তাঁর স্মরণে দুটি প্রস্তাব
• ভূপেন হাজরিকা কালচারাল ট্রাস্ট এবং কলকাতা অসমিয়া কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন-এর উদ্যোগে সুধাকণ্ঠ ভূপেন হাজরিকার ৯১-তম জন্মজয়ন্তী সমন্বয় দিবস হিসেবে কলকাতায় উদ্যাপিত হয় ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর। এই অনুষ্ঠানে গণশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে মরণোত্তর গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র সমন্বয় সম্মান প্রদান করা হয়। জন্মজয়ন্তী পালন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ভূপেন হাজরিকার টালিগঞ্জের গল্ফ ক্লাব রোড-স্থিত বাসভবনে স্থানীয় বাসিন্দা আর ভূপেন হাজরিকা কালচারাল ট্রাস্টের উদ্যোগে একটি অন্তরঙ্গ আলাপ অনুষ্ঠিত হয়, আর তাঁর স্মরণে ৯১টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ভূপেন হাজরিকার সহশিল্পী তথা গল্ফ ক্লাব রোডের প্রতিবেশীরা মত প্রকাশ করেন যে, বিশ্ববিশ্রুত এই শিল্পীর স্মৃতি তথা তাঁর পদধূলি বিজড়িত গল্ফ ক্লাব রোডের একটি অংশ ভূপেন হাজরিকার নামে নামকরণ হওয়া উচিত। আর ভূপেন হাজরিকার বাসভবনটি, যেটি এখন অন্য ব্যক্তির মালিকানাধীন, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও অসম সরকার উদ্যোগ নিয়ে একটি সংগ্রহশালা স্থাপন করলে খুব ভাল হয়।
অসমে বিভিন্ন নগর ও শহরে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু-র স্মৃতিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও রাস্তাঘাটের নামকরণ করা হয়েছে। ডা. ভূপেন হাজরিকা তাঁর কর্মজীবনের অনেকটা সময় এই কলকাতায় অতিবাহিত করেছেন। তাঁর লেখা, সুর দেওয়া ও গাওয়া অনেক গান বাঙালিদের মুখে মুখে। এই দুটি প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গ আর অসমের জনসাধারণের মাঝে সমন্বয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক বৃহৎ পদক্ষেপ হবে।
মণিশঙ্কর বরদলৈ
কলকাতা-৪৬
চিন-জাপান
• পবিত্র সরকারের নিবন্ধের (‘রাজ্য সরকারই বাংলাকে...’, ৫-৯ ) প্রেক্ষিতে এই চিঠি। আমার ছেলে একটি বিদেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিসার। কোম্পানির ব্যবসায়িক কাজেই তাকে এক বার আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিন দেশে যেতে হয়েছিল। বলা বাহুল্য আমার পুত্র চিনা ভাষা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। সাংহাইয়ে একটি হোটেলে থাকার সময় তাকে হোটেলের চিনা ম্যানেজার একটি কার্ড দেন। এই কার্ডের এক পাশে যে জিনিসটি তার প্রয়োজন, সেটি ইংরেজিতে লেখা আছে। আবার অপর দিকে সেই ইংরেজি শব্দটির চিনা প্রতিশব্দের উল্লেখ আছে। ইংরেজি কথাটির ওপর আঙুল রাখলেই যা প্রয়োজন বিপরীত দিকে লেখা চিনা প্রতিশব্দ পড়ে হোটেল বয়-এর তা বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না।
আমার ছেলের মুখে শুনেছি, সাংহাই এবং এ রকম অনেক চিনা শহরে ইংরেজি-জানা লোকের সংখ্যা নগণ্য। চিন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদির যে পঠনপাঠন হয়ে থাকে, তার সবই চিনা ভাষায় অনূদিত। ইংরেজি এখানে সম্পূর্ণ ব্রাত্য। যে কোনও অফিসে গেলে ইংরেজি-জানা লোক খুবই কম। বিদেশি কেউ এলে তার সঙ্গে কথাবার্তার কাজটা এই স্বল্পসংখ্যক লোকই চালিয়ে নেয়।
প্রসঙ্গত লিখি, এক বার ছুটিতে দিল্লির লালকেল্লায় বেড়ানোর সময় এক চিনা মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয়। ভদ্রমহিলা তাঁর মা’কে ভারত দেখাতে বেরিয়েছেন। তাঁকে বলেছিলাম, আপনাদের দেশে ইংরেজি-জানা লোকের সংখ্যা তো খুবই কম। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘তাতে কী যায়-আসে? ইংরেজি-জানা লোকের সংখ্যা কম হলেও দেশটা তো দিব্যি চলছে।’
চিন ছেড়ে এ বার জাপানে যাচ্ছি। কিছু কাল আগে দূরদর্শনে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। এই কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সময় এক বয়স্ক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। বয়স ষাটের মতো। স্বামী প্রয়াত। এক ছেলে এবং দুই মেয়ের জননী। কুইজ প্রতিযোগিতায় ভদ্রমহিলা এসে নাম লেখান। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি, ওঁর একমাত্র ছেলে জাপানবাসী। কলকাতায় থাকার সময় ভদ্রলোক জাপানি ভাষা ভাল মতো আয়ত্ত করেন। এ দেশে তেমন চাকরির সুযোগ না পেয়ে ভদ্রলোক কলকাতার জাপানি কনসুলেট-এ যাতায়াত শুরু করেন। জাপান থেকে সেখানকার ভাষায় যে চিঠিপত্র আসত, সেগুলি ইংরেজিতে তরজমা করে দেওয়ার ভার তিনি নেন। এর জন্য নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক ছিল। কিছু দিন বাদেই জাপান থেকে হঠাৎ এক প্রস্তাব তাঁর কাছে এসে হাজির। তিনি যদি চাকরি নিয়ে জাপানে যেতে রাজি থাকেন, তা হলে জাপ-সরকার তাঁকে সাদরে গ্রহণ করতে রাজি। সেখানে তাঁর কাজ হবে জাপানি ভাষায় লেখা চিঠি এবং কাগজপত্রের ইংরেজিতে তরজমা করা। তিনি জাপানে থাকলে এই কাজ দ্রুত সাধিত হতে পারে বলেই এই আমন্ত্রণ।
ওঁর মায়ের কাছে শুনলাম ভদ্রলোক জাপানেই সেটল করে গেছেন। তাঁর ঘরনি জাপানি মেয়ে। ওঁর কাছে জানলাম, ছেলেমেয়ে জাপানি জানে এবং বোঝে। ইংরেজির সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।
ভদ্রমহিলা জানালেন, জাপানিরা বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত ইত্যাদি নানা বিষয়ক জ্ঞানভাণ্ডারের সব কিছু জাপানিতে অনুবাদ করে নিয়েছে। জাপানিকে বর্জন করে ইংরেজিকে আঁকড়ে ধরার কোনও অপপ্রয়োগ তাদের নেই।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে নিশ্চয়ই ভাবনা-চিন্তা করছেন।
দেবল দেববর্মা
কলকাতা-৯৭
শাসনেই লাভ
• গৌরব বিশ্বাসকে ধন্যবাদ (‘আনন্দপাঠ না ভাবের ঘরে চুরি’, ১৯-৯)। বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেমন ভাবে পড়াবেন, তা নিয়ে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বাজারচলতি যে ‘আখ্যান’, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা শুধু সমালোচনা নয়, তা রীতিমতো ব্ল্যাসফেমি-র পর্যায়ে পড়ে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ, সেই আখ্যানের প্রবক্তাদের অনেকে সমাজের কাছে প্ৰণম্য আর প্ৰণম্যদের সামনে প্রশ্নাতীত ভাবে নতজানু হওয়াটা বাঙালির বৈশিষ্ট্য।
যা-ই হোক, নিজে শিক্ষক হিসেবে বিগত প্রায় বারো বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি, বিদ্যালয়ে শাসন, প্রয়োজনে ‘মারধর’ না করলে ছাত্র মানুষ হয় না। বাবা-মায়ের তাঁদের পুত্রের হাড়টুকু আস্ত রেখে শরীরের বাকিটার স্বত্ব শিক্ষকের হাতে তুলে দেওয়ার যে কথাটা গৌরববাবু লিখেছেন, তা আজও বাস্তব। কিন্তু মিডিয়ার কল্যাণে মারধর শব্দটা ইদানীং গণপিটুনির মতো শোনায়। বাস্তবটা মোটেও তা নয়।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন টাউন বা গ্রামের স্কুলগুলিতে আমরা যাঁরা শিক্ষকতা করি তাঁরা জানি, ছাত্রসমাজের এক বড় অংশের চূড়ান্ত অসভ্যতা, অমনোযোগ এবং উদাসীনতার মোকাবিলা করে আমাদের পড়াতে হয়। এমতাবস্থায় যদি ছাত্রদের (ছাত্রীদের কোনও প্রকার শারীরিক প্রহারের আমি বিরোধী। সামান্য বকুনিতেই তাদের ক্ষেত্রে কাজ হয়। বাকিদের ক্ষেত্রে অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে বোঝানো উচিত) মনে বকুনি বা মারধরের ভয় দেখিয়ে পড়াশোনা করানো যায়, তাতে ক্ষতি কী? যাঁরা এর বিরুদ্ধে লেখেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনারা নিজেরা ক্লাসরুমে গিয়ে আর পাঁচ জন সাধারণ শিক্ষকের মতো দিনের পর দিন ক্লাস করে দেখুন। দেখি, আপনাদের ভালবাসার তত্ত্ব, উদ্ভাবনী কলাকৌশল প্রয়োগ তত্ত্ব কতটা কার্যকর হয়। সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত অনেকেই এক সময় সকাল-সন্ধে পড়তে বসতে বাধ্য হতেন অভিভাবক আর শিক্ষকের মারধর, বকুনির ভয়ে। তাতে লাভই হয়েছে। পরিশেষে বলি— ‘স্পেয়ার দ্য রড অ্যান্ড স্পয়েল দ্য চাইল্ড’ একটি চিরসত্য। এর বিরোধীরা আসলে শিক্ষার সর্বনাশ করছেন।
সুশোভন সরকার
সোনারপুর
ফুটপাথ চাই
• কৃষ্ণনগর রোড থেকে ভালুকা কানাইনগর বটতলার মধ্যে ফুটপাথ নেই। যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ আমরা ফুটপাথ চাই।
রমেশ বিশ্বাস
দেপাড়া, নদিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়