সুতো, না ব্যান্ডেজ?
• সঙ্গের ছবিটি রাঁচি বিমানবন্দরের দোতলায় ৫ নম্বর ডিপারচার গেট-এর সামনে গাঁধীজির মূর্তি এবং খাদি ইন্ডিয়ার দোকানের। গাঁধীজির ধারেকাছে কোনও চরকা নেই। তাঁর গলায় এবং দু’হাতে একগাদা সুতো এমন ভাবে জড়ানো, যা দেখে মনে হয় ভীষণ ভাবে আহত গাঁধীজিকে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। দৃশ্যটি আমার খুব খারাপ লেগেছে।
সুভাষ সরকার
কলকাতা-৩৫
দুই ভাষাই চাই
• মাতৃভাষা, মাতৃ-দুগ্ধের মতো— এ কথা সত্যি। কিন্তু শুধু মাতৃ-দুগ্ধে যেমন পুষ্টি আসে না, শিশুর ছ’মাস বয়সের পর অন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনই ভারতের মতো দেশে, যেখানে এত ভাষাভাষীদের বাস, সেখানে শুধু মাতৃভাষা জানলে কোণঠাসা হয়ে যেতে হবে। এ জন্য দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজি ভাষা শেখা প্রয়োজন, যাতে সে সর্বভারতীয় স্তরে নিজেকে মেলে ধরতে পারে। তা ছাড়া ইংরেজি জানা থাকলে আন্তর্জাতিক স্তরে কোনও ভারতীয়কে হীনম্মন্যতায় ভুগতে হবে না— সমস্ত জগৎ তার হাতের মুঠোয় আসবে।
মাতৃভাষা কী? মায়ের মুখের ভাষাই কি মাতৃভাষা? মনে হয় না। যেখানে জন্মেছি, সেই ভূমির ভাষাই মাতৃভাষা, যে ভাষা কাউকে মুখের খাবার জোগাড় করে দেবে, সেই ভাষাই মাতৃভাষা। এ কারণে প্রত্যেক ভারতীয়র দুটো মাতৃভাষা— তার মায়ের মুখের ভাষা এবং ইংরেজি ভাষা। ইংরেজিকে বাদ দিয়ে আজকের দিনে কিছু হবে না, বাঁচার জন্য এ ভাষা জানতেই হবে। বাংলা বা মাতৃভাষা প্রথম শ্রেণি থেকে, তৃতীয় শ্রেণি থেকে অবশ্যই ইংরেজি এবং সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজিতে কথোপকথন শেখানো হোক। তা হলে এ দেশের ছেলেমেয়েরা সত্যিকারের শিক্ষিত হয়ে উঠবে। মাতৃভাষার সঙ্গে ইংরেজি ভাষার কোনও লড়াই নেই। একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠুক।
অর্চনা ভট্টাচার্য
স্নেহ কানন, ক্রুকেড লেন, চুঁচুড়া, হুগলি
মঙ্গল-আলোক
• ‘বাঙালি সম্ভ্রান্তবংশীয়’ মিনির বাবা ‘কাবুলি মেওয়াওয়ালা’ রহমত-কে দেশে ফেরার টাকা দান করায় মিনির বিয়ের উৎসব-সমারোহের দুটো-একটা অঙ্গ ছাঁটতে বাধ্য হয়েছিলেন— ‘যেমন মনে করিয়াছিলাম তেমন করিয়া ইলেকট্রিক আলো জ্বালাইতে পারিলাম না, গড়ের বাদ্যও আসিল না, অন্তঃপুরে মেয়েরা অত্যন্ত অসন্তোষ প্রকাশ করিতে লাগিলেন; কিন্তু মঙ্গল-আলোকে আমার শুভ উৎসব উজ্জ্বল হইয়া উঠিল’।
দুর্গাপুজোর বাজেট থেকে উৎসব-সমারোহের কিছু অঙ্গ ছেঁটে, ত্রাণ তহবিল গড়ে, অসহায় অত্যাচারিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশের বহু দুর্গাপুজো কমিটি শুধু রবি ঠাকুরের মানবিক সত্তাকেই যথার্থ শ্রদ্ধা অর্পণ করলেন না; মানবতার মঙ্গল-আলোকে দুর্গা পুজোর শুভ উৎসবকেও প্রকৃতই উজ্জ্বল করে তুললেন।
এই বঙ্গ তথা দেশ জুড়ে দুর্গাপুজো থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন উৎসব মাসাধিক কাল ধরে চলতে থাকবে। বাংলা ও ভারতের ‘ধর্মপ্রাণ’ মানুষ ও সংগঠকরা বাংলাদেশের পুজো কমিটিগুলোর মতো কিঞ্চিৎ ত্যাগস্বীকার করে, অসহায় রোহিঙ্গা নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়িয়ে, শারদোৎসব ও অন্যান্য শুভ উৎসবকে মঙ্গল-আলোক দান করে উজ্জ্বল করে তুলতে পারেন না?
কাজল চট্টোপাধ্যায়
সোদপুর
উৎসবে ঐক্য
• ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে ‘ধর্ম যার যার উত্সব সবার’ স্লোগানে হিন্দু-মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এক ঐক্যের বাণী শুনিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থানে মূর্তি ভাঙার খবর শুনে উদ্বিগ্ন আমরা, এ পার বাংলার মানুষরা আশ্বস্ত বোধ করেছিলাম। দুর্গাপুজো আসলে বাঙালির আবেগ, অনেকখানি অহংকারও বটে। এ পূজার ধর্মীয় ভাব উত্সবের নানান রঙিন বাতাবরণের কাছে বেশ ম্লানই দেখায়। সারা ভারত যখন ‘নবরাত্রি’ উত্সবে মন্দিরে মন্দিরে বিশেষ পূজা-অর্চনায় মেতে ওঠে, বাঙালি তখন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে নানান থিমের ভিড়ে সৃষ্টিশীলতা খোঁজে। অনেকের কাছে এটা আদিখ্যেতা মনে হলেও, আমবাঙালি এতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আজ কষ্ট লাগে, বাঙালি হিন্দু-বাঙালি মুসলিমের মধ্যে সীমারেখা টানার প্রয়াস দেখে! আম মুসলিম কিন্তু কোন এক অমোঘ টানে নির্দ্বিধায় এই উত্সবে শামিল হয়। অনেক মুসলিম চাকুরিজীবীকেও এই সময় ছুটি নিতে দেখেছি।
প্রাণের এই পুজোতেও আজ রাজনীতির মারপ্যাঁচ দিব্যি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা বেশ আশঙ্কার। কেন্দ্রীয় সরকারের গাঢ় হিন্দুত্ব আর রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু ভোটের সূক্ষ্ম হিসেব উত্সবকে ম্লান করে দিচ্ছে। সুখের কথা এই, সরল বাঙালি কিন্তু খোশমেজাজে উত্সবকে সত্যিকারের উপভোগ করছে।
ভাস্কর দেবনাথ
নবপল্লি, কারবালা রোড, বহরমপুর
ঠেকের আড্ডা
• সম্প্রতি উদ্বোধন হল কৃষ্ণনগর এ ভি স্কুলের মোড়ে ‘সেন্ট্রালের ঠেক’। আড্ডার ঠেক, তার আবার উদ্বোধন! সবাই একটু কুণ্ঠার সঙ্গে কথাটা পেড়েছিল। প্রস্তাবটা শুনেই শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক এবং আপাদমস্তক ‘কৃষ্ণনাগরিক’ সুধীর চক্রবর্তী এক কথায় রাজি। আর আয়োজকদেরও পোয়া বারোর জায়গায় পোয়া চোদ্দো। আড্ডাপ্রিয় বাঙালির কাছে ঠেক হল প্রাণ খুলে কথা বলার আর অন্যের পিছনে লাগার লাইসেন্সবিহীন জায়গা।
প্রতিটা ঠেকেই এক জন করে সর্বজনীন কাকা বা মামা বা জ্যাঠা থাকে। বয়োজ্যেষ্ঠই হোক আর কনিষ্ঠই, ঠেকে বসে সেই সব মানুষকে প্রত্যেকে কাকা বা মামা বলে সম্বোধন করতে বাধ্য। ঠেকের কাকাকে তার নিজের ভাই কাকা বলে ডাকছে, এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে ১৮নং পটলডাঙা স্ট্রিট আর ৭২নং বনমালী নস্কর লেন তো ঐতিহাসিক হয়ে রয়েছে। সুধীরবাবুর সে দিনের আড্ডায় ঠেকে বসে চা-বিস্কুট খাইয়ে দেবব্রত বিশ্বাসকে দিয়ে গান গাইয়ে নেওয়ার গল্প শোনা গেল। শোনা হল প্রমথনাথ বিশীর ক্লাস নেওয়ার গল্পও। সুললিত কণ্ঠে গান পরিবেশন করলেন শিল্পী সৌগত কুণ্ডু। সাহিত্যিক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাল রবীন্দ্রসংগীত গান, সে দিনের আড্ডায় না থাকলে জানা যেত না।
অনির্বাণ জানা
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
দেশ নয়, সন্দেশ
• বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘স্মৃতির পুজো’ (২৭-৯)-য় অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুজোর লেখার রংতামাশা’ শীর্ষক লেখাটির শেষ দিকে এক জায়গায় লেখক লিখেছেন ‘‘...‘দেশ’ পুজো সংখ্যায় জন্ম বাঙালির প্রিয় ফেলু মিত্তিরেরও।’’ এই তথ্যটি ঠিক নয়। ফেলুদার প্রথম আবির্ভাব ‘দেশ’ পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে নয়, ‘সন্দেশ’-এ। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ‘সন্দেশ’-এ প্রকাশিত হয়েছিল ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’। ‘দেশ’ পূজাবার্ষিকীতে ফেলুদাকে পড়বার জন্য পাঠককে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। সেই বছরেই শারদীয়া ‘দেশ’-এ টানটান রহস্যে ঠাসা ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’-এর জন্য ‘টু মাস্কেটিয়ার্স’ ফেলুদা এবং তোপসেকে পাড়ি জমাতে হয়েছিল গ্যাংটকে। তখনও ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ সম্পূর্ণ হয়নি, কারণ ‘সোনার কেল্লা’ লেখা হয়েছিল তার পরের বছর (১৯৭১) এবং সেই অভিযানেই মানুষকে চমকে দিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন রহস্য-রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু!
শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়
ঢাকুরিয়া, কলকাতা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়