মালিক মাইনে, খাওয়ার টাকা দিচ্ছেন না। প্রতীকী ছবি।
চিঠি এক) মাইনে নেই, কী করে দিন কাটাব আমরা?
নবী মুম্বইয়ে সিবিডি বেলাপুরে রেস্তরাঁতে কাজ করছিলাম। লকডাউনের জন্য আমরা বাড়ি ফিরতে পারিনি বা আমাদের যেতে দেওয়া হয়নি। আমরা ১৫ জন কর্মী এখানে আটকে রয়েছি। আমাদের অনেকই জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি থেকে মাইনে পাইনি। তা নিয়ে কথাবার্তা চলছে। খাওয়াখরচের জন্য রেস্তরাঁর মালিক কিছু কিছু করে টাকা দিতেন আমাদের। তা দিয়েই কষ্ট করে ডালভাত খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। এখন তিনি বলছেন, আমার কাছে টাকা নেই, তোমরা নিজেরটা দেখে নাও। মালিক আমাদের মাইনে, খাওয়ার টাকা দিচ্ছেন না। আমরা কী করব? আমাদের তো খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে!
প্রদীপ দেবনাথ, সিবিডি বেলাপুর, নবী মুম্বই
চিঠি দুই) ভেলোরে অপারেশন করাতে এসে আটকে পড়েছি
উত্তর ২৪ পরগনার মাটিয়াতে বাড়ি। বাবা এবং কাকুর সঙ্গে গত ১৫ মার্চ চিকিৎসা করাতে ভেলোরে এসেছিলাম। আমার অপারেশনের তারিখ ছিল ২৩ মার্চ। সমস্ত রিপোর্ট বার হয়ে যাওয়ার পরও করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হওয়ায় আমার অপারেশন স্থগিত হয়ে যায়। আমরা এখানে আটকে পড়ি। কিন্তু, টাকাপয়সা যা ছিল, প্রায় সব শেষ। খুব সমস্যা হচ্ছে, ঘরভাড়া দিতে পারছি না। ভাড়া দেওয়ার জন্য খুব চাপ দিচ্ছেন বাড়ির মালিক। আমরা ভীষণ কষ্টে আছি। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিন।
ফিরোজ আহমেদ, ভেলোর, মোবাইল: ৯৭৩৫৭৩৬৪৮৯, ইমেল: firojahmed0078@gmail.com
চিঠি তিন) লকডাউনের মধ্যেই চাকরিটা গেল, কখনও এতটা অসহায় মনে হয়নি
স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে আমাদের চার জনের পরিবার। স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চ পদে রয়েছেন। অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে তাঁর কাজ চলে যায়। এখন আমার রোজগারেই সংসার চলে। সেটা অবশ্য যথেষ্ট নয়। যেটুকু সঞ্চয় রয়েছে, তা দিয়ে কোনও রকমে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। ছেলের দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষার পর ভেবেছিলাম, কলকাতায় ফিরব। কিন্তু, হঠাৎ লকডাউন শুরু হল। ইতিমধ্যেই আমিও কোনও রকম নোটিস ছাড়াই চাকরিটা হারালাম। এখন আমাদের কোনও রোজগার নেই। সঞ্চিত অর্থও প্রায় শেষ। আর বাড়িভাড়া এবং অন্যান্য খরচাপাতিও বাড়ছে। আক্ষরিক অর্থেই অসহায় মনে হচ্ছে। গত ২০ বছরে বাংলার বাইরে থাকাকালীন কখনও এমন অসহায় মনে হয়নি। দয়া করে সাহায্য করুন, না হলে আমাদের পরিস্থিতি খুব শোচনীয় হবে।
এস এ ঘোষ, মুম্বই, মোবাইল: ৯৯২৫০০৪২১৮
চিঠি চার) লকডাউনের সময় ওষুধের ব্যবস্থা করল পুলিশ
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। ছোটবেলায় শুনেছি, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা! আমার এই ঘটনায় ক্ষেত্রে এই প্রবাদটা বোধহয় খাটে না। করোনাভাইরাসের করুণায় আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি এতটাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে যে, এখন এক জন আর এক জনের সঙ্গে মৃদুমন্দ বাক্যালাপ করতে গেলেও যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। এহেন প্রতিকূল পরিস্থিতে যাঁরা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন তাঁদেরকে কুর্নিশ জানাই।
এ রকমই একটি অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হলাম আজ। আমার মা কয়েক বছর যাবৎ সিওপিডি রোগে আক্রান্ত এবং তিনি চিকিৎসাধীন। এ ছাড়াও বয়সজনিত নানা রকম শারীরিক সমস্যার কারণেই তাঁকে প্রতি দিন নানা ধরনের ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তাঁর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ পাচ্ছিলাম না কোথাও। একটি অনলাইন ওষুধ সংস্থার কাছে সেটি পেলেও তারা সেটিকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে রাজি ছিল না। কিছুটা ইতস্তত বোধ করেই ঘটনাটা জানাই ব্যারাকপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে। এবং এ ব্যাপারে তাঁর অভূতপূর্ব সাহায্য নিমেষে সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দেয়। আধ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর টিম সেই ওষুধটি আমার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এহেন ব্যবহারে আমরা আন্তরিক ভাবে তাঁর প্রতি এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞ। আশা করি, ভবিষ্যতেও আপনাদের এ ভাবেই বন্ধু হিসেবে সর্বদা পাশে পাব।
শুভঙ্কর ঘোষ, মনিরামপুর, ব্যারাকপুর
চিঠি পাঁচ) কবে ফিরে পাব যথেচ্ছ গমনের স্বাধীনতা?
ফরিদাবাদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মুখ্য চিকিৎসক হিসেবে সেবানিবৃত্তির পর যখন গাজিয়াবাদের শত শয্যাবিশিষ্ট এক চিকিৎসালয়ে যোগদানের আহ্বান এল, গ্রহণ করতে দ্বিধা ছিল না। ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করলাম। পরিকল্পনা ছিল, মার্চ মাসের অন্তিম সপ্তাহে আসবাবপত্র ইন্দিরাপুরমে স্থানান্তরিত করব। তদনুযায়ী চার দিনের অবকাশের অনুমোদনপ্রাপ্তির পর ২১ মার্চ শনিবার ফরিদাবাদ আগমন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা। পরিবহণ সংস্থাকে ৫ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া সত্ত্বেও বাহন অনুপলব্ধ। এ দিকে চিকিৎসালয় প্রমুখের বার্তা: অবকাশ বাতিল, অবিলম্বে চিকিৎসালয়ে যোগদান বাঞ্ছনীয়। কেন্দ্রীয় শিল্প সুরক্ষাবলের এক উচ্চ পদাধিকারীকে আসাযাওয়ার ইন্ধনমূল্য অগ্রিম প্রদানের অনুরোধ অন্তে এক বাহন এবং চালক পাওয়া গেল। ফরিদাবাদ থেকে গাজিয়াবাদ গমনের জন্য দু’টি আন্তঃরাজ্য সীমানা অতিক্রম করতে হয়। হরিয়ানা থেকে দিল্লি এবং দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ। রাস্তাতে যানবাহনের সংখ্যা অত্যন্ত কম। সীমান্তে লম্বা লাইন। বিশদ পরীক্ষণের পরে যাওয়ার অনুমতি। এক ঘণ্টা লেগে গেল। পরবর্তী সীমান্তও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অতিক্রান্ত হল। গাজিয়াবাদ জেলা প্রবেশকালে আবার শান্তিরক্ষকের বিশেষ পরীক্ষানিরীক্ষার পর ৫ কিলোমিটার দূরবর্তী চিকিৎসালয়ে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া গেল। এর পর চিকিৎসালয়ের অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন একটি কক্ষই আমার আশ্রয়স্থল। আহার্য, চিকিৎসালয় সংলগ্ন ক্যান্টিনে উপলব্ধ। সমস্ত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন চিকিৎসালয় বন্ধ। বাকি সরকারি চিকিৎসালয় করোনা-চিকিৎসার জন্য উৎসর্গীকৃত। ফলে আমাদের জেলা মহিলা চিকিৎসালয়ে রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। চিকিৎসালয়ের অন্যান্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী স্থানীয়। দৈনন্দিন গৃহ এবং পরিবারের সান্নিধ্যলাভে সমর্থ। ব্যতিক্রম আমি। বিগত কুড়ি দিন আমি চিকিৎসালয়ের একটি কক্ষে আবদ্ধ। কার্য সমাপনান্তে সকলে যখন গৃহমুখী, আমি তখন কার্য অন্তে ভাবি, কবে ফিরে পাব আমার যথেচ্ছ গমনের স্বাধীনতা। এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে সহকর্মীদের সহমর্মিতা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অবসর সময় কাটে বই পড়া এবং চলভাষের মাধ্যমে বহির্জগতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে। আমি আশাবাদী যে, এক দিন এই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। তত দিন জানলা দিয়ে প্রকৃতির পর্যবেক্ষণেই কাটুক আমার দিবানিশি।
কৃষ্ণা মাল, গাজিয়াবাদ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)