উত্তম কুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
‘উত্তমের বাঁচা-মরার অগ্নিপরীক্ষা ছোটি সি মুলাকাত’ (‘উত্তম পুরুষ’ ক্রোড়পত্র, ২৪-৭) প্রতিবেদনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ না থাকায় বিস্মিত হলাম। কারণ, উত্তমকে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার জন্য প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন হেমন্তই। ১৯৬২ সালে হেমন্ত প্রযোজিত প্রথম হিন্দি ছবি ‘বিস সাল বাদ’ সুপারহিট হয়। এর পর উত্তমকে নায়ক করে ‘শর্মিলি’ বলে একটি হিন্দি ছবির পরিকল্পনা করেন হেমন্ত ও পরিচালক বীরেন নাগ। নায়িকা ওয়াহিদা রেহমান। উত্তমের সঙ্গে কথা বলে ‘শর্মিলি’ তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়। একটি সর্বভারতীয় পত্রিকায় পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কথা ছিল, প্রথম শুটিং হবে উত্তমকে নিয়ে, আসানসোলে কয়লাখনিতে। সব কিছু ঠিকঠাক। কিন্তু চূড়ান্ত মুহূর্তে উত্তম অভিনয় করবেন না বলে বেঁকে বসেন। কী কারণে এই সিদ্ধান্ত তাও স্পষ্ট করে জানাননি। এ হেন আচরণে হেমন্ত খুবই আঘাত পেয়েছিলেন। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কে সামান্য হলেও চিড় ধরে। যার ফলে অবিস্মরণীয় ‘উত্তম-হেমন্ত’ জুটির সাময়িক বিচ্ছেদ। এ দিকে ‘শর্মিলি’ না হওয়ার জন্য হেমন্তকে বিপুল আর্থিক মাসুল গুনতে হয়েছিল। তখন তিনি ওই ছবির কাজ বন্ধ রেখে, বিশ্বজিৎ ও ওয়াহিদাকে নিয়ে তৈরি করলেন ‘কোহরা’ (১৯৬৪)। বীরেন নাগই পরিচালনা করেছিলেন। আমার মতে, উত্তমকুমার হিন্দি ছবিতে সফল না হওয়ার জন্য প্রথম ভুলটি করেছিলেন হেমন্তর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে। কারণ, ‘শর্মিলি’ ছবিতে উত্তম ছিলেন একক নায়কের চরিত্রে। আর ‘সঙ্গম’ ছবিতে অফার ছিল দ্বিতীয় চরিত্রের জন্য।
ধর্ম বাতিল
স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও দেশের মানুষের প্রকৃত অর্থনৈতিক মুক্তি আজও সুদূরপরাহত। এর পিছনে অনেক কারণ আছে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কারণ বোধ হয় আমাদের অতিরিক্ত ধর্মীয় সুড়সুড়ি এবং আজন্মলালিত কুসংস্কার। সব ধর্মের মানুষের কথাই বলছি। ধর্মে কী লাভ হয়েছে আমাদের, শুধু পারস্পরিক বিদ্বেষ বাড়া ছাড়া? ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায় যত তাদের ধর্মের গোড়ায় জল দেবে, তাদের মধ্যে বিদ্বেষ ততই বাড়বে। সর্বধর্মসমন্বয় আসলে একটা হুজুগ, যা কখনওই সম্ভব নয়। এত ধর্ম পালন করেও আমরা অর্থনীতির দিক থেকে একটা নীচের দিকের দেশ। পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এমনকি পৃথিবীর অসুখী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
অন্য দিকে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার তুলনামূলক ভাবে যুক্তিবাদী দেশগুলোর দিকে তাকান। এ সব ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য নজরকাড়া। এমনকি দেশে অপরাধীর সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে বলে সে সব দেশের সরকার সংশোধনাগারগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর আমাদের ধর্মের দেশ ভারতে নতুন সংশোধনাগার বানাতে সরকার ঠিকাদার নিয়োগ করছে। এই অবস্থা পৃথিবীর সেই সব দেশেই প্রবল, যেখানে ধর্মের বাড়াবাড়ি অত্যন্ত বেশি। পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলোর বাস্তব অবস্থা তাই।
মুক্তির উপায় হল বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী চিন্তার প্রসার। আধুনিক সমাজে ধর্মের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই আমাদের দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র জায়গায় ‘যুক্তিবাদী’ শব্দটি ব্যবহার করা হোক। সরকারি-বেসরকারি স্তরে সমস্ত ধর্মীয় শিক্ষার পরিবর্তে আধুনিক শিক্ষার প্রচলন করা জরুরি। রাষ্ট্র কর্তৃক সমস্ত ধর্মীয় ছুটি বন্ধ করা হোক। কেউ উৎসবে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে ব্যক্তিগত ভাবে ছুটির আবেদন করতে হবে।
অর্ণব রায়
আমতলা আদর্শপল্লি, দ. ২৪ পরগনা
মর্ম উদ্ধার
নির্মল সাহা লিখিত ‘সমাবর্তনে ধর্ম কেন’ (২৮-৬) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। ‘বেদ’ কথার অর্থ হল জ্ঞান এবং এই জ্ঞানচর্চা সর্বসাধারণের মধ্যে হয় না বলে, এবং সংস্কৃতে উচ্চারিত বৈদিক মন্ত্রের অর্থ উদ্ধার করতে শ্রোতৃমণ্ডলীর অধিকাংশই অপারগ বলে, মনে হয় দুর্বোধ্য ভাষায় কী সব ধর্মকথা বুঝি শুনিয়ে দেওয়া হল এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র কালিমালিপ্ত হয়ে গেল!
কিন্তু বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে যে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে, নির্মলবাবু যদি তার মর্ম উদ্ধার করতে পারতেন, তা হলে তাঁর মনের কোণে ‘সমাবর্তনে ধর্ম কেন’— এই প্রশ্ন উঁকি দিত না।
উচ্চারিত দুয়েকটি বৈদিক মন্ত্রের নমুনা নেওয়া যাক— ১) ‘‘ওঁ সহনাববতু। সহ নৌ ভুনক্তু। সহবীর্যং করবাবহৈ। তেজস্বি নাবধীতমস্তু মা বিদ্বিষাবহৈ। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।’’ বাংলায় যার অর্থ— ঈশ্বর আমাদের উভয়কে (আচার্য ও শিষ্যকে) সমভাবে রক্ষা করুন, আমাদের উভয়কে পালন করুন। আমরা যেন সমভাবে (বিদ্যালাভে) সামর্থ্য অর্জন করতে পারি; অধীত বিদ্যা যেন আমাদের উভয়ের জীবনে সফল হয়; আমরা পরস্পরকে যেন বিদ্বেষ না করি। আমাদের মধ্যে ত্রিবিধ শান্তি বিরাজ করুক।
উদাহরণ-২— ‘‘সত্যং বদ। ধর্মং চর। স্বাধ্যায়ান্মা প্রমদঃ। আচার্যায় প্রিয়ং ধনমাহৃত্য প্রজাতন্তুং মা ব্যবচ্ছেৎসীঃ। সত্যান্ন প্রমদিতব্যম্। ধর্মান্ন প্রমাদিতব্যম্। কুশলান্ন প্রমাদিতব্যম্।...’’ বাংলা অর্থ: সত্য কথা বলবে। ধর্মাচরণ করবে। অধ্যয়নে উদাসীন হবে না। আচার্যের জন্য অভীষ্ট ধন আহরণ করে (গৃহস্থাশ্রমে) সন্তানধারা অবিচ্ছিন্ন রাখবে। সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ো না। ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ো না। মঙ্গলজনক কাজে উদাসীন
থেকো না।...
এই বক্তব্যগুলির মধ্যে সঙ্কীর্ণ অর্থে কোনও ধর্মকে কি উচ্চে তুলে ধরা হয়েছে? না কি এক বিশ্বজনীন নীতিবোধকে জাগিয়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে? শিক্ষান্তে শিক্ষার্থীকে এই কথাগুলি স্মরণ করিয়ে দিলে কি ধর্ম প্রচার করা হয়?
নির্মলবাবুর দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা— ‘‘বেদগান, স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দের দীক্ষান্ত ভাষণের মতো ধর্মীয় আচার’’ কেন? অনুমান করা যায়, স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দের গৈরিক বসন তাঁর অন্তরপীড়ার কারণ হয়েছে। সবার জ্ঞাতার্থে দু’টি কথা জানিয়ে রাখি।
প্রথমত, স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ বেলুড় মঠের বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এবং দ্বিতীয়ত, শিক্ষা অঙ্গনে তিনি এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, তাঁর শিক্ষায় এবং আদর্শে অনুপ্রাণিত বহু শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। দীক্ষান্ত ভাষণে তিনি সংস্কৃত বাক্য সহযোগে সদ্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সনাতনী ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সমাজে তাঁদের ইতিকর্তব্য বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যা যে কোনও দেশের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের দীক্ষান্ত ভাষণের মূল সুর।
অপূর্ব পাল
কলকাতা-১২৪
দায় আছে
‘সবার কাছে কিসের দায়’ (২৬-৭) শীর্ষক চিঠিতে পত্রলেখক শেষ লাইনটি লিখেছেন “হিন্দু বলেই তাকে সবার কাছে দায়বদ্ধ হতে হবে, তা কেন?” সত্যিই তো, ধার্মিকেরা রাস্তা জুড়ে প্যান্ডেল বেঁধে পুজো করবে, নমাজ পড়বে। পুজো পরব ক্রিসমাসে কখনও রক্তাক্ত মিছিল বার করে কখনও পক্ষকাল কাজকর্ম শিকেয় তুলে অবরুদ্ধ করবে জনজীবন। ধর্মীয় নেতারা দেশে দেশে ধর্মীয় জিগির তুলে দশকের পর দশক যুদ্ধ আর দাঙ্গা বাধিয়ে প্রকাশ্যে পরস্পরের ওপর দোষারোপ করবে, আর তলে তলে অস্ত্র বিক্রির অর্থ, লুটের অর্থ, ক্ষমতা ভাগাভাগি করে আখের গোছাবে। এখানে দায় নেওয়ার জায়গা সত্যিই নেই।
প্রশ্ন একটাই, হিন্দু বলে, মুসলিম বলে, বৌদ্ধ বলে অন্যদের দায় ঝেড়ে ফেলছি অবলীলায়, ধর্মীয় মগজ-ধোলাইয়ের রেশ ফিকে হলে যখন নিজেকে মানুষ-টানুষ মনে হবে, তখন দায়গুলো, লাশগুলো, গণহত্যার বীভৎসতাগুলো কোন সৌরমণ্ডলের কোন গ্রহে
ডাম্প করে আসব?
অরিজিৎ কুমার
শ্রীরামপুর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।