এঁদের মতো বহু মানুষ ঘরে ফেরার প্রতীক্ষায়। প্রতীকী ছবি শাটারস্টকের সৌজন্যে।
আমার বাড়ি কলকাতায়। কিন্তু কর্মসূত্রে বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের শেওপুর বলে একটি ছোট্ট শহরে রয়েছি। আমার সঙ্গে আমার আরও দুই সহকর্মী রয়েছেন। আমরা আমাদের কোম্পানির রেন্টেড হাউসে থাকছি। দুই সহকর্মীর মধ্যে এক জন উত্তরপ্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা ও অন্য জন ওড়িশার কোনারকের বাসিন্দা। আমরা তিন জনেই পরিবার, পরিজন ছাড়া একা-একা রয়েছি এখানে।
শেওপুরে এখনও ১৪৪ ধারা অব্যাহত। ছোট্ট শহর হলেও সরকার ও প্রশাসন থেকে বেশ কড়া ভাবেই নিয়ন্ত্রিত আছে মানুষজনের গতিবিধি। আসলে কিছু দিন আগে এই শহরের এক বাসিন্দার করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন থেকে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে গোয়ালিয়রে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখনও পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে ২৬৫ জনকে করোনা পজিটিভ হিসাবে সনাক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে গোয়ালিয়রের চম্বল প্রদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৬, যা কি না উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। এ ছাড়াও এই ভাইরাস দ্বারা মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪-য় দাঁড়িয়েছে এখনও পর্যন্ত।
ভারতবর্ষে লকডাউন চালু হয় ২৫ মার্চে। শেওপুর প্রশাসন ২৩ মার্চ থেকেই লকডাউন চালু করে। আমরা সেই সময় থেকেই গৃহবন্দি। সেই দিন থেকেই অফিস যাওয়া বন্ধ আমাদের। সামান্য কিছু কাজকর্ম, যা ঘরে বসেই সারতে হচ্ছে আপাতত। আমাদের কোম্পানির হেড অফিস কলকাতায়। তোপসিয়া রোডে। প্রজেক্ট কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম প্রায় নেই বললেই চলে। ফিল্ডে থেকেই কাজ করতে হয়। তবুও যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করছি।
আমার পরিবার এখন উত্তর কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলে রয়েছে। আমার কন্যাসন্তান, বর্তমানে যার বয়স ৮ মাস, সে তার মায়ের সঙ্গেই রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছেন বাবা, মা এবং এক ভাই। স্বভাবতই তাঁরা আমার জন্য খুবই উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমিও খুবই চিন্তিত তাঁদের জন্য। কিন্তু এই রকম অবস্থায় কিছু তো করার নেই। লকডাউন কত দিন চলতে পারে, তারও কোনও ধারণা করা যাচ্ছে না আপাতত।
যেন পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি! সুনসান শেওপুরের বিভিন্ন এলাকা। মধ্যপ্রদেশ থেকে লেখকের পাঠানো ছবি।
আরও একটা চিন্তার বিষয় হচ্ছে খাবার। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এখানকার বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় শাকসব্জি ও নিত্যনৈমিত্তিক খাবার যেমন বিস্কুট, পাউরুটি, চিরে, ম্যাগি, নুডলস এই সব সামগ্রীর জোগান খুব কম। নেই বললেই চলে। তাই একটা খাদ্যসঙ্কটের অভাব দেখাই যাচ্ছে এই অঞ্চলে। বাজারে ডিম, মাছ বা মুরগির মাংস আমি দু’দিন গিয়েও দেখতে পাইনি। এক দিন অন্তর বাজার খোলা থাকে এখানে। তা-ও দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
সামাজিক দুরত্বও বজায় রেখে চলেছেন মানুষজন। কিন্তু খাবারের কী হবে আমরা জানি না। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী চলে যাচ্ছে হয়তো, কিন্তু কত দিন চলবে, তা নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে। প্রয়োজনে ডাল-ভাত বা খিচুরি খেয়ে থাকতে আমরা রাজি আছি। কিন্তু খাবারের জোগান থাকা খুবই জরুরি ভবিষ্যতের জন্য।
পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে অনুরোধ, দয়া করে খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বেরবেন না। অনেকেই নিজের পরিবারের সঙ্গে আছেন, এই সময়ে তাদের সঙ্গ উপভোগ করুন। আমি এবং আমরা চাইলেও তা পাচ্ছি না। জানি না ভবিষ্যতে কবে সেই সুযোগ পাব? আপনারা সাবধানে থাকুন। ঘরে থাকুন ও সুস্থ থাকুন।
প্রেমাংশু দেবনাথ, শেওপুর, মধ্যপ্রদেশ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)