Editorial

লকডাউনে কেউ চাকরি খুইয়েছেন, কারও হস্টেলভাড়ার টাকা নেই

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ১৬:২৭
Share:

কাজ খুইয়ে ওঁরা আজ পথে, কী ভাবে ফিরবেন ঘরে? -ফাইল ছবি।

চিঠি-১: লকডাউনে চাকরি খুইয়ে জাজপুরে আটকে রয়েছি, হাওড়ায় ফেরান

Advertisement

ওড়িশার জাজপুর রেলস্টেশন থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে বামনিপালে একটি বেসরকারি সংস্থায় আমি কাজ করতাম। লকডাউনের জন্য আমার চাকরি গিয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে আমি বামনিপালে আটকে রয়েছি। রয়েছি চরম আর্থিক সঙ্কটে। আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়‌েরা আছেন হাওড়ার ঘোষপাড়ায় (পিন- ৭১১১০৪)। এমন কেউ নেই যিনি ওখানে ওঁদের সাহায্য করতে পারেন। আমি গ্লুকোমা রোগী। আমাকে নিয়মিত ভাবে ডাক্তার দেখাতে হয়।

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যদি আমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাওড়ায় ফেরানোর ব্যবস্থা করেন, তা হলে খুব কৃতজ্ঞ থাকব।

Advertisement

অসিত বরণ রায়, মোবাইল- ৮৫৮২৯৭৭৩০৩

চিঠি-২: ভেলোরে গিয়ে টাকা শেষ দিদি, জামাইবাবুর, তমলুকে ফেরান

আমার দিদি, জামাইবাবু (সন্তোষ শি, মোবাইল- ৯৬৩৫৫৪০৪০৬) ও মামা গত মাসে তমলুক থেকে ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন। ২ বার ট্রেনের টিকিট রিজার্ভ করেও লকডাউন বৃদ্ধির জন্য বাড়ি ফিরতে পারেননি। এ দিকে টাকাও শেষ। হোটেল-ভাড়াও দিতে পারছেন না। খাওয়া কোনও রকম ভাবে ওখানকার কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে হচ্ছে। ওঁদের কাছে এটিএম কার্ডও নেই।

দিদির দুই ছেলে আর অসুস্থ শাশুড়ি বাড়িতে প্রতিবেশীর ভরসাতেই রয়েছেন। এ রকম অনেক পরিবারই ওখানে ফিরতে না পেরে রয়ে গিয়েছেন। ওখানকার প্রশাসনের তরফ থেকেও তেমন কোনও উদ্যোগ নেই।

এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার দয়া করে কোনও ব্যবস্থা করে ওঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করলে দুঃস্বপ্ন থেকে স্বস্তি মিলবে।

দেবাশিস মানিক, ইমেল- manikdebashis@gmail.com

চিঠি-৩: পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ট্রেন চালানো হোক

আমার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বনগ্রামে। দেশের এখন চরম পরিস্থিতি, তার থেকেও চরমতম পরিস্থিতিতে আমি। কর্মসূত্রে আমি তেলেঙ্গনার কামারেড্ডি জেলায় থাকি। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ার কারণে গত ২৩ মার্চ আমি হায়দরাবাদ থেকে ফিরি। ফেরাটা যে কোনও ছোটখাটো যুদ্ধকেও হার মানায়। দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসা করে আসা ডাক্তার আমার স্ত্রীকে চিকিৎসা করতে প্রথমেই অস্বীকার করেন। অগত্যা অন্য এক সহৃদয় ডাক্তারবাবুর তত্ত্বাবধানে আমার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। চার দিকের শত শত খারাপ খবরের মধ্যে এ যেন এক সঞ্জীবনী! মা ও ছেলে দু’জনেই সুস্থ।

আজ সকালের কাগজে হাওড়াতে এক গর্ভবতী মায়ের অসহায়তার কথা জানতে পেরে খুব কষ্ট পেলাম, হাওড়ার বাসিন্দা হওয়ার কারণে। তাঁকে কোনও হসপিটাল ভর্তি করেনি, অবশেষে বাড়িতেই প্রসব করেন, কিন্তু সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। এটা বড়ই লজ্জাজনক। মৃত্যুভয়ে মৃত্যুর আগেই যদি অমানুষ হয়ে যাই, তবে ভাইরাসের হানা রুখবো কী ভাবে?

প্রশাসনকে অনুরোধ করব, আরও সহৃদয় হতে। আর একটি অনুরোধ, যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক বা ভিন রাজ্যে কর্মরত, তাঁদের কথা মাথায় রেখে অন্তত কিছু ট্রেন চালানো হোক। তাতে সোশাল ডিসটেন্স বজায় রাখতে যথাযথ ভাবে পরিকল্পনা করা হোক। চাইলে যাত্রীদের র‌্যাপিড টেস্ট করানো যেতে পারে। সরকারি ব্যর্থতা ঢাকতে লকডাউনকে আজীবন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে না, সেটা প্রশাসনকে বুঝতে হবে।

সুদীপ মজুমদার, বনগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা।

চিঠি-৪: কাজ খুইয়ে পুণেতে আটকে আছি, বাঁকুড়ায় ফেরান

খাবারদাবার আর থাকার জায়গা পেতে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। আমরা সকলেই কাজ করি মহারাষ্ট্রের পুণেতে। আমরা চাকরি খুইয়েছি। আমাদের বাড়ি বাঁকুড়ায়। যে ভাবেই হোক আমাদের বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক। তা হলে খুব কৃতজ্ঞ থাকব।

আমাদের সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের নামধাম পাঠালাম।

পুণেতে বাঁকুড়ার যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁদের নামধাম। ছবি-লেখক।

পদ্মলোচন পাল, রামনগর, ইয়েরওয়াড়া, পুণে-৬, মহারাষ্ট্র, ইমেল-padmalochanpal93@gmail.com

চিঠি-৫: রেশন পাচ্ছি না, পুরসভার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কেউই কিছু করলেন না!

আমি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার নবদ্বীপ পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আমাদের রেশন কার্ডের ফর্ম পৌরসভায় জমা দেওয়ার পরেও রেশন কার্ড আসেনি। তাই আমি যখন রেশন আনতে যাই, ডিলার বলে পৌরসভায় যোগাযোগ করতে। আমি সেখানেও যাই এবং জমা দেওয়ার রিসিভড কপি দেখাই। ওঁরা বলেন, কাউন্সিলরের কাছে যেতে। যাঁর নাম চৈতালি গুই। আমি সেখানেও যাই এবং কাউন্সিলর জানান যে, তিনি অফিস থেকে জানবেন। কিন্তু তার পরের দিন রবিবার হওয়ায়, তিনি আমাকে বলেন যে আমাকে সোমবার ফোন করে নেওয়া হবে। তার পর আমার থেকে ফোন নম্বর আর জমা দেওয়ার রিসিভড কপির নম্বর লিখে নেন তিনি। তার পর সোমবার উনি কোনও ফোন করেননি। আমি বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার যাই ওঁর বাড়ি। উনি আমাকে জানান, আমাদের নাকি কোনও ফর্ম অফিস থেকে জমা পরেনি। তখন আমি ওঁকে বলি এটা তো আমাদের দিক থেকে কোনও ভুল নয়। আমি তো ২/৩ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিয়েছি এবং তার রিসিভড কপিও রয়েছে।

যেখানে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, যাঁদের রেশন কার্ড নেই তাঁরাও রেশন পাবেন, তখন উনি বলেন, আমি দেখছি কি করা যায়। আর আমাকে একটা টোকেন দেওয়া হয়। বলা হয়, পৌরসভায় গিয়ে টোকেন দেখালে চাল দেবে। আমি ওঁকে বলি আমার এটার দরকার নেই। আমার যেটা দরকার সেই রেশনের ব্যবস্থা করে দিন। উনি ভরসা দেন যে উনি দেখছেন। তার পর কিছু দিন হওয়ার পর, আজ আমি আমার বাবাকে পাঠাই ওঁর কাছে এবং উনি বলেন চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে যেতে। আমার বাবা সেখানেও যান। চেয়ারম্যান সব দেখে বলেন, এখন করা যাবে না। আমার বাবা তখন ওঁকে বলেন, আমাদের দিক থেকে তো কোনও দোষ নেই, তা হলে আমার রেশন কেন পাব না? উনি সাফ জানিয়ে দেন, কোনও কিছুই করা যাবে না।

তা হলে আপনারাই বলুন, এই অসময়ে যদি আমাদের জনপ্রতিনিধিকে পাশে না পাই তা হলে আমরা কাদের ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি করে ছিলাম? শুধু আমি নয় এ রকম অসুবিধায় রয়েছে আমাদের মতো প্রচুর নিম্নমধ্যবিত্ত লোক, যাঁরা নবদ্বীপে থাকেন। ওঁরা ভোট হয়ে গেলে সকলকে ভুলে যান! এই সঙ্কটময় মুহূর্তে আপনাদের একান্ত সহযোগিতা কামনা করছি।

রাম চন্দ্র ঘোষ, নবদ্বীপ, নদিয়া

চিঠি-৬: সাহিবাবাদে ২৪ তারিখ পর্যন্ত হস্টেল ভাড়া দেওয়া আছে, তার পর কী হবে জানি না

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের সাহিবাবাদে ট্রেনিং করতে এসেছিলাম এক মাসের জন্য। গত ২১ মার্চে ট্রেনিং শেষে এখানেই আটকে পড়েছি। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, মা একা থাকেন। প্রথমে যেখানে ছিলাম সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না, ট্রেনিং সেন্টারেই খেতে যেতাম। এই লকডাউনের জন্য সেই কোম্পানিও বন্ধ আছে। তাই একটি হস্টেলে চলে আসি। এখন থাকা, খাওয়ায় অসুবিধা না হলেও হস্টেল ভাড়া অনেকটাই বেশি। যা এর পরে আমার দেওয়া সম্ভব হবে না। আমার টাকাপয়সাও শেষ। এই মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত হস্টেল ভাড়া দেওয়া আছে। তার পর কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার বাড়ি ফেরাটা খুব দরকার।

শেখ সামিম, মোবাইল- ৯৭৪৮৩৮২৮৮৫

চিঠি-৭: স্বামী একলা আছেন, আমিও খুব অসুস্থ, যে ভাবেই হোক আমাকে দিল্লিতে ফেরান

বেঙ্গালুরুতে বাবার অস্ত্রোপচারের পর গত ১৫ মার্চ আমি পিত্রালয়ে আসি। দিল্লিতে ফেরার জন্য আমার বিমানের টিকিট কাটা ছিল গত ২৪ মার্চের। কিন্তু লকডাউন চালু হওয়ায় সেই টিকিট বাতিল করতে হয়। দিল্লিতে স্বামী একলা আছেন। উনি অসুস্থ। আমিও মানসিক অবসাদের রোগী। আমি দিল্লিতে না ফিরতে পারলে দু’জনেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ব। আমার চিকিৎসার কাগজপত্রও আমার সঙ্গে নেই। যেখানে আছি, সেখানে মানসিক রোগের চিকিৎসার ভাল ব্যবস্থাও নেই। আমাকে যে ভাবেই হোক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিল্লিতে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।

সুরানিতা কাঞ্জিলাল, ইমেল- suranita.math@gmail.com

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement