North Carolina

রাস্তায় আর স্কেটবোর্ড নিয়ে বাচ্চাদের দাপাদাপি নেই, বদলে গিয়েছে চেনা ছবিটাই

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি। এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৩৬
Share:

নর্থ ক্যারোলিনার রাস্তা সুনসান। —নিজস্ব চিত্র।

আজ প্রায় চার বছর আমি আমেরিকাতে আছি। নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছি। আমাদের চারপাশের জায়গাটা আমেরিকার অন্যান্য বড় শহরের মতো জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও মোটের উপর ভদ্রস্থ।

Advertisement

রাতেও রাস্তায় লোকজন, ছাত্রছাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ত। গানবাজনা, পার্টি-আড্ডার জমাটি উল্লাস, কলেজের পরীক্ষা— সব মিলিয়ে বেশ প্রাণবন্ত একটা ব্যাপার। শহরের সেই চেহারাটাই যেন বদলে গিয়েছে এই করোনা অতিমারির সময়ে। সর্বদা ভরে থাকা কলেজটা এখন একদম সুনসান, রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। বাস চলছে। কিন্তু একটি কী দু’টি লোক সেখানে। তাও নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া নয়।

গত এক মাস যাবৎ পুরো শহরটা এক জরাজীর্ণ বৃদ্ধের মতো পড়ে আছে। সকাল বা বিকেলের দিকে একটু জগিং আর সুপারমার্কেটে ঢুঁ মেরে প্রয়োজনীয় জিনিস আনা— এর বাইরে বাড়ি থেকে এক পা-ও কেউ ফেলছেন না। প্রথম দিকে কিছু জিনিস খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাচ্ছিলো, অনলাইন কেনাকাটাও অসম্ভব হয়ে উঠছিল লম্বা ডেলিভারি টাইম, অল্প স্টক ইত্যাদি কারণে।

Advertisement

আরও পড়ুন: সাহায্য পাচ্ছি না, বলল কেন্দ্রীয় দল, বৈঠকে বসলেন মুখ্যসচিব

এখন আবার আস্তে আস্তে জিনিসের জোগান স্বাভাবিক হচ্ছে। লোকজন অযথা প্যানিক করছেন না জিনিস কেনার সময়ে। সবাই হয়তো এটা বুঝতে পেরেছেন যে শুধু নিজে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ঘষলেই চলবে না, অন্যকেও সেই সুযোগটা দিতে হবে সংক্রমণের চেনটা ভাঙার জন্য। আমি যেখানে থাকি, সেখানে কিছু পরিবারও থাকে তাঁদের বাচ্চাদের নিয়ে। অন্যান্য সময়ে বিকেলের দিকে সেই বাচ্চাগুলোকে দেখতাম স্কেট বোর্ড বা সাইকেল চালাচ্ছে। নয়তো ফুটবল খেলছে নিজেদের মধ্যে আজকাল সে সব কিছুই আর চোখে পড়ে না। শৈশবও কেমন যেন দিশাহারা হয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাচ্ছে সময়ের আগেই।দু’সপ্তাহ বাদে যখন সুপারমার্কেট যাই জিনিসপত্র কিনতে, তখন দেখি লোকের চোখে কেমন একটা সন্দেহ ভাব অন্যর প্রতি।

সবাই নিজের মতো করে বাঁচার চেষ্টায় আছেন| আমরা গত এক মাস ধরে শেল্টার ইন প্লেস, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলছি। শুধু এই আশাতে যে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে প্রকৃতির নিয়মেই। জাতি হিসেবে বাঁচার একমাত্র উপায় ভেবে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজে এবং অন্যকেও সুস্থ থাকার আশা জুগিয়ে চলছি। ছোট জায়গা বলেই মানুষের মৌলিক প্রচেষ্টা ছাড়াও সরকারি উদ্যোগগুলো সরাসরি চোখে পড়ছে। অফিস, স্কুল, কলেজ তো অনেক দিনই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলো খোলা আছে সেখানে স্যানিটাইজার, ওয়েট ওয়াইপস-এর ব্যবহার সুষ্ঠুভাবে করা হচ্ছে। ট্যাক্স জমা দেওয়া, বাড়ির আর বাকি ইউটিলিটির রেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রচুর সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যাতে সাধারণ নাগরিকের জীবন কম বিপর্যস্ত হয়।

ইউনিভার্সিটি থেকে কিছু দিন অন্তর ইমেল আসে পুরো রাজ্যের আর দেশের খবর দিয়ে। আমাদের মতো ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য কোনও নতুন গাইডলাইন থাকলে সেটাও। আক্ষরিক অর্থেই একে অপরের দূরে থেকেও একে অন্যকে সাহায্য করে যাচ্ছে।

আমার বাবা মা কলকাতায়। স্ত্রী মুম্বইতে। দিদি জামাইবাবু’রা কেরলে। বাড়ির সবার জন্য চিন্তা তো হয়ই, কিন্তু এটাও জানি যে চিন্তা করে কিছুই করতে পারব না।

এ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা যার রেশ হয়তো আমাদের আরও কিছু বছর ধরে বয়ে বেড়াতে হবে। হয়তো অনেক ধ্যান-ধারণাই পাল্টে যাবে। কিন্তু এটা আমার স্থির বিশ্বাস যে এই আঁধার কাটিয়ে আমরাও একদিন আবার সুস্থ পৃথিবীর শরিক হতে পারব। কিন্তু এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে শুধু নিজের ঘর পরিষ্কার করে রাখলেই আমরা পরিষ্কার থাকতে পারব না। সেই সঙ্গে এর বাসিন্দা হিসেবে বিশ্বটাকেও পরিচ্ছন্ন আমাদেরই রাখতে হবে। অপচয় কমাতে হবে, গাছ লাগাতে হবে, একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

আরও পড়ুন: টানা তিন দিন হাঁটা, খিদে-তেষ্টায় বালিকার মৃত্যু গ্রামে পৌঁছনোর মুখেই

এই অতিমারি থেকে একা বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়, অভিমন্যু’র দশা হবে তখন। সেই জন্যই সরকার যা বলছে, তা যেমন নাগরিকের মেনে চলার সময়, সে রকমই সরকারেরও এখন উচিত শাসকের বেশ পরিত্যাগ করে পরিশ্রমী সৎ মানুষ ও বিদ্বজনের সাহায্য নিয়ে দেশটাকে এই দুঃসময়ের হাত থেকে রক্ষা করে একটা সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা অন্তত এটুকু বলতে পারি যে যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন, মানুষ একজোট হয়ে মনুষ্যত্বের জন্য লড়েছিল এই সময়টায়। সব শেষে শুধু এটুকুই বলার, কেউ আশা হারাবেন না। অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ একদিন হবেই - তমসো মা জ্যোতির্গময়।

পৃথ্বীশ তরফদার, নর্থ ক্যারোলিনা

( অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement