মাস্ক পরেই বেরচ্ছেন। রাস্তাঘাটে ভুল করেও কেউ হাঁচলে তাঁর দিকে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছেন অন্যান্যরা। সে দিন একটি সুপারস্টোরের লাইনে দাঁড়িয়ে খুব জোরে হাঁচি পাচ্ছিল, ভয়ে গিলে ফেল্লাম।
স্টোরগুলো এখন হোম ডেলিভারি ও দিচ্ছে। তবে ডেলিভারি স্লট পেতে গভীর রাতেও ল্যাপটপের সামনে উবু হয়ে বসে থাকছি। স্টক ফিলআপও হচ্ছে তাড়াতাড়ি। কিছু কিছু জিনিস পেতে একটু দেরি হচ্ছে বটে, তবে দৈনন্দিন জিনিস সব পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু দোকানে পুলিশ বা হেল্থকেয়ার লোকেদের প্রায়োরিটি লাইনও থাকছে।
আমাদের বাড়ির কাছেই একটা বড়ো পার্ক আছে, আপাতত তালাবন্ধ, বাচ্চারা কম্যুনিটির মধ্যেই সাইক্লিং করছে দূরত্ব বজায় রেখে। সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনে শরীরচর্চায় ছাড় দেওয়া হয়েছে, অনেকে দূরত্ব বজায় রেখে শরীরচর্চাও করছেন। পাশের বাড়ির বন্ধু হোক বা অচেনা কেউ, সবাই দূর থেকেই হাই, হ্যালো করছি । এখন বাইরের কারুর সাথে রাস্তাঘাটে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলছি । মনের মধ্যে একটা ভয় সবারই কাজ করছে।
স্বামী অফিসের কাজ করছে বাড়ি থেকেই। মেয়ের স্কুল, তাইকোন্ডো, ড্রয়িং সবই অনলাইন এখন। কিছুদিন আাগেও সপ্তাহান্তে বাড়িতে বন্ধু বান্ধবদের আড্ডা লেগেই থাকত, সেই দিনগুলো আবার কবে ফিরবে কে জানে! এই কঠিন সময়ে বিভিন্ন ইন্ডিয়ান কমিউনিটি একে অপরকে দারুণ ভাবে সাপোর্ট করছে। সে দিন এক হাইস্কুল ছাত্রের টেস্টে পজিটিভ আসে, তার প্লাজমা ডোনার খুজতে সবাই যে ভাবে এগিয়ে এসেছে তা প্রশংসাযোগ্য।
নিজের ভাল কিসে হয় বুঝতে পারছে এখানকার লোকজন এবং সরকারি নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করছে। আস্তে আস্তে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং সিস্টেমে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন সবাই, যাতে নিজেকে এবং অন্যকে বাঁচানো যায়।
বেদত্রয়ী ব্যানার্জী
ডাবলিন, ওহায়ো, আমেরিকা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)