কোনও দেশের গড় জাতীয় আয় কি সেই দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার সূচক? না হলে চিন ও ভারতের জাতীয় আয়ের তুলনামূলক নিবন্ধ লেখার প্রয়োজন পড়ল কেন (‘চিনের মতো সফল হতে’, ৩০-৯)? আমাদের দেশে মোট সম্পদের বেশির ভাগটাই তো ৭৫টি পরিবারের হাতে আছে। দেশের মোট আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে গড় জাতীয় আয় পাওয়া যায়, তার সঙ্গে দারিদ্রসীমার নীচে বাস করা মানুষের সম্পর্ক কতটুকু? দেশের আর্থিক অবস্থার মাপকাঠি খুঁজতে আমরা নজর দিতে পারি প্রাথমিক শিক্ষা, চিকিৎসা, শিশুমৃত্যুর হার, সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার মানের দিকে। বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সুরক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানও দেখা যায়। এগুলির প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার কতটা মনোযোগী? এখনও সব শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা যায়নি, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক বা ওষুধ মেলে না। যে দেশে গ্রামাঞ্চলে শিশুরা মিড-ডে মিলের আধখানা ডিম বা এক টুকরো মাংসের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, সেখানে জাতীয় গড় আয়ে কী যায় আসে?
নিবন্ধটিতে লেখক বলেছেন, পরিকাঠামোয় উন্নতির জন্যই নাকি চিনের জাতীয় আয় বেড়েছে। কিন্তু চিনের সাধারণ মানুষ কেমন আছেন, এ বিষয়ে একটি বাক্যও খরচ করা হয়নি। ২০১২ সালে চিন ভ্রমণের সময়ে বেজিংয়ের রাস্তায় যত বিএমডব্লিউ গাড়ি দেখেছি, বিশ্বের অন্য কোনও দেশে (এমনকি খাস জার্মানিতেও) দেখিনি। চিনের সাধারণ মানুষ তো ভিড়-ঠাসা ট্রেনে যাতায়াত করেন, কমিউনিস্ট চিনে তা হলে দামি গাড়ি চড়েন কারা? যদি এ দেশে চিনের মতো প্রচুর ফ্লাইওভার, ঝাঁ চকচকে রাস্তা, শপিং মল করে দেওয়া হয়, তা হলেই দারিদ্র কমবে?
আর একটি কথা, চিনের গড় জাতীয় আয় ভারতের চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু শ্রেণিহীন কমিউনিস্ট চিনে ধনী-দরিদ্রের জীবনযাত্রার মধ্যে কতটা পার্থক্য, বা চিনে কত মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন, কেউ খবর রাখেন কি?
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
হাওড়ার শিল্প
‘ভারতের গ্লাসগো’, ‘ভারতের শেফিল্ড’— এই সব নামে এক সময়ে ডাকা হত হাওড়া শহরকে। কারণ এই শহরে ও আশেপাশে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের, বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, সুতোকল, চটকল প্রভৃতির উপস্থিতি। ডোমজুড় এলাকার প্রশস্ত গ্রামের পটুয়াপাড়ায় পট আঁকার রেওয়াজ ছিল বহু আগে, এখন মাটির প্রতিমা নির্মাণে সারা রাজ্যের মধ্যে অন্যতম। ডোমজুড়েই রয়েছে গয়না শিল্প। এই এলাকার সোনা ও হিরে-নির্মিত গয়নার কদর দেশজুড়ে। হাওড়া-হুগলির গ্রামগুলোতে রয়েছে প্রচুর হস্তচালিত তাঁত। হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বিভিন্ন গ্রামে আছে তারের ব্রাশ, তালাচাবি শিল্প , জরি শিল্প, বাঁশের হস্তকর্ম, শোলার সাজ তৈরির শিল্প প্রভৃতি। এ ছাড়া কলকাতার বিস্তৃত বাজারকে ঘিরে নিকটবর্তী জেলার গ্রামগুলিতে গড়ে উঠেছে পিতলের গয়না তৈরির কারখানা। হাওড়ার মানসিংহপুর গ্রামের সুশীল চন্দ্র কর আলিগড় থেকে তালাচাবি তৈরির পদ্ধতি শিখে এখানে শিল্প স্থাপন করেছিলেন। আমতা এলাকার বিনোলা, নিশ্চিন্তপুর, কৃষ্ণবাটী, থলিয়া ইত্যাদি গ্রামে কাঠ খোদাই, মুরাল নির্মাণ, মৃৎশিল্প বিখ্যাত। কাঠের রথ ও তার কারুকার্যে এই অঞ্চলের শিল্পীরা অত্যন্ত দক্ষ।
উলুবেড়িয়ার নিমদিঘিতে রয়েছে হোগলাপাতা থেকে মাদুর ও শেড নির্মাণ শিল্প। এক সময় পাঁচলার পাপোশ তৈরির কারখানা ও জরি শিল্পের কদর ছিল রাজ্য-জোড়া। এখানেই আছে পরচুলা নির্মাণ শিল্প। উদয়নারায়ণপুরের গজা গ্রামে আছে নোয়া তৈরির শিল্প। প্রায় দু’শো ঘর পুরুষ-নারী এর সঙ্গে যুক্ত। উলুবেড়িয়ার শাটল ককের এক সময় সারা ভারতে কদর ছিল, পরে চিনা ককের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে কুটিরশিল্পের চেহারা নিয়েছে।
যেহেতু কুটিরশিল্পের উৎপাদনের সঙ্গে জুড়ে থাকে শিল্পকর্ম, তাই এই সব সামগ্রীর গুরুত্ব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকে না বিচার করে শিল্পকলা ও সংস্কৃতির নিরিখে করা উচিত। এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা ও তার বিকাশ ঘটানো সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রতিটি সৃজনশীল মানুষের কর্তব্য। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। প্রয়োজন শিল্পীদের উৎসাহিত করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, যা রাজ্য সরকারের ‘উৎকর্ষ বাংলা’ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্ভব।
সৌরভ চট্টোপাধ্যায়
জগৎবল্লভপুর, হাওড়া
প্রতারিত
পুজোতে ক্লাবগুলোকে ১৮৫ কোটি টাকা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই টাকার এক চতুর্থাংশও যদি বন্ধ-থাকা হাওড়া রামকৃষ্ণপুর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের তহবিলে অনুদান হিসেবে দেওয়া যেত (যে কাজ করতে রাজ্য সরকার মহামান্য হাইকোর্টের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ), তা হলে ওই ব্যাঙ্কের ৪০ হাজার প্রতারিত গ্রাহক (যাঁদের অনেকেই অর্থাভাবে, প্রায় বিনা চিকিৎসায় গত হয়েছেন) এবং তাঁদের পরিবারবর্গ এই বিপুল অর্থাভাবের সময় বেঁচে থাকার রসদ পেতেন। এঁরা সামান্য কিছু বেশি সুদের আশায় সমবায় দফতরের পরিচালনাধীন এই ব্যাঙ্কে তাঁদের সারা জীবনের সঞ্চিত কষ্টার্জিত অর্থ গচ্ছিত রেখেছিলেন। সমবায়মন্ত্রীর কৈফিয়ত, ‘‘এখানে টাকা রাখার সময়ে কি আমাকে জিজ্ঞাসা করে রেখেছিলেন?’’
দেবাশীষ সিংহ
হাওড়া
দয়া
বিশ্বজিৎ রায় লিখেছেন, ‘‘অপরের কষ্ট হরণের জন্য হৃদয়ানুভবই দয়া’’ (‘দয়াই ছিল তাঁর ধর্মবিশ্বাস’, ২৭-৯)। ভাগবতে যে বিশ্লেষণই থাক, অর্থগত দিক থেকে ‘দয়া’ শব্দের উৎকর্ষের হ্রাস হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ নিবন্ধে বলেছেন ‘‘দয়া নহে, বিদ্যা নহে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাঁহার অজেয় পৌরুষ, তাঁহার অক্ষয় মনুষ্যত্ব।’’ রবীন্দ্রনাথ এই বাক্যে ‘দয়া’ শব্দকে যে ভাবে ব্যবহার করেছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, সময়ের আবর্তে ভাগবতে বিধৃত ‘দয়া’ শব্দের অপকর্ষ ঘটেছে। দয়া করছি, দান করছি মানে অভাবী কেউ হাত পেতেছে, আমি অনুগ্রহ করে তাকে দিচ্ছি। এর মধ্যে আত্মশ্লাঘা, অহঙ্কারও থাকে। অনেকে পরকালের পুণ্য অর্জনের প্রত্যাশায় দয়া করেন। আবার কেউ কেউ নাম, যশ, খ্যাতির প্রত্যাশায়। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এ সব কিছুই ছিল না। ‘‘ধর্মে প্রত্যয় ছিল না, জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসের প্রশ্নই ওঠে না।’’ নিবন্ধকার বিষয়টি আর একটু স্পষ্ট করলে ভাল হত।
সূর্যেন্দু বিকাশ পাত্র
প্রতাপদিঘি, পূর্ব মেদিনীপুর
হাঙরের প্রাণ
‘পাঁচ লাখ হাঙরের প্রাণের বদলে মিলবে প্রতিষেধক’ (২-১০) প্রসঙ্গে এই চিঠি। ভোগবাদে আসক্ত মানুষ অবিবেচকের মতো ধ্বংস করছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ফলে বছরভর আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন ভাইরাসের দ্বারা। নিত্যনতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টিকা তৈরিতে প্রয়োজন হয় ‘অ্যাজুভ্যান্ট’। এই উপাদানটি মূলত হাঙরের লিভার থেকে মেলে। করোনা প্রতিষেধকের জন্য ও রেকর্ড গতিতে গবেষণা করতে হাঙরকে এখন নির্বিচারে হত্যা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
হাঙর ‘মানুষখেকো’ কথাটা ঠিক নয়। সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর গড়ে ৫ জন মানুষ হাঙরের আক্রমণে মারা যান। আর বছরভর নানা কারণে মানুষের হাতে প্রাণ যায় ৭-১০ কোটি হাঙরের। মানুষের খাদ্য ও নানা ওষুধের প্রয়োজনে এই নিষ্ঠুরতা। ২০১৬-তে হোয়েল শার্ক প্রজাতির হাঙরকে বিপন্ন ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, সমুদ্রের বাস্তুসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসা হাঙর না থাকলে সমুদ্রে বড় আকারের শিকারি মাছ ও সিলের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাবে। এই নির্বিচার নিধন মেনে নেওয়া কষ্টকর।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত
ধাড়সা, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।