শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার আকর্ষণ প্রশ্নাতীত। মেলার আশপাশের এলাকা সেজে উঠছে। অনেক আগে থেকে সব হোটেল, হলিডে হোম, অতিথি নিবাস বুক হয়ে যায়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার সূচনা হয়েছিল ব্রাহ্ম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ১৮৯৪ সালে শান্তিনিকেতন সংলগ্ন ভুবনডাঙা মাঠে। ১৯৬১ সালে ওই মেলা পূর্বপল্লির মাঠে স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকেই ধারাবাহিক ভাবে মেলা ওই জায়গায় চলছে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জানান, এ বছর পৌষমেলা শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে হবে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের ডিড-এ উল্লেখ আছে প্রতি বছর ৭ পৌষ একটি মেলার আয়োজন করবে ট্রাস্ট আর তাতে সহযোগিতা করবে বিশ্বভারতী। সেই মতো প্রতি বছর ৭ পৌষ মেলা শুরু হয় এবং চলে তিন দিন ধরে। তবে ২০১৭ সাল থেকে মেলাটি ছয় দিন ধরে চলে আসছে। তার পরে মেলা ও মেলাপ্রাঙ্গণ নিয়ে নানা জট দেখা দিয়েছে। তবে, জল্পনা অতীত। বিশ্বভারতী এ বছর পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলার আয়োজন করতে চলেছে। মেলা চলবে ৭ থেকে ১২ পৌষ। মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য বাংলা লোকসঙ্গীত তথা বাউল গান। এ বারে মেলা প্লাস্টিক বর্জিত ও পরিবেশবান্ধব হবে। নগর উন্নয়ন দফতরের দেওয়া কাগজের ব্যাগ নিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে হবে।
২০১৯-এ শেষ বার বিশ্বভারতী পৌষমেলা করেছিল। এ বারের সিদ্ধান্তে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে বোলপুর, শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা। দেশ-বিদেশ থেকে বিশ্বভারতীর বহু প্রাক্তনী এই সময় শান্তিনিকেতনে আসেন। শীতের সকালে ঠান্ডা হাওয়ায় বিশ্বভারতী চত্বরে বিশ্বভারতীর শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা গান ও নাচের মধ্যে দিয়ে পথ পরিক্রমা করেন। সেই অপরূপ দৃশ্য না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
অপূর্বলাল নস্কর, ভান্ডারদহ, হাওড়া
ভারতবন্ধু স্টেলা
উইলিয়াম রাদিচের মৃত্যুর পর ‘বাংলা ভাষার বন্ধুবিয়োগ’ প্রবন্ধে (২৩-১১) বাসবী ফ্রেজ়ার লিখেছেন, বাংলা এক প্রিয় বন্ধুকে হারাল। রাদিচে যেমন রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিতে বুঁদ হয়েছিলেন, তেমনই অন্য এক জন বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ স্টেলা ক্রামরিশ শুধু রবীন্দ্রনাথকে ভালবেসে জীবনের মূল্যবান সময় কাটিয়েছেন ভারতে। কখনও বোলপুরে তো কখনও কলকাতায়। বাঙালি কি স্টেলা ক্রামরিশকে মনে রেখেছে? স্টেলার প্রাণের শহর ফিলাডেলফিয়া আর কলকাতা। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি স্টেলার ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা। গবেষণা, প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভারতের জীবন-সংস্কৃতি ও শিল্পকলাকে তুলে ধরেছেন। সংস্কৃত ও পালি ভাষাতেও তিনি যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেন। কিশোরী বয়সে তিনি আকৃষ্ট হন ভারতের প্রতি। ভারতের আধ্যাত্মিক চেতনা স্টেলাকে মুগ্ধ করে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁকে শান্তিনিকেতনে অধ্যাপনা করার অনুরোধ করেন। স্টেলা কবির সেই অনুরোধ উপেক্ষা করেননি। কবিগুরু তাঁর মধ্যে দিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। স্টেলা কলাভবনে নাচ শেখাতেন, ইতিহাস পড়াতেন ছাত্রদের। কবির স্নেহে ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে স্টেলার সখ্য গড়ে উঠেছিল। শান্তিনিকেতনের মেলা তাঁকে আকর্ষণ করত। মিতভাষী স্টেলা ভারতীয় ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে নিজেকে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার সময় শাড়ি পরেছিলেন। তাঁর কাজে ভারতীয় শিল্পকলা বার বার উপস্থাপিত হয়েছে। বাংলার নকশি কাঁথা, টেরাকোটা, লোকাচার ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। প্রাচীন বাংলার শিল্পকলা সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দিতেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসুর সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন। গণেশ পাইন লিখেছিলেন, নানান স্তরের নীলের মধ্যে সাদা আর সবুজের ছিটে। ছবিটি এ শহরের এক প্রখ্যাত দন্তচিকিৎসকের সংগ্রহে যাবে। ওঁদের সংগ্রহে নন্দলাল, স্টেলা ক্রামরিশও আছেন। শুনেছি যামিনী রায়ও।
কবিগুরু স্টেলার একটি কাজের জন্য অনুরোধ করেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে। পরে অবশ্য সে অনুরোধ মেনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কাজের ব্যবস্থা হয়, যদিও বেতন খুবই কম ছিল। তিনি চিত্রসূত্রের মতো বইও অনুবাদ করেছেন। প্রাচীন ভারতকে, কয়েকশো হারানো শিল্পকর্মকে তিনি সযত্নে তুলে ধরেছেন তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে। বিশ্বভারতী তাঁকে দেশিকোত্তম সম্মান প্রদান করেন। শান্তিনিকেতনের অলীক সৌরজগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র স্টেলা ক্রামরিশ।
তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর,পূর্ব বর্ধমান
আবেগের গান
গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের শতবর্ষ উপলক্ষে সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্রের লেখা ‘তাঁর গানের স্বরলিপি’ (৭-১২) প্রবন্ধটি প্রয়াত কিংবদন্তির কাব্যিক প্রতিভার দিকে আলোকপাত করেছে। এই প্রসঙ্গে একটি তুমুল জনপ্রিয় গান নির্মাণের কাহিনি স্মরণ করিয়ে দিই। গানটির গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, সুরকার সুপর্ণকান্তি ঘোষ ও কণ্ঠশিল্পী মান্না দে। প্যারিসে বেড়াতে গিয়ে সুপর্ণকান্তি ঘোষ তাঁর গাইডের মুখে ছোট পাহাড়ে কফিশপে বিখ্যাত ব্যক্তিদের আড্ডা দেওয়ার কথা শোনেন। পরে তাঁর বাড়িতে এক দিন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এলে তাঁকে কফি হাউসের আড্ডা নিয়ে একটা গান লেখার কথা বলেন। বিষয় শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেও রাজি হন গীতিকার। সে দিনই প্রথম দু’টি লাইন লিখে দেন, “কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই/ কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই।” সঙ্গে সঙ্গে সুরও করে ফেলেন সুপর্ণকান্তি ঘোষ। পর দিনই গানের মাঝখানের অংশ তৈরি করে ফেলেন। তবে গানের শেষ অংশ নিয়ে নাকি অনেক টালবাহানা হয়। শেষে গলায় ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য মুম্বই যাওয়ার আগে গানের শেষ অংশটি হাওড়া স্টেশনে লিখে গৌরীপ্রসন্নবাবু লোক দিয়ে পাঠিয়ে দেন সুপর্ণকান্তির কাছে। গান নিয়ে মান্না দে-র কাছে গেলে তিনিও গানের কথা পড়ে অবাক। সুপর্ণকান্তির কণ্ঠে গানটি শুনে তাঁর খুবই পছন্দ হয়ে যায় এবং গানটি রেকর্ড করেন। এক নতুন আঙ্গিকে লেখা, সুরের অভিনবত্বে ভরা, আবেগ ঢালা গায়কির গান সেটি। জনমানসে গভীর ছাপ ফেলে। পৌঁছে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
সত্যকিঙ্কর প্রতিহার, যমুনা, বাঁকুড়া
পথকুকুর নিয়ে
সম্পাদকীয় প্রবন্ধ ‘প্রেমফাঁদ’ (৫-১২) প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা। অভিজ্ঞতা থেকে জানি টরন্টো, সিডনি প্রভৃতি শহর বা কিছু দেশে পোষ্যদের গলায় শিকল পরিয়ে রাস্তায় বেরোলে মানুষ হাতে পলিপ্যাক নিয়ে বেরোন। পোষ্যদের বর্জ্য পলিপ্যাকে তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট বিনে ফেলে দেন। উন্নত দেশে পথঘাটে কুকুরের বর্জ্য পড়ে থাকা আইনত দণ্ডনীয়। রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখতে যেমন মোড়ে মোড়ে ‘গারবেজ বিন’ থাকে, রাস্তায় বা পার্কে কুকুরের ময়লা ফেলারও আলাদা ‘বিন’ থাকে। তবে ওই সব দেশে পথকুকুর প্রায় চোখেই পড়ে না। আমাদের দেশে সেই সচেতনতা নেই। পথকুকুর যত্রতত্র ময়লা করে। অন্যমনস্ক হলেই সেই বর্জ্য পায়ে লাগে, দুর্গন্ধ আসে, দৃশ্যদূষণও হয়। পথকুকুরদের খাওয়ানো নিয়ে নিয়ম হলেও তাদের রাস্তা নোংরা করা আটকাবে কে? পথকুকুরের সংখ্যা বাড়তে না দেওয়ার জন্য পুরসভা নির্বীজকরণের পরিকল্পনা নিতে পারে বা রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখার উপায়ে জোর দিতে পারে।
পথকুকুরদের খাওয়ার জায়গা নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ কতটা মানা হচ্ছে বলা যায় না, এলাকা ঘুরলে তা চোখে না পড়ার মতোই। জনস্বার্থে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও স্থানীয় ভাবে তার রূপায়ণ জরুরি।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪