Letter To The Editor

এই সঙ্কটেও ঢিলেঢালা, এভার কুল এই আমেরিকাকেই ভয় পাচ্ছি

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা মনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।সিলিকন ভ্যালিতে অভিবাসীদের আসা-যাওয়া লেগেই আছে। সেখানে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৮:১০
Share:

ভ্রাম্যমান হাসপাতাল।

আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির কাছে ছোট্ট শহর লিভারমোর। এখানে থাকি আমি। জায়গাটি মূলত একটি গভর্নমেন্ট নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই ল্যাবরেটরিতেই আমার স্বামী কাজ করেন। এখান থেকে আধ ঘণ্টা গাড়িতে করে গেলেই পৌঁছনো যাবে ‘হার্ট অফ আমেরিকা’-য়। অর্থাৎ সিলিকন ভ্যালিতে।

Advertisement

বর্তমানে গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সব দেশই নিজের মত করে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয়েছে এ ব্যাপারে এই প্রথম-বিশ্বের দেশ কিন্তু বেশ ঢিলে ঢালা। হতে পারে সেটা পর্যাপ্ত টেস্ট কিট নেই বা ইকনমিকে বাঁচাতে চায় বা অভিবাসীদের দেশ, তাঁদের ঢোকা এবং বেরনো বন্ধ করা এ দেশের সম্ভব নয়। কারণ যাই হোক, আমার বর্তমান দেশ এখন আক্রান্তের সংখ্যায় সারা পৃথিবীর সব দেশকেই টক্কর দিয়ে প্রথম স্থান দখল করেছে। হয়তো মৃতের সংখ্যায় খুব তাড়াতাড়ি ইটালিকেও ছাড়িয়ে যাবে। তাই বেশ আতঙ্কেই রয়েছি।

সরকার বলেছিল, লকডাউন এর সময় জিম বন্ধ থাকবে। এখানের লোক তো আবার বিশাল শরীর সচেতন! তাই কাছাকাছি হাঁটতে বা হাইকিং করতে যেতে পারে। ও বাবা! এই তো সুযোগ। অফিস-কাছারি নেই। তাই ভোর থেকে উঠে লোকজন হাইকিং, বাইকিং করতে দল বেঁধে চলে যাচ্ছে। বিচ ম্যাট নিয়ে সমুদ্রভ্রমণে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মতো পুলিশকেও এখানে লাঠি নিয়ে বেরোতে হবে, না হলে আটকানো যাবে না যা দেখছি অবস্থা। আমরা বাঙালিরা শুধু ঘরে বসে জানলা দিয়ে লোকজনের স্ফূর্তি দেখছি।

Advertisement

রাস্তাঘাট সুনসান।

অবশেষে কোনও ভাবেই আটকানো যাচ্ছে না দেখে ৪ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। পুলিশ স্ক্যানার নিয়ে ঘুরছে। দূর এলাকার কোনও গাড়ি দেখলেই বড় রকমের জরিমানা করছে। আশা করছি, এর ফলে হয়তো লোকজন একটু ভয় পেয়ে ঘর থেকে কম বেরোবে। আমার এখানে করোনা পজিটিভের সংখ্যা কম হলেও সফটওয়্যারের হাব ২০ মাইল দূরেই। সিলিকন ভ্যালিতে অভিবাসীদের আসা-যাওয়া লেগেই আছে। সেখানে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

দুঃখের বিষয়, তৃতীয় বিশ্বের দেশ আমার ভারত তার পরিসীমা বন্ধ করলেও এই দেশ এখনও আন্তর্জাতিক এবং ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্স সব খুলে রেখেছে। ওয়াল স্ট্রিট শেয়ার মার্কেট খুলে রেখেছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে দেওয়া চলবে না। প্রচুর মানুষ বিশেষ করে যাঁদের ঘরে বসে ল্যাপটপ নিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম হবে না তাঁরা কাজ হারাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও হারাবে। তেমনই আবার অনলাইন ডেলিভারি সংখ্যা বাড়ায় ওই সব জায়গায় প্রচুর লোক কাজ পাচ্ছে। এ দেশের প্রেসিডেন্ট সব অধিবাসীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। চিকিৎসা খাতে সবাই যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসাটুকু পায় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সামরিক জাহাজ এবং ফাঁকা জায়গা গুলোকে রাতারাতি ভ্রাম্যমান হাসপাতালে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সর্বোপরি, ঘরে থাকার জন্য লোকজনকে আরও সচেতন করা হচ্ছে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আমরা তথা গোটা বিশ্ব এই রোগ থেকে মুক্তি পাব। করোনামুক্ত পৃথিবীর নতুন সূর্যোদয় হবে।

সোমাশ্রী দত্ত, বে এরিয়া ক্যালিফোর্নিয়া

ছবি পাঠিয়েছেন লেখক।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement