‘নুহে শুনশান পথে নামল বুলডোজ়ার’ (৫-৮) ও ‘হাঁসুয়া নিয়ে শাসানোর পর ঘুম আসে না’ (৬-৮) প্রসঙ্গে এই পত্র। নদিয়ার নাকাশিপাড়া, মালদহের গাজল অথবা দক্ষিণ দিনাজপুর ইত্যাদি জায়গা থেকে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের গুরুগ্রাম ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে বজরং দল। আমার প্রশ্ন, এই সব জায়গা কি ভারতের মধ্যে নয়? এই সব স্থানের মানুষজন কি ভারতের যে কোনও শহরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না? একই দেশের মধ্যে থেকে বজরং দল কোনও ভাবেই তাঁদের রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিতে পারে না। এর জন্য এই দলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা করা উচিত। প্রশাসনও এর দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না। সন্দেহ হয়, স্বাধীন ভারতে বাঙালি হয়ে জন্মানো কোনও অপরাধমূলক কাজের মধ্যে পড়ে কি না।
খবরে জানা গেল, হরিয়ানার এক শহরে আড়াইশো ঝুপড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও জানা গেল, বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে আসা অভিবাসীরা বছর তিনেক ধরে এক একর জায়গা দখল করে রেখে বসবাস করছিলেন। আড়াইশো ঝুপড়ি মানে একটা ঝুপড়িতে চার জন করে ধরলে মোটামুটি এক হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হল। এটা করা হল সম্প্রতি ঘটে-যাওয়া দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে। এখন প্রশ্ন হল, এই এক হাজার অন্য দেশের নাগরিক তিন বছর ধরে এখানে রইলেন কী ভাবে! এ দেশে ঢোকার সময় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাঁদের আটকায়নি কেন? দেশের সীমান্ত কি এতটাই নড়বড়ে!
অভিজ্ঞতা থেকে সন্দেহ জাগে, বাঙালি আর বাংলাদেশি গুলিয়ে যাচ্ছে না তো! এর আগে মহারাষ্ট্রে, উত্তরপ্রদেশে দেখেছি ‘বাংলাদেশি’ নাম দিয়ে বাঙালি বিতাড়ন। হিন্দু নাম হলে তবু রক্ষে, মুসলিম নাম হলে প্রতিবাদের কোনও জায়গাই নেই। পশ্চিমবঙ্গের প্রচুর মানুষ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে আছেন। তার মধ্যে সোনার দোকানে কাজ থেকে শুরু করে জরির কাজ, দর্জির কাজ, নির্মাণ সংস্থায় শ্রমিক ইত্যাদি বহুবিধ কাজে অনেকে যুক্ত আছেন। যে কোনও সময়ে যে কোনও দাঙ্গার আঁচ পড়ে এই মানুষগুলোর উপর এবং আশ্চর্যের বিষয়, নিজের রাজ্যের সরকারি স্তরে এর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ বা প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয় না। তা হলে ধরে নিতে হয়, রাজ্য সরকার এই মানুষগুলোর বাংলাদেশি তকমাকে নীরব বৈধতা দিল।
কলকাতার তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ কখনও এই ধরনের ঘটনাকে বাঙালির সমস্যা বলে মনে করেনি। দুঃখের হলেও এটা সত্যি যে, কলকাতার ‘শিক্ষিত’, সুবিধাবাদী শ্রেণি নিজেদের ক্ষুদ্র বৃত্তের বাইরের যে কোনও সমস্যাকে দূরে সরিয়ে নিশ্চিন্তে নিদ্রাযাপন করতেই অভ্যস্ত। গ্রামের তৃণমূল স্তরের খেটে-খাওয়া মানুষজন অবশ্য কলকাতার এলিট সম্প্রদায় সম্বন্ধে কোনও মিথ্যা আশা পোষণ করেন না। গরিবের উপর ঘটা কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করবে এই সুবিধাবাদী শ্রেণি, তেমন চিন্তাও করেন না। তবে যে সরকারকে তাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এনেছেন, সেই সরকার তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে, তাঁদের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং প্রতিকার করবে, এই সামান্য আশা তাঁরা করতেই পারেন।
সুরজিৎ কুন্ডুউত্তরপাড়া, হুগলি
বিদেশে ভোগান্তি
‘পরিযায়ী সুরক্ষা’ (২-৬) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলি, করোনাকালে দেশ ও জনতা শ্রমিকদের চিনতে পেরেছে। সমাজ শুধু শ্রমিক বলেই যাঁদের জানত, তাঁরা তখন পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে গণ্য হলেন। ইতিপূর্বে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ‘পরিযায়ী’ শব্দটির ব্যবহার কম লক্ষ করেছি। এই রাজ্যে বহু শ্রমিক চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, গুজরাতে কাজ করতে যান। ভিন রাজ্যে সমস্যায় পড়লে তাঁদের নাজেহাল হতে হয়। মৃত্যু হলে সেই শ্রমিকের মৃতদেহ নিজের রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে কষ্টে ভোগে শ্রমিকের পরিবার। এই সমস্যা আগামী দিনে সমাধান হবে বলে আশা করছি। শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাঁদের সামাজিক, পারিবারিক সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে। ভাবতে হবে তাঁদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং পরিবারের শিক্ষা নিয়ে। কাজের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির ক্ষেত্রে তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়টা নিয়েও ভাবতে হবে।
মুন্সি দরুদ কাজিপাড়া, বীরভূম
তোলাবাজি
‘সেক্টর ফাইভে বাহিনী গড়ে তোলাবাজি, ধৃত’ (১৩-৮) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলি, ট্রেড ইউনিয়নের নামে সল্ট লেক সেক্টর ফাইভ ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্সের তোলাবাজি নতুন নয়। এক শ্রেণির সংস্থার ম্যানেজমেন্ট-এর একাংশ, ঠিকাদার এবং এই ধরনের তোলাবাজদের যৌথ উদ্যোগে দিনের পর দিন শ্রমিক শোষণ হয়ে চলেছে। অভিনন্দন জানাই শ্যামল কর্মকারকে, যিনি পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এই ধরনের তোলাবাজদের চিহ্নিত করেছেন। সল্ট লেক ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স সেক্টর ফাইভে বেশ কিছু সংস্থা ঠিকা শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের ন্যূনতম মজুরি দিত। কিন্তু কিছু বছর ধরে তোলাবাজদের জন্য শ্রমিকরা যথাযথ মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। লঙ্ঘিত হচ্ছে শ্রম আইন।
তবে একটি প্রশ্ন থাকে। যেখানে মূল নিয়োগকর্তাদের একাংশ এবং ঠিকাদারদের একাংশ এই ধরনের তোলাবাজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিনকে রাত করছে, সেখানে শ্রমিক কতটা সুরক্ষিত থাকতে পারেন? এই প্রশ্নকে নিয়েই ঠিকা শ্রমিকরা দৈনন্দিন জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। আমি নিজে এই ধরনের বঞ্চনার ভুক্তভোগী। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করার কথা বলার জন্য, এবং বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবার জন্য আমাকে ঠিকা শ্রমিকের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুধু বরখাস্তই নয়, আমার উপর প্রবল মানসিক চাপও তৈরি করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রক, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রম মন্ত্রক এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, সল্ট লেক সেক্টর ফাইভ-এর অসংগঠিত ঠিকা শ্রমিকদের দুর্দশা দূর করতে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করুন। এই ধরনের তোলাবাজদের আক্রমণ অসংগঠিত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। এদের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
কুন্তল চক্রবর্তী বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
বিদ্যুৎ খরচ
বিদ্যুৎ ব্যবহারে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে প্রধানত ফিক্সড ও ন্যূনতম চার্জ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে ‘চড়া বিদ্যুৎ বিলে নয়া ধাক্কা চিন্তা বাড়াল বহু গ্রাহকের’ (৫-৮) প্রতিবেদনে। অনেক বিদ্যুৎ উপভোক্তা হয়তো লক্ষ করেননি, গত মার্চ, ২০২৩-এর বিল থেকে সিইএসসি আলাদা করে জানাতে শুরু করেছে যে, বিদ্যুৎ ক্রেতাকে ‘ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার পারচেজ় অ্যাডিশনাল সারচার্জ’ বহন করতে হবে এনার্জি এবং ফিক্সড চার্জের উপর, প্রতি মাসের নির্ধারিত হারে। এই পরিবর্তন হয়েছে ইলেকট্রিসিটি অ্যামেন্ডমেন্ট রুল, ২০২২ অনুসারে। গত পাঁচ মাসের বিলে ওই সারচার্জের হার ৬.১% থেকে ১৭.২% মধ্যে ওঠানামা করেছে। এ ছাড়া, মাসে ৩০০ ইউনিট বা তার বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হলে সরকারি বাড়তি কর (ডিউটি) জুড়ে দেওয়া হবে ওই সারচার্জের সঙ্গে ১০% হারে। যদিও, ওই অতিরিক্ত টাকা এখনই চাওয়া হচ্ছে না। এটি পরে আদায় করা হবে বলে বিলে জানানো হয়েছে।
সুতরাং, এই বিশাল অঙ্কের সারচার্জের দায় চাপছে সকলের উপর। বিদ্যুৎ দফতর বা বিদ্যুৎ শুল্ক কমিশন যদি ওই সারচার্জের উপর অন্তত সরকারি ‘ডিউটি’ ছাড় দিতে পারত, তা হলে ক্রেতাদের কিছুটা ভার লাঘব হত। বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির আবহে বিদ্যুতের জন্যে এই অতিরিক্ত খরচ আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে সাধারণ মানুষের কাছে।
বিকাশ কুমার ভদ্র শিবপুর, হাওড়া