ট্যামওয়ার্থ এখন সুনসান।
আমি কর্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বিগত ৬ বছর ধরে। আর আমার দাদা ১৬ বছর। আমি শল্যচিকিৎসক আর দাদা ইঞ্জিনিয়ার। মা ও বাবা আমাদের কাছে থাকেন এক বছর তার পর দেশে ফিরে যান কয়েক মাসের জন্য এবং আবার এখানে আসেন।
দাদা থাকে সিডনি তে। আর আমি থাকি ট্যামওয়ার্থ নামে একটি ছোট শহরে, যেটা সিডনি থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।ডাক্তার হওয়ার কারণে আমার বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ নেই। রোজ বাড়ি থেকে বেরনোর সময় মনে হয় আরেকটা নতুন দিন দেখার সুযোগ দিল ভগবান। আমাদের হাসপাতালে করোনার জন্য এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ জন করোনা রোগী ধরা পড়েছে এখনও অবধি।
দিনে গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা কাজ আমার। তাই বাড়ি ফেরার সময় একটাই জিনিস যেটা অন্য রকম লাগে, সেটা হল রাস্তা বড় ফাঁকা। এমনিতেই এখানে লোকজন বেশ কম। কিন্তু এখন যেন মনে হয় ভুতূড়ে শহর। প্রথম দিকে একটা অজানা আতঙ্ক গ্রাস করেছিল মানুষকে, যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি হবে। টয়লেট রোলের আকাল দেখা দিয়েছিল, যার কারণ আমার জানা নেই। আমরা হাসপাতালে হাসিঠাট্টা করি, করোনা কি লোকজনের পেট খারাপেরও কারণ হলো নাকি!
এখনও অবধি সবই অজানা এই রোগের ব্যাপারে। তাই চিকিৎসা নিয়ে অনেক গুজবও ছড়াচ্ছে অকাতরে। সোশ্যাল মিডিয়া এ ব্যাপারে বেশ অগ্রগণ্য ভূমিকা নেয় কিছু সময়। লোকজনের ভীষণ অসুবিধা সত্ত্বেও সরকার ও জনগণের নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস প্রশংসনীয়। দুটো একটা ছুটকো ঘটনা ছাড়া সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করছে। এখানে বোরো পরব এ বছর খুব একটা ধুমধাম করে পালিত হল না। কিন্তু সকলে ঘরে থেকে সরকারের পাশে থআকার বার্তা দিয়েছে। আসতে আসতে শীত পড়ছে এখানে। আশা করি করোনা বিদায় নেবে তাড়াতাড়ি। মা ও বাবা পয়লা বৈশাখ কাটিয়ে আসার জন্য একটু দেরি করেছিল। এ বার আরও কয়েক মাস এর অপেক্ষা। দেখি কত তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়।
নতুন বছরে নতুন দিন এর অপেক্ষায় রইলাম।
সুস্মিত রায়
ট্যামওয়ার্থ হাসপাতাল, এনএসডব্লিউ
অস্ট্রেলিয়া
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)