সে সময়কার সমস্ত পত্রিকার সঙ্গেই কালীপ্রসন্ন সিংহ অনুভব করতেন এক আত্মিক সম্পর্ক।
‘মহা-নাগরিক হুতোম’ (পত্রিকা, ৩-৮) শীর্ষক নিবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। সে সময়কার সমস্ত পত্রিকার সঙ্গেই কালীপ্রসন্ন সিংহ অনুভব করতেন এক আত্মিক সম্পর্ক। অর্থাভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘দূরবীণ’ নামে একটি উর্দু পত্রিকার স্বত্ব কিনে নিয়ে কালীপ্রসন্ন তাঁর এক মুসলমান বন্ধুকে সাহায্য করেন। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে যাবতীয় স্বত্ব কিনে নিয়েও শুধু জাতীয় স্বার্থের কারণে ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ পত্রিকার স্বত্ব তিনি আবার ফিরিয়েও দেন। যাতে এটির নির্বাধ প্রকাশ অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই উদ্দেশ্যে তখনকার লব্ধপ্রতিষ্ঠ পাঁচ জন ব্যক্তিকে ‘ট্রাস্টি’ নিযুক্ত করে তাঁদের উপর দায়িত্বভারও ন্যস্ত করেন। এতে স্বদেশপ্রীতির সঙ্গে হরিশচন্দ্রের প্রতিও তাঁর গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।
অন্য ভাবে, দু’বার বিচারকের পদে আসীন হলেও, কালীপ্রসন্ন যে অস্থায়ী ভাবে ‘পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট’ পদও অলঙ্কৃত করেন, আলোচ্য নিবন্ধে কিন্তু সে-কথার উল্লেখ নেই। অথচ একটি বিশেষ কারণে ঘটনাটি মনে রাখা জরুরি। কেননা সে সময়ে আইন সংক্রান্ত নানা ভাবনাচিন্তা তাঁর মাথায় ভিড় করত। যার সার্থক ফল ‘দ্য ক্যালকাটা পুলিশ অ্যাক্ট’ নামে তাঁর ১০৮ পাতার একটি বই।
‘স্বাজাত্যবোধ’ তীব্র হলেও ‘বিজাতিবিদ্বেষ’-এ তাঁর মন কিন্তু কখনও দীর্ণ হয়নি। তাই লর্ড ক্যানিং ও স্যর পিটার গ্র্যান্ট যখন নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন, তাঁদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থেকে ভাষণ দিয়েছেন। লর্ড ক্যানিংয়ের মর্মরমূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্যও তিনি এক কথায় হাজার টাকাও বার করে দেন। দুর্ভিক্ষে দেশবাসী যাতে নিজেরাই বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারে, সে জন্য ‘মনুষ্যের প্রকৃত মহত্ত্ব কোথায়?’ শীর্ষক স্বরচিত একটি প্রস্তাব নিজের খরচায় ছাপিয়ে তাদের মধ্যে বিলিও করেন।
বাণীবরণ সেনগুপ্ত
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
তাপস কুমার চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৪