শিশির রায়ের ‘বাংলা পথ হারাইয়াছে?’ (৯-৬) শীর্ষক নিবন্ধের সূত্র ধরে বলি, এই বাংলায় বাংলা ভাষাটির অবস্থা যে খুব স্বাস্থ্যকর নয়, একটু চোখকান খোলা রাখলেই বুঝতে অসুবিধা হয় না। এর বহু কারণ আছে, কিন্তু অন্যতম কারণ যে অধিবাসীদের মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা বা গর্বের অভাব, সন্দেহ নেই। এ রকম জায়গা বোধ হয় বিশ্বে কমই আছে, যেখানে সন্তানের মাতৃভাষা ভাল ‘না এলে’ তাদের অভিভাবকেরা দুঃখিত না হয়ে গর্বিত হন! ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতিতে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবে মূল প্রতিবাদটা দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকেই এল, আমরা সমাজমাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা ছড়িয়েই দায় সারলাম।
মুশকিল এই, সমস্যাটা স্পষ্ট হলেও, সমাধান নয়। সরকারি উদ্যোগের ভরসা করা বৃথা, সরকার নানাবিধ গুরুতর কাজে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু চুপ করে বসে থাকা তো চলে না, বিরাট যাত্রার শুরুটা একটা পদক্ষেপ করেই হয়। আমার ধারণা, এ রাজ্যের প্রধান বাংলা সংবাদপত্রগুলি সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। আর ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে তা খুব নিঃস্বার্থ কিছু নয়, নগর পুড়লে যেমন দেবালয় বাঁচে না, তেমনি বাংলা সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে তখনই, যখন ভাষাটা সুরক্ষিত থাকবে।
বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে প্রথম হতে পারে, বিদঘুটে অনুবাদে বা অশুদ্ধ বানানে বিজ্ঞাপন ছাপতে একযোগে প্রত্যাখ্যান করা। বিজ্ঞাপনের বাণিজ্যিক আবেদনটা সংবাদপত্রের ব্যবসায় অনস্বীকার্য, কিন্তু একতাবদ্ধ হয়ে একটা মানদণ্ড তৈরি করলে বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থাগুলি তাদের বিজ্ঞাপনের মান উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট হবেই, কারণ উপভোক্তার কাছে পৌঁছনোর দায় তার থাকবেই। এক দিন আনন্দবাজার শিখিয়েছিল, ‘কী লিখবেন কেন লিখবেন’, উপকৃত হয়েছিলাম। বাংলা কত দিন লিখব, সে বিষয়ে এই পত্রিকা আবার উদ্যোগী হতে পারে না?
তরুণ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৪২
ভাষা ও কুড়ুল
যথার্থ বলেছেন যশোধরা রায়চৌধুরী (‘নিজের ভাষায় নিজেরই কুড়ুল’, ৬-৬)। এই বাংলারই স্কুলে, অফিস-কাছারিতে, বাসে-অটোয় আমাদের চেষ্টা, যেন কোনও ক্রমেই বাঙালি পরিচয় প্রকট না হয়ে পড়ে। ভুল হিন্দি বললে হাসির খোরাক। কিন্তু শতকরা ষাট ভাগ হিন্দি আর ইংরেজি শব্দ গোঁজা অশুদ্ধ বাংলা আর পাঁচ জনের মধ্যে সমীহ আদায় করে। আভিজাত্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি উন্নাসিক হতেই হবে। এই উদ্যোগে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে চলেছে টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিয়ো। ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিশু অনেক সময় অভিভাবকদের চেষ্টায় ভেঙে ভেঙে বাংলা পড়তে পারে। পর্দার নীচের দিকে চলমান এক পঙ্ক্তির খবর থেকেই ভুল বাংলা বানানে সে তার মাতৃভাষার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে। বিজ্ঞাপন সবিশেষ প্রভাব ফেলে শিশুমনে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক মুনাফার প্রতি বিজ্ঞাপনদাতাদের দায়বদ্ধতা। শিশু অহোরাত্র শুনছে জগাখিচুড়ি ভাষা এবং উচ্চারণ সংবলিত বিজ্ঞাপন। কোমল মনে সেগুলি অবিরত মুদ্রিত হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে একশো বছর পরে যদি বাংলা ভাষা আলাদা করে তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে, তা হলে বানান এবং উচ্চারণে এই সব উদ্ভট শব্দবন্ধই বাংলা ভাষার ভবিতব্য।
কাছাখোলা ভালবাসায় বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। স্থিত-ভিতের কথা ভুলে অন্যদের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তার প্রাণ আঁকুপাকু। ভারতবাসী হিসেবে আমাদের ভরসা দক্ষিণের প্রতিবাদী কণ্ঠ। মাতৃভাষা রক্ষার বকলমা নয় তাদেরই দেওয়া থাকুক। আর, পরিধেয় বস্ত্রের খুঁট ধরে থাকবে ও-পার বাংলার বাঙালি। চিন্তা কী?
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
ই-যানবাহন
‘বৈদ্যুতিক গাড়ির নীতি নিয়ে প্রশ্ন সিয়ামের’ (১০-৬) প্রতিবেদনে পড়লাম, ‘‘বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির যে প্রস্তাব নীতি আয়োগ এবং কেন্দ্রের আন্তঃমন্ত্রিগোষ্ঠী দিয়েছে, তার বাস্তবতা নিয়ে এ বার সরাসরি প্রশ্ন তুলল গাড়ি নির্মাতাদের সংগঠন সিয়াম।’’ চলতি বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রকাশিত ‘স্টেট অব ইন্ডিয়াজ় এনভায়রনমেন্ট ইন ফিগারস ২০১৯’ অন্য তথ্য জানাচ্ছে। ভারতই হল প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি যারা অ-বৈদ্যুতিক যানবাহন পর্যায়ক্রমে বদলে বৈদ্যুতিক যানবাহন (ই-যানবাহন) বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছিল।
২০১৩-য় কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রক হাইব্রিড এবং ই-যানবাহন বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রিক মবিলিটি মিশন ২০২০’ (এনইএমএম) গঠন করে। লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে ২০১৩-তে ‘ফাস্টার অ্যাডপশন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অব (হাইব্রিড অ্যান্ড) ইলেকট্রিক ভেহিকলস’ বা ‘ফেম ইন্ডিয়া’ প্রকল্প হাতে নেয়। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল, ২০২০ সালের মধ্যে ২ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস। দেখা যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার ৬ শতাংশেরও কম অর্জন করেছে। মাত্র ০.১১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস পেয়েছে। একই ভাবে, পরিকল্পনাটির উদ্দেশ্য ছিল ৯৫০০ মিলিয়ন লিটার জ্বালানি সংরক্ষণ, এ ক্ষেত্রে ৪৫.৯ মিলিয়ন লিটার সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে। মে ২০১৯-এ দেশে প্রায় ০.২৮ মিলিয়ন ই-যানবাহন রয়েছে, যা ২০২০ সালের মধ্যে ১৫-১৬ মিলিয়ন লক্ষ্যমাত্রার অনেক নীচে। মাত্র এক বছর যাবৎ ভারত তার ই-যানবাহন টার্গেটের ২ শতাংশেরও কম পূরণ করেছে। ই-যানবাহনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যানবাহন তৈরির জন্য পরিকাঠামো তৈরি করে ২০১৫’তে প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছিল, এবং ৩১ মার্চ ২০১৯-এ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল ৮৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু ফেম লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পর, প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১২-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ১০,০০০ কোটি টাকা। এই বাজেটের সিংহভাগ জনপরিবহণের জন্য ই-বাসের ক্ষেত্রে ব্যয় হওয়ার কথা। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে ই-বাসের জন্য ৬১ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পে চার চাকার ২৬টি মডেল, তিন চাকার ১৮টি মডেল এবং দু’চাকার ৮৬টি মডেলের জন্য ভর্তুকির পরিকল্পনা রয়েছে।
দূষিত বায়ুর জন্য ২০১৬ সালে কমপক্ষে ৬০,০০০ পাঁচ বছর বয়সের কম শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। দূষিত বায়ুর একটি প্রধান কারণ হল ডিজ়েল বা পেট্রল চালিত গাড়ি, যা কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন এবং পিএম (পারটিকুলেট ম্যাটার) নির্গত করে। সে ক্ষেত্রে ই-যানবাহনে বায়ু দূষকের পরিমাণ শূন্য। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেমন ঘটবে, কর্মসংস্থানও বাড়বে।
নন্দগোপাল পাত্র
সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
দুই পিঠ
সরকারি হাসপাতালে উপযুক্ত পরিষেবা পাওয়া যায় না ভেবে, আমি আমার মেয়েকে উত্তর কলকাতার এক নামী বেসরকারি নার্সিংহোমে সন্তান প্রসবের জন্য ৭-৯-১৮ তারিখে প্রথিতযশা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাই। তিনি ৭-৬-১৯ প্রসবের দিন ধার্য করেন। তাঁর নির্দেশমতো কন্যার শরীর নিয়মিত পরীক্ষা করাতাম। ৫-৬-১৯ তারিখে শেষ পরীক্ষার সময় স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরে চিকিৎসক ৭-৬-১৯ তারিখে সন্তান প্রসব করান।
মায়ের শরীরের কর্ড শিশুটির গলায় আটকে যাওয়ায় তার মাতৃগর্ভেই মৃত্যু হয়। সন্তান প্রসবের পর আমার কন্যার প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকায়, বিখ্যাত চিকিৎসকটি কেসটিকে আরজি কর-এ রেফার করে তাঁর দায়িত্ব সারেন। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককুল জীবিত অবস্থায় আমার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তাঁদের কৃতজ্ঞতা এবং কুর্নিশ জানাই।
প্রণব কুমার মিত্র
কলকাতা-৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।