‘মিড-ডে মিল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্কুল’ (১০-২) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে দু’বছর আগে মিড-ডে মিলে মাথা পিছু বরাদ্দ ছিল ৪ টাকা ১৩ পয়সা। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৯৭ পয়সা। কিন্তু গত দু’বছরে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে শুরু করে চাল, ডাল, ডিম, তেল, আনাজের যে বিপুল পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তাতে মাথাপিছু ৮৪ পয়সা বৃদ্ধি খুবই কম। তার উপর পড়ুয়াদের উপস্থিতির সংখ্যা কম হওয়ায় কম টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। ফলে শিক্ষকদের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে। এর ফলে পড়ুয়াদের পুষ্টির বিষয়টি যে অবহেলিত হবে, তা বলা বাহুল্য।
অতিমারি পরিস্থিতিতে বহু মানুষ কর্মহীন হয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরে এসেছেন, দারিদ্র চরম আকার ধারণ করেছে। এই সব অসচ্ছল পরিবারের বহু শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা শিশুদের পুষ্টির বিষয়টি। বিশেষত শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবারের জোগান খুবই জরুরি। অথচ, এ বারের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার মিড-ডে মিল খাতে বরাদ্দ কমিয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে স্বাস্থ্যের দিকটিও যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থীদের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের শিশুরা যাতে শিক্ষালয়ে গিয়ে দু’মুঠো পেট ভরে খেতে পারে, সেই বিষয়টিতে নজর দেওয়া আবশ্যক। ‘সুস্থ ভারত’ গড়ে তুলতে এর কোনও বিকল্প নেই।
ভাস্কর পাল
সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
ভবিষ্যৎ কী
‘স্কুল-খাবারের বরাদ্দে কোপ, ক্ষোভ সর্বস্তরে’ (৩-২) শীর্ষক খবরটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দেশ যখন অতিমারিগ্রস্ত, তখন এমন কঠিন সময়ে এই বছরের বাজেটে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ গত বারের তুলনায় কমিয়ে দেওয়া হল। দরিদ্র শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এমন সিদ্ধান্ত কার্যত অবিবেচনারই দৃষ্টান্ত।
কেন্দ্রের মিড-ডে মিলের প্রকল্পটি ১৯৯৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় পুষ্টি সহায়তার জন্য জাতীয় কর্মসূচি হিসাবে শুরু হয়। উল্লেখ্য, সারা দেশে ১১.২০ লক্ষ স্কুলে প্রায় ১১.৮০ কোটি শিশু এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হল রান্না করা গরম পুষ্টিকর খাবার প্রদানের অপরিহার্যতা, যার ফলে শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রটি প্রকৃত ভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে। কিন্তু কোভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় তরঙ্গ-সহ দীর্ঘ সময় লকডাউনের জেরে দেশ জুড়ে মিড-ডে মিলের কাজ শোচনীয় ভাবে ব্যাহত হয়েছে। অবশ্য, গুরুতর এমন বিষয়টিকে কোনওক্রমে ঠেকাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার মিড-ডে মিলের অধীনে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পাঠরত সব শিশু বা বালক-বালিকাকে মাসে এককালীন মাত্র ১০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করে। কিন্তু এর দ্বারা সত্যিই কি কিছু সুরাহা হল? বরং দেখা গেল, সামাজিক স্তর থেকে এর বিরুদ্ধে সমালোচনার মধ্য দিয়ে এই দাবিই উঠে এল— এই সামান্য টাকার পরিবর্তে বরং সবাইকে রান্না করা খাবারের পরিষেবা পুনরায় চালু করা হোক। মিড-ডে মিলের রেশন বহু জায়গায় অনিয়মিত ভাবে বিতরণ করা হয়ছে কিংবা সময়মতো তা প্রদান করা হয়নি— অতিমারি কালে এমন হতাশাজনক সংবাদই বার বার উঠে এসেছে।
এমন জটিল অবস্থায় মিড-ডে মিল প্রকল্পটিকে জরুরি ভিত্তিতে ঢেলে সাজিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে আরও সক্ষম করে তোলার কি প্রয়োজন ছিল না? সেন্টার ফর চাইল্ড রাইটস-এর বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালের বাজেটে শিশুরা গত ১১ বছরে সবচেয়ে কম আর্থিক বরাদ্দ পেয়েছে। কোভিডের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ কমেছে। শিশু উন্নয়ন কর্মসূচি, যা মূলত ৬ বছরের কমবয়সি শিশুদের পুষ্টি ও যত্নের সঙ্গে সম্পর্কিত— এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে সেখানেও বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে। বাজেট পেশের প্রারম্ভিক ভাষণে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, এই বাজেট আগামী ২৫ বছরে দেশের অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধির নকশা বা ব্লু-প্রিন্ট। যদি নতুন প্রজন্ম বা শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, সুরক্ষার সামগ্রিক চিত্রটি বাজেটে এ রকম নেতিবাচক ভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে, তবে ২৫ বছর পর সেই ‘উন্নয়নের স্বপ্ন’ সত্যিই কি পূরণ হবে?
পৃথ্বীশ মজুমদার
কোন্নগর, হুগলি
বাড়তি দায়িত্ব
প্রায় দু’বছর পর অবশেষে মুক্তি পেল সমস্ত ছাত্রছাত্রী। পুরনো বন্ধুবান্ধবদের আবার ফিরে পাওয়ার আনন্দে সবাই আত্মহারা। কিন্তু করুণ বাস্তব হল, কিছু কিছু মাধ্যমিক স্কুলে অনলাইনে ক্লাস হলেও ইন্টারনেটের সুবিধা না পাওয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী দু’বছর ধরে সাধারণ শিক্ষা থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা আরও খারাপ। এই অবস্থায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মিড-ডে মিল, কিছু কিছু অনলাইন ক্লাস বা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজ ছাড়া তাঁরাও এই করোনাকালে অনেকাংশে গৃহবন্দি ছিলেন বাধ্য হয়ে। যদিও সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষ জীবিকার টানে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও কাজ চালিয়ে গিয়েছেন।
এখন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে একটু বেশি সময় দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পুরনো সিলেবাস যতটা সম্ভব যত্ন করে শেষ করা দরকার। বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে। এ ছাড়া, স্কুলছুট ছাত্রদের ফিরিয়ে আনা, সাংসারিক প্রয়োজনে কাজে যোগ দেওয়া ছাত্রদের ভবিষ্যতের ভাবনা বোঝানোর দায়িত্বও তাঁদের নিতে হবে। আশা করা যায়, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারও এই বিষয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করবে।
রাধারমন গঙ্গোপাধ্যায়
বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কেন বন্ধ
ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্ট (এনসিএলপি)-এর অধীনে জেলায় জেলায় আছে শিশুশ্রমিক স্কুল। এই সমস্ত স্কুলে ৯-১৪ বছর বয়সি শিশু শ্রমিক, স্কুলছুট ও নিরক্ষর ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে থাকে। এক-একটি স্কুলে সর্বাধিক ৫০ জন ছাত্রের জন্য থাকেন দু’জন শিক্ষক, এক জন হিসাবরক্ষক, এক জন পিয়ন। এঁদের উপর থাকেন পরিদর্শক। সাধারণত এনজিও-রা এই স্কুল পরিচালনা করে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়ারা স্কুল থেকে পেয়ে থাকে বিনামূল্যে বই-খাতা-পেন, মিড-ডে মিল ছাড়াও স্টাইপেন্ড। বর্তমানে হাওড়া জেলার শিশুশ্রমিক স্কুলের সংখ্যা ৩৭টি। করোনাকাল থেকে জেলার সমস্ত শিশুশ্রমিক স্কুল বন্ধ। এ দিকে করোনায় বেড়ে গিয়েছে স্কুলছুট ও শিশুশ্রমিকের সংখ্যাও। তাই দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। যখন রাজ্যে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সব স্কুল খুলে গিয়েছে, তখন এখনও কেন বন্ধ শিশুশ্রমিক স্কুল?
দীপংকর মান্না
চাকপোতা, হাওড়া
বাড়ুক বয়সসীমা
শিক্ষকের অভাবে রাজ্যের বিদ্যালয়গুলির অবস্থা খুবই করুণ। এর কারণে গ্রামাঞ্চলের অনেক নতুন উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, হয়তো ভবিষ্যতে আরও হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়েই সামান্য অর্থের বিনিময়ে বিদ্যালয়গুলি চালনা করা হয়। প্রাথমিকে কিছু শিক্ষক নিযুক্ত হলেও এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেই এই প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ফলে নিয়োগ থাকছে অথৈ জলে। মেডিক্যাল কলেজ এবং সাধারণ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ষাট থেকে বাড়ানো হলেও প্রাথমিক বা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামগ্রিক শিক্ষার স্বার্থে অবসরের বয়স বাড়ানো সমীচীন নয় কি?
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
পানাগড়, পশ্চিম বর্ধমান