‘গাঁধী জয়ন্তীতেও ফোনে শুভেচ্ছার বন্যা’ (৩-১০) শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাঠে কৌতুক অনুভব করা গেল। গত বছর আমাদের দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭৩ কোটি, এর মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৩ কোটি (চিনে তা ১৩০ কোটি)। প্রতিটি স্মার্টফোন বিক্রি প্রতিনিয়ত এক জন চিত্রগ্রাহকের জন্ম দিয়ে চলেছে। ‘নিজস্বী’ ও ‘দলশ্রী’ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট দেওয়া চলছে। ‘লাইক-শেয়ার-কমেন্ট-ফরোয়ার্ড’ –এর দুর্নিবার আকর্ষণে ছুটছে আট থেকে আশি। প্রত্যাশিত লাইক না পেয়ে অনেকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, আত্মহননের খবরও মাঝেমধ্যে উঠে আসছে। নিজস্বী তুলে মরিয়া ভাবে পোস্ট করার প্রবণতাকে এক ধরনের মানসিক বৈকল্য বলে চিহ্নিত করেছেন ব্রিটেনের নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও এ দেশের মাদুরাই তিয়াগারাজার স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের এক দল গবেষক। যৌথ গবেষণাপত্রে এই রোগটির নাম দিয়েছেন ‘সেলফাইটিস’।
এর পাশাপাশি নিখরচায় (সত্যিই কি তাই?) জনে জনে শুভেচ্ছা জানানোর ঢল নেমেছে। শুভেচ্ছা বার্তায় মেল বক্স উপছে পড়ছে। গণেশ, মনসা, কার্তিক, জামাইষষ্ঠী, ইতু, ভাদু, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, দোল, রাখি, নববর্ষ, দশেরা, অম্বুবাচি, চৈত্র সংক্রান্তি, মহরম, ইদ, ক্রিসমাস—পাঁজিপুঁথি মেনে মুখ্য-গৌণ সকল উৎসবে নেটিজ়েনরা পোস্ট করে চলেছেন। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে বাসে কোনওক্রমে দাঁড়ানোর জায়গাটুকু ম্যানেজ করে বাহ্যজ্ঞানলুপ্ত হয়ে কানে ছিপি গুঁজে (ইয়ার প্লাগ) চার ইঞ্চি টাচ-স্ক্রিনে নিমগ্ন হচ্ছেন। ভিড়ঠাসা গাড়িতে কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকলে আজকাল বুঝে নিতে হবে তাঁর নেট-প্যাক শেষ হয়ে গিয়েছে। কলকাতা থেকে নবীন সাহিত্যিকের দল শান্তিনিকেতনে কবির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাঁর স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে চাওয়ায় অসুস্থ কবি বলেছিলেন, ‘‘ওপরে গেলে বাঁচি।’’ তাতে শ্রোতাদের এক জন ‘ঠিকই তো’ বলায় কবি খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। প্রিয়জনের অসুস্থতা বা মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই সে রকম ভুল করে লাইক দিয়ে ফেলছেন। মহরম, গাঁধী জয়ন্তী বা শহিদ দিবসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা লক্ষ করা যাচ্ছে। ইভিএমে নোটা বোতামের ন্যায় এ ক্ষেত্রে ‘ব্যথিত হলাম’ বা ‘সমবেদনা জানাই’ গোছের বোতাম বা স্থির চিহ্ন (ইমোজি) চালু করা আবশ্যিক। বিজয়ার শেষে একটা পোস্টকার্ডও পেলে কয়েক দশক আগেও খুশিতে মন ভরে উঠত। ‘‘হাতের লেখা চিঠি পড়ে, চিঠির প্রেরকের মুখখানা চোখে ভেসে ওঠে, চিঠির বিষয়ও সব জীবন্ত হয়ে ওঠে, মেল পড়ে ওই রকম অনুভূতি হয় না’’, বলে আক্ষেপ করেছেন সমরেশ মজুমদার। ডিজিটাল সভ্যতার দান বড় বেশি আবেগশূন্য, মেকি ও যান্ত্রিক— এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয়।
সরিৎশেখর দাস
সুকান্ত সরণি, ব্যারাকপুর
অভিনন্দন
বরাহনগর শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দিরের কতিপয় ছাত্রকে প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের শাস্তি দেওয়ার ঘটনাকে অনেক অভিভাবক, বিশেষত সাজাপ্রাপ্ত ছাত্রদের অভিভাবকেরাও সমর্থন জানিয়েছেন জেনে ভাল লাগল। আজকাল শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের সামান্য শাসন করলেই কিছু অভিভাবক যে ভাবে রে-রে করে তেড়ে আসেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। অনেক ক্ষেত্রে ঘটনা তো থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। স্বভাবতই ঝামেলার ভয়ে শিক্ষকরাও ছাত্রদের অনেক অন্যায় আচরণকে উপেক্ষা করতে থাকেন। এতে ছাত্রছাত্রীদের মানসিকতার উন্নতি সাধিত হয় কি? মনে রাখা উচিত, বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না গিয়ে শিক্ষকরা প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীদের শাসন করতেই পারেন। যে সব অভিভাবক শিক্ষকদের সামান্য শাসনেই স্কুলে ছুটে যান, তাঁরা ভেবে দেখেন না— বাড়িতে একটি বা দু’টি সন্তানকে সামলাতে গিয়ে তাঁরাও পুত্র-কন্যাকে শাসন করেন, প্রয়োজনে গায়ে হাত তোলেন। পক্ষান্তরে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এক সঙ্গে অনেক ছাত্রছাত্রীকে সামলাতে হয়। সে ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা অবাধ্যতার সীমা ছাড়ালে তাঁরা যদি প্রয়োজনে একটু শাসন করেন, সে ক্ষেত্রে আইনের দোহাই তুলে এক শ্রেণির অভিভাবকের হইচই বাঁধানো আদৌ যুক্তিসঙ্গত কি? বরং তাঁদের সন্তানরাও জানুক, স্কুলে অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হবে। তাদের সুকুমার মনে এই ভয়বোধটুকু থাকাটাও কিন্তু জরুরি। যা ফুটে উঠেছে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথাতেও— ‘‘ছেলেবেলায় বিদ্যালয়ের ওই শাসনটুকু ছিল আমাদের কাছে আশীর্বাদের মতো।’’
সমীর কুমার ঘোষ
কলকাতা-৬৫
পদক্ষেপ জরুরি
রাজ্য জুড়ে একটার পর একটা বিশৃঙ্খলা প্রমাণ করছে, প্রশাসনের উপর মানুষের আস্থা ক্রমশ কমছে। ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস স্কুলের ঘটনা তারই প্রমাণ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনায় প্রথম থেকেই যদি দৃঢ়তার সহিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হত, তা হলে তা এত ভয়ঙ্কর হতে পারত না। কোনও অভিযোগ বা ঘটনাকে তুচ্ছ করে না দেখে তার মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ করা দরকার। কিন্তু তা না করে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠার পর প্রশাসনকে বলপূর্বক তা ঠেকাতে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনের এই ভূমিকা ভয়ঙ্কর বিপদের অশনিসঙ্কেত। প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে গেলে বিচার না পাওয়ার হতাশা থেকে মানুষ তার ক্ষোভ তাৎক্ষণিক ভাবে উগরে দেয়, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ভবিষ্যৎ সে দিকেই এগোচ্ছে। ওই স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এক শিশুছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করেছেন। এ খবর অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের উত্তেজিত হওয়াটা স্বাভাবিক। এমন বহু ঘটনার বিচার চেয়ে জনতা নিরাশ হয়। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা উচিত নয়। প্রশাসনের মানবিকতা এবং তৎপরতা দিয়েই এই প্রবণতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু কোথায় সেই দৃষ্টান্ত?
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যান্য ঘটনার মতো বিনোদিনী গার্লস স্কুলের এই ঘটনাও তাই গভীর উদ্বেগজনক। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশের প্রবেশ কোনও মতেই কাম্য নয়। বিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত অভিভাবকদের উপর পুলিশি আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। শিশুছাত্রীটির উপর যৌন নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, তার যথাযথ তদন্ত হোক এবং দোষী প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের শাস্তি হোক। কিন্তু কিছু অভিভাবক ওই বিদ্যালয়ের সাধারণ নিরপরাধ শিক্ষিকাদের উপর চড়াও হয়ে তাঁদের উপর যে ভাবে আক্রমণ করেছেন, তা অতিশয় নিন্দনীয়।
কিংকর অধিকারী
বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
মহিষাসুরমর্দিনী
‘কলকাতার কড়চা’য় (১-১০) লেখা হয়েছে কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি প্রথম সম্প্রচারিত হয় ১৯৩১ সালে। অনুষ্ঠানটির প্রথম সম্প্রচার হয় ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে।
রাধিকানাথ মল্লিক
কলকাতা-৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
• ‘১০ ইউরো চাঁদা দিয়ে...’ শীর্ষক খবরে (বিদেশ, পৃ ৯, ১৫-১০) ইউরোর বদলে পাউন্ড হবে।
• ‘সেতুর স্বাস্থ্য-পরীক্ষায় লেজ়ারের নজর’ শীর্ষক খবরে (কলকাতা, পৃ ১৫, ১২-১০) লেখা হয়েছে আইআইটি খড়্গপুরের সহযোগিতায় এটি হচ্ছে। আদতে তা হচ্ছে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায়। একই খবরে নিশীথরঞ্জন মণ্ডলকে সেতু-বিশেষজ্ঞ বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি তা নন।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।