লকডাউনে সুনসান নিস। ছবি: লেখক।
ভূমধ্যসাগরের তীরে পাহাড় ঘেরা নিস্ শহরে গড়ে উঠেছে ইউরোপের 'টেকনোপল্', 'সোফিয়া অ্যন্টিপোলিস্'। স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বা ভারতের বেঙ্গালুরুর মতো এখানে ভিড় জমেছে মেধাবী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের। এ ছাড়াও নয়নাভিরাম নীল আকাশ ও সমুদ্র সৈকতের কারণে সারা বছর পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে এই শহরে। করোনার প্রকোপে শহর ও সৈকত আজ জনশূন্য। আজ প্রায় ৪ বছর আমি এই শহরের বাসিন্দা এবং আমার স্বামী প্রায় ১০ বছর এখানে আছে। দু’জনের পড়াশোনা এবং কর্মজীবন এখানেই। ফ্রান্স সরকার থেকে কঠিন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরনো নিষেধ এবং সঙ্গে একটি নথিপত্র থাকা বাধ্যতামূলক, যেখানে নিজের নাম, ঠিকানা, বাইরে বেরনোর কারণ, তারিখ ও সময়ের উল্লেখ রাখতে হবে। দিনে একবারের বেশি বাইরে বেরনো যাবে না ও সময়ের হিসাব রাখতে হবে। নিষেধ অমান্য করলে জরিমানা, এমনকি জেল পর্যন্ত হতে পারে।
সদ্য ইস্টারের ছুটি ছিল, রসনাপ্রিয় ফরাসিরা এই ছুটিতে খুবই আমোদ আহ্লাদ করে। কিন্তু আজ সকলে ঘরবন্দি। ফরাসি সরকার লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে ১১ মে পর্যন্ত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সময়সীমা বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে ফ্রান্সে প্রায় ষোলো হাজার মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজারের অধিক। গত এক মাস লকডাউনের পরও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ইটালির মিলান শহর, যেখানে মূল করোনা প্রাদুর্ভাব হয়, নিস্ থেকে মাত্র ৩ ঘন্টা দূরত্বে অবস্থিত। স্বভাবতই সকলেই চিন্তিত। ঘর থেকেই চলছে কাজ, বাজার দোকান ও বহুক্ষেত্রে অ্যাপ-এর মাধ্যমেই সারছি। আশার কথা এই যে, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী আগামিদিনে আরও টেস্ট বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন।
বহু মানুষ যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, সরকার থেকে তাঁদের জন্য সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে বেকার ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমার ভাই বর্তমানে ইটালিতে কর্মরত। আর বাবা মা কলকাতায়। বাবা ডায়াবিটিসের রোগী। আর মায়ের গলব্লাডার অপারেশন আপাতত কলকাতার লকডাউনের কারণে পিছিয়ে গেছে। ভাবতে অবাক লাগে, দিকে দিকে বিচ্ছিন্ন সামাজিক অস্থিরতা, শক্তিশালী দেশগুলির অর্থনৈতিক কাঠামোর নুয়ে পড়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রকৃতির কাছে মানুষ আজও কত অসহায়। তবুও ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবকুল আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। ভারত তথা সকল দেশের বিজ্ঞানীরাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলছেন এই মহামারি থেকে আমাদের উদ্ধারের জন্য। নাগরিক হিসাবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব বর্তায়। শত্রু যখন অদৃশ্য এবং তার বিরুদ্ধে সঠিক অস্ত্র জানা নেই, তখন ধৈর্য্য রাখতে হবে। আশা রাখি খুব দ্রুত আমরা এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাব।
দেবলীনা পাল,আইটি কর্মী
নিস্, ফ্রান্স
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)