নির্জন রেডমন্ড।
চিঠি ১) দেখতে দেখতে বদলে গেল ওয়াশিংটন
প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে আমেরিকার রেডমন্ড শহরে বাস করছি। শহরটি প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে, ওয়াশিংটন রাজ্যে, আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে। গোটা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস আমেরিকার এখানেই প্রথম হানা দেয় জানুয়ারির শেষাশেষি। সে সময় আমরা কেউই গুরুত্ব দিইনি। স্কুল, কলেজ, অফিস সবই চলতে থাকে। ফ্রেবুয়ারির শেষে হঠাৎ হু হু করে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। একে একে বন্ধ হয়ে যায় অফিস, স্কুল, কলেজ। প্রথমে দু’সপ্তাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হলেও, পরে তা বাড়িয়ে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। বন্ধ করা হয় মানুষের জমায়েত। কিন্তু তাতেও কোন কাজ না হওয়ায় এখন ঘরবন্দি থাকার নির্দেশ।
ফ্রেবুয়ারির শেষ থেকেই রেস্তরাঁগুলো বন্ধ হতে থাকে। শপিং মলে টান পড়ে জিনিসপত্রের। টয়লেট পেপার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ব্লিচ সবকিছুই অমিল হয়ে পড়ে। এমনকি চাল, আটাও পাওয়া যাচ্ছে না। কী আর করব কিছু ওটস কিনে রাখলাম। পরে খবর পেলাম, ভারতীয় দোকানগুলিতে কিছু জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে, তবে লাইন অনেক বড়। এক সঙ্গে ১০ জনের বেশি ঢুকতেও দিচ্ছে না। অফিসের কাজকর্ম তো বটেই, এমনকি এলিমেন্টারি স্কুলে অনলাইনে পড়ানো হচ্ছে।
দেখতে দেখতে চারদিকটা কেমন যেন বদলে গেল। এখানে বেশিরভাগ সময়েই ঠান্ডা আর আকাশ ধূসর মেঘে ঢাকা থাকে। মার্চ থেকেই একটু রোদের মুখ দেখা যায়। আমরাও সকলে বাইরে বেরোই। কিন্তু এ বছর সব বন্ধ। এখন এ রাজ্যে করোনার প্রকোপ একটু কমে এলেও, পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ঘরবন্দি থাকার মেয়াদও বাড়িয়ে ৪ মে অবধি করা হয়েছে।
দেবশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় চট্টরাজ
রেডমন্ড, ওয়াশিংটন
চিঠি ২) নিউইয়র্ক সিটিতে এখন অন্তহীন রাত্রি
করোনার কবলে এখন সমগ্র পৃথিবী কাহিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এত অগ্রগতির মধ্যেও যেন প্রকৃতির রোষানল দেখা দিয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে যেন তাণ্ডব দেখাচ্ছে করোনা। এখানকার দ্য ব্রন্কস বরোর আমি । এক হাসপাতালের একটি প্রতিষ্ঠানে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চার হিসেবে কাজ করছি। বলা বাহুল্য যে, বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। যদিও খাদ্য সামগ্রী, ওষুধের দোকানে অনলাইন ব্যবস্থা, অনেক ব্যাঙ্কে মাসিক কিস্তি না দেওয়ার মতো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এমন ভাবে ক’দিন? যে শহর নাকি ঘুমায় না সেই নিউইয়র্ক সিটিতে যেন নেমে এসেছে এক অন্তহীন রাত্রি। এই ব্যস্ত উল্লসিত শহরে নিজেকে মনে হচ্ছে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। হাসপাতালের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে থাকার জন্য প্রতি নিয়ত কাছ থেকে দেখছি হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিশ্রম। জানতে পারছি, কত গবেষণাগারে ‘শিফ্ট’ করে চলছে
জরুরি গবেষণা। এই কর্মীদেরও তো পরিবার আছে। আমার বা আমার মতো অনেকেরই হয়তো জীবনসঙ্গী, মা, বাবা, এই দূরদেশের বা পৃথিবীর অন্য প্রান্তে দুশ্চিন্তা করছেন। এ শহরে যেমন ধরেই নেওয়া হয়েছে, যে সবারআক্রান্ত হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। হয়তো আমিও হব। খবরে শূনলাম সিডিসি (সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) জানিয়েছে যে সকলের মাস্ক প্রয়োজন, দরকার হলে কাপড়েরও চাই। সবার তাই সচেতন হয়ে বাইরে না বেরনোটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ওষুধ, পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই। আজকাল কলকাতায় মা-বাবার সঙ্গে বা সাউথ ক্যারোলিনার কলম্বিয়ায় স্বামীর সঙ্গে, স্কাইপেতে রুটিন আলোচনা হয়। তাই , কবে এ সব শেষ হলে একটু দেখা করতে পারি, সেই সুদিনের অপেক্ষায় দিন গুনছি।
মালিনী গুপ্ত
দ্য ব্রনক্স , নিউইয়র্ক সিটি
৩) প্রবল দুশ্চিন্তা নিয়ে মেক্সিকোয় আটকে রয়েছি
আমি এক জন প্রবীণ নাগরিক। আমার স্ত্রীকে মেক্সিকো এসেছিলাম ছুটি কাটাতে। তিনি নিজেও এক জন বয়স্ক নাগরিক। তার পর আচমকা লকডাউন ঘোষণা হল। আমাদের নিউইয়র্ক থেকে ২১ মার্চ বিমান ধরার কথা ছিল। আমরা সরকারের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ঘোষণা করার কথা জানতে পারলাম ২০ মার্চ, যখন আমরা মেক্সিকোর ক্যানক্যানে ছিলাম।
হাজার চেষ্টা করেও আমরা ফিরতে পারিনি। তার পর থেকে আমরা এক রাশ উদ্বেগ নিয়ে মেক্সিকোয় আটকে পড়েছি। আমরা বিদেশ মন্ত্রকে ই মেল করেছিলাম এবং স্থানীয় দূতাবাসে জানিয়েছিলাম। আমরা এখন কার্যত বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছি এবং ফেরার কোনও আশা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা আমাদের টিকিট নতুন করে কেটেছিলাম। কিন্তু তা-ও বাতিল হয়েছে।
আমরা ই পেপারে দেখলাম যে, আমাদের সরকার ভারতের যেখানে বিদেশি নাগরিকরা আটকে পড়েছেন সেখান থেকে তাঁদের নিজের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বিদেশের যেখানে ভারতীয় নাগরিকরা আটকে পড়েছেন তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনও আশ্বাস পেলাম না।
এক জন প্রবীণ নাগরিককে বিদেশ বিভুঁইয়ে এমন সময়ে ফেলে রাখা খুবই অমানবিক।
সন্দীপ সেন
ফোন নম্বর- ০৯৮৩০২৫৬২৫৩
ই মেল- technocon.sandip@gmail.com
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন,feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)