কক্সবাজারে সমুদ্রের জলে ডলফিনের দেখা।
তিন দশক পর বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলছে ডলফিনের। গত কয়েকদিন ধরে সৈকতের কলাতলির সায়মন বিচে ২০ থেকে ২৫টির মতো ডলফিনের একটি ঝাঁক নীল জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। কক্সবাজার সৈকতে ডলফিনের এমন বিচরণ গত তিন দশকে দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
করোনার প্রভাবে হোটেল, মোটেল বন্ধ থাকায় অলস ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার কর্মচারীরা। তাঁরা অনেকে গত কয়েক দিন ধরে ভোরবেলা কলাতলি বিচে ডলফিনের একটি ঝাঁক দেখতে পাচ্ছেন বলে বলে জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক কালে জনশূন্য সৈকতে ডলফিনের প্রথম দেখা মেলে গত ২৩ মার্চ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলি ও সুগন্ধা পয়েন্টের কাছে ডলফিনের দুটি দলকে খেলা করতে দেখেন উপস্থিত কয়েকজন। সে সময় ডলফিনের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন সায়মন বিচ রিসর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব রহমান। তিনি বলেন, ‘‘কলাতলি পয়েন্টের কাছে ডলফিন দেখা গেছে বলে খবর পেয়ে, আমি নিজের কায়াক নিয়ে সাগরে যাই। ডলফিনের দলটিকে অনুসরণ করে কাছে গিয়ে দেখি, দুটি দলে সেখানে মোট ২০ থেকে ২৫টি ডলফিন রয়েছে।
মাহবুব রহমান আরও বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণ ধরে ডলফিনগুলিকে অনুসরণ করার পর দেখি, ওরা আমার কাছাকাছিই ঘুরছে। ওই দলে একটি গোলাপি ডলফিনকে দেখেছি। সেটি ছিল আকারে সবচেয়ে বড়। মাথাটা পুরো গোলাপি, আর শরীরের বেশিরভাগ অংশ সাদা ও ধুসর।
কক্সবাজারের সৈকত এখন পর্যটকশূন্য়।
মাহবুব রহমানের তোলা তিন মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিয়োটির বেশির ভাগ অংশ জুড়েই একটি বড় আকারের গোলাপি ডলফিনকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। গোলাপি ডলফিনটি ছিল আকারে অন্যগুলোর তুলনায় বড়।
কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট সার্ফার ক্লাবের সভাপতি জয়নাল আবেদিন ভুট্টো বলেন, ‘‘ডলফিনের দুটো দল দেখেছি। একটা দলে একটু ছোট আকারের কালো রঙের ডলফিনগুলো ছিল। সেগুলো বাতাসে ডিগবাজি দিচ্ছিল।’’
কক্সবাজারের নির্জন সৈকত।
পরিবেশবিদরা বলছেন, ‘‘অপরিকল্পিত পর্যটনের কারণে গত তিন দশকে সাগর সৈকতে মানুষের সমাগম বেড়েছে। এতে নীরবতা হারিয়েছে সাগর। বেড়েছে দূষণ। পরিবেশবিদদের মতে, এ কারণে সাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ডলফিনের জন্য সহায়ক ছিল না। তবে এখন সৈকত খালি থাকায় দূষণ কমে গেছে। অনুকূল পরিবেশ পেয়ে আবারও ফিরে আসছে ডলফিনরা।’’
জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘‘ওই ভিডিয়োটি দেখেছি। সেখানে যে গোলাপি রঙের ডলফিনটি দেখা গিয়েছে সেটি পূর্ণ বয়স্ক। ওই দলে থাকা অন্যগুলোও একই প্রজাতির। তারাও গোলাপি ডলফিন। সে গুলি আরও বড় হলেই তাদের গায়ের রঙ গোলাপি হয়ে উঠবে। এরা সচরাচর উপকূলের কাছাকাছি থাকে। বাংলাদেশে যে কয়েক ধরনের ডলফিন আছে তার মধ্যে অবশ্য এ গুলি কম দেখা যায়।’’
জসিমউদ্দিন, কক্সবাজার, বাংলাদেশ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)