Coronavirus Lockdown

ফুল ফুটেছে, কিন্তু বসন্ত উদযাপনের লোক নেই জাপানে

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৫৪
Share:

এ বারের বসন্ত সত্যিই অন্যরকম।

মাস দুই আগে যখন চিন থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়া শুরু করেছিল অন্য দেশগুলোতে, জাপান ছিল তালিকার একেবারে ওপরের দিকে। মূল কারণ অবশ্যই ছিল ইয়োকোহোমা বন্দরে নোঙর করে থাকা অভিশপ্ত ‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’ জাহাজ। কিন্তু তা ছাড়াও জাপানের একেবারে উত্তরে হোক্কাইডোতেও ছড়িয়ে পড়েছিল ত্রাস। চিন থেকে বেড়াতে আসা একদল টুরিস্টদের থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ে তাঁদের জাপানি বাস ড্রাইভার আর তাঁর সহকারীর মধ্যে। তারপর অঙ্কের নিয়ম মেনেই একের থেকে অনেকে।

Advertisement

আমরা গত দু’বছর ধরে টোকিয়োর বাসিন্দা। হোক্কাইডো থেকে টোকিয়োর দূরত্ব অনেক। তাই সংক্রমণের প্রথম পর্বে ভয়টা ছড়িয়ে পড়তে সময় লেগেছিল। তার পর একদিন টোকিয়োতেও ধরা পড়লো সংক্রমণ। মানুষ খানিকটা সতর্ক হল। মনে হল লক ডাউন হবে। প্রবলভাবে নিয়ম মেনে চলা জাপানিদের মধ্যে দেখা দিল প্যানিক। আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়ল সুপারমার্কেটগুলোতে। সবার আগে শেষ হয়ে গেলো টয়লেট পেপার। কারণ অজানা কিন্তু এ দৃশ্য কিন্তু অন্য দেশগুলোর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সমস্ত উন্নত দেশেই টয়লেট পেপার রোজকার ব্যবহারের জিনিসগুলোর মধ্যে একদম প্রথম সারিতে থাকে। তাই যেমন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বা আমেরিকাতে দেখা গেছে, জাপানেও লোকজন পাহাড়প্রমাণ টয়লেট পেপার কিনে জড়ো করেছে বাড়িতে।

এরপরই খাবার দাবার, শাক সবজি যেখানে যতটা জোগাড় করে রাখা সম্ভব সবটাই করেছে মানুষ। দোকান থেকে উধাও হয়ে গেছে মাস্ক, স্যানিটাইজার। অন্যদিকে, সাবধানতার খাতিরে অফিস-কাছারিগুলিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের হিড়িক শুরু হয়েছে। পৃথিবীর সবথেকে বেশি রেস্তরাঁ থাকা শহর টোকিয়ো। সপ্তাহের সাত দিন ভিড় লেগে থাকে বড় থেকে ছোট সব রেস্টুরেন্টে। মুহূর্তে সব ভিড় উধাও। সত্যি কথা বলতে কি এই সময়ের টোকিয়োর ছবি আশা জাগিয়েছিল। মনে হয়েছিল এটাই তো একটা উন্নত জাতির উপযুক্ত ব্যবহার। নিজেরা সচেতন না হলে এ মহামারিকে আটকানো সম্ভব নয়। নিয়মনিষ্ঠ জাপানিরা এ ব্যাপারে অনায়াসে উদাহরণ হতে পারে সারা বিশ্বের কাছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: এত সাবধানী ছিলাম না, যতটা একটা ভাইরাস করে দিয়েছে​

ফল মিলেছিল হাতেনাতে। সরকারি হিসেবে জাপানে সংক্রমণের হার কমে গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য ভাবে। যে দেশ করোনা সংক্রমণের প্রথমপর্বে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে ছিল, সেই দেশ একময় চলে যায় তালিকার অনেক নীচের দিকে।

কিন্তু আজ এই এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষ ভাবছে সত্যি সেদিনের সরকারি পরিসংখ্যান নির্ভুল ছিল তো! অনেকেই জানেন যে ২০২০-তে অলিম্পিকের আসর বসার কথা ছিল জাপানে। সারা পৃথিবী জুড়ে করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পরেও জাপান প্রানপণ চেষ্টা করেছিল অলিম্পিককে বাঁচানোর। কারণ প্রায় মন্দায় চলতে থাকা জাপানি অর্থনীতিতে নতুন করে আশার আলো জোগাতে পারত অলিম্পিক। গত কয়েক বছর ধরে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে অলিম্পিককে কেন্দ্র করে। স্পনসরশিপ আর অন্যান্য আয়ের কথা ধরলে বিপুল আর্থিক লাভের সম্ভবনা ছিল জাপানের। তাই নিন্দুকেরা বলছে জাপান সরকার হয়তো প্রথমদিকে সঠিক তথ্য দেয়নি সংক্রমণের আসল চিত্রের। কিংবা হয়তো যথেষ্ট পরীক্ষা করা হয়নি আর তার ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে সংক্রমণের পরিমান ছিল অনেক কম। অলিম্পিক পিছিয়ে গিয়েছে। আশ্চর্জজনক ভাবে অলিম্পিক পিছিয়ে যাওয়ার ঘোষণা হওয়ার ঠিক পরের দিন থেকেই টোকিও তে সংক্রমণের হার হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। কাকতালীয় ! কে জানে !

সরকারিভাবে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংক্রমিতর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৭০০। লাফিয়ে লাফিয়ে সেই সংখ্যা বেড়ে চলেছে। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। যদিও আমাদের দেশের মতো লক ডাউন নয়। এখানকার ব্যাপারস্যাপার অনেক ঢিলেঢালা। লোকজনকে অনুরোধ করা হয়েছে রাস্তাঘাটে না বেরোতে। কিন্তু নিয়ম ভাঙলে শাস্তির ব্যবস্থা নেই। সরকার এখানে অনেকটাই দেশের মানুষের মুখাপেক্ষী। শুনেছি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে লক ডাউন চাপিয়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব।

আরও পড়ুন: সম্পাদক সমীপেষু: প্রবীণদের পরামর্শ​

জাপানে এখন ‘চেরি ব্লসম’-এর মরসুম। প্রতিবছর এইসময় সবথেকে বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন এদেশে। সুন্দর জাপান সুন্দরতম হয়ে ওঠে। অনন্য সুন্দর প্রকৃতির মাঝে দেশ জুড়ে হয় বসন্তের উদযাপন। এবার সব অন্যরকম। প্রকৃতির নিয়মে ফুল ফুটেছে। প্রতিবছরের মতোই জাপান হয়ে উঠেছে সুন্দর। কিন্তু উৎসবে মেতে ওঠার মতো মানুষ নেই। এ বসন্ত সত্যিই একেবারে অন্যরকম।

শুভব্রত মুখোপাধ্যায়

টোকিয়ো, জাপান

ছবি:মৌমিতা মুখোপাধ্যায়

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement