Letters to Editor

সম্পাদক সমীপেষু: যাওয়ার সময়

উগ্র হিন্দুত্ববাদের জয়ডঙ্কা বাজিয়ে এ রাজ্যে বসবাসকারী সংখ্যালঘু মুসলমানদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করলে তার ফল ভুগবেন প্রতিবেশী দেশের হিন্দু সম্প্রদায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ০০:০৮
Share:

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধটির (‘যদি রাতে ঘুম না আসে?’, ১৭-১) মোদ্দা কথা, “বিজেপিতে যাওয়ার হলে এমনিই যান, গটগট করে যান। এত সাফাই গাওয়ার বা পিছুটানে ভোগার দরকার নেই”— অনেকের অন্তর হতে উৎসারিত, সপাট জবাব। টিভির আলোচনায় দলবদলুদের কাঁদুনি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। তাঁদের প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, যে দলে নাম লিখিয়ে, এক বার-দু’বার জিতে, মানুষের হয়ে কাজ করার মহান যজ্ঞে ব্রতী হয়েছিলেন, তার কি মতাদর্শ বলে একটা বস্তু ছিল না? এখন দলে যথেষ্ট সমাদৃত হচ্ছেন না, পাত্তা পাচ্ছেন না, কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, ইত্যাদি অসার কথা বলে নব্য-দলের জয়গান গাইতে আপনাদের রুচিতে বাধে না?

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের সুরে আওয়াজ তুলে এখন দলবদলুরা নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) মান্যতা প্রদানের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনও করছেন। অসমের লক্ষ লক্ষ হিন্দু বাঙালি এবং মুসলমান স্রেফ একটি কাগজ দর্শাতে পারেননি বলে বিদেশির তকমা পেয়েছেন। অথচ, তাঁরা ভোটার-আধার-রেশন কার্ডধারী। তা হলে এত দিন তাঁরা কি বিদেশি হিসেবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন? “সেই ভোট তা হলে খারিজ করতে হয়। সরকারকেও খারিজ করতে হয়”— নগ্ন সত্যটা উচ্চারণ করেছেন পরমব্রত। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসঙ্গটিও যথার্থ। উগ্র হিন্দুত্ববাদের জয়ডঙ্কা বাজিয়ে এ রাজ্যে বসবাসকারী সংখ্যালঘু মুসলমানদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করলে তার ফল ভুগবেন প্রতিবেশী দেশের হিন্দু সম্প্রদায়। ধর্মভেদ ভুলে পরস্পরকে কাছে টেনে নেওয়ার যে পরম্পরা দুই দেশে বহমান, সেখানে দাঁড়ি টানবে উগ্র সংখ্যাগুরুবাদ।

পরমব্রতের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত তাঁর শিল্পজগতের কতিপয় দলবদলুর দিকে, এ কথা সহজেই অনুমেয়। এঁরা ঠিক সময়ে নাড়ি টিপে বুঝতে পেরেছেন, যাওয়ার সময় হয়েছে। এখানকার প্রাপ্তির ঝুলি ভরপুর। অতএব ক্ষমতায়নের রাজনীতি এবং প্রতিপত্তির খেলা অনুধাবন করে দলবদল। কিন্তু মধ্যিখানের এই নাটক, এত প্যানপ্যানানির কী প্রয়োজন? এমনিই যান না! চলে তো যাওয়াই যায়। কিন্তু, যাওয়াটা যেন ‘কেমন দিলাম’ গোছের না হয়।

Advertisement

ধ্রুবজ্যোতি বাগচি

কলকাতা-১২৫

সামাজিক লড়াই

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, রাজনীতি বা গণতন্ত্রের পরিসর শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভোটের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। ২০১৪ সালে প্রথম পর্বের শাসনকালে শুধু সুস্থ প্রশাসন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও ‘অচ্ছে দিন’-এর সঙ্গে দীনদয়াল-গাঁধীর ককটেল মিশিয়ে নরম হিন্দুত্বের আবহ তৈরি করেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালের পর কালক্ষেপ না করে সাভারকরের পথে হিন্দুরাষ্ট্রের স্তম্ভগুলি নির্মাণ করে যাচ্ছে। ৩৭০ ধারা বাতিল, সিএএ-এনআরসি, রামমন্দির নির্মাণ— গত এক বছর এই বীভৎস কর্মকাণ্ড অচ্ছে দিন-এর স্লোগান মানুষের মন থেকে মুছে দিতে পেরেছে। উগ্র জাতীয়তাবাদ আর পাকিস্তান-বিরোধিতার নির্ঘোষে দেশবাসী ভুলতে বসেছে নোটবন্দি কিংবা লকডাউনে ঘরছাড়া শ্রমিকের দুঃসহ যন্ত্রণা। সংসদীয় পথ ধরেই উগ্র ফ্যাসিবাদী সমাজচেতনার দূষণের সঙ্গে আগ্রাসী অর্থনীতির সংযোগ ঘটাচ্ছে দ্বিতীয় শাসনপর্বে বিজেপি। তাই এ বার অভিন্ন নাগরিক বিধির মতো কঠোর হিন্দুত্বের সর্বনাশা কৌশলগুলিই একমাত্র অস্ত্র। ভোট শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক লড়াইও বটে। আমাদের গণতান্ত্রিক অবস্থান ভোটের চেয়েও সমাজে অনেক বেশি, এ কথাটা স্পষ্ট করে বলেছেন পরমব্রত।

পার্থসারথি দাশগুপ্ত

রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

প্রহসন

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধটি পড়ে মুগ্ধ হলাম। হ্যাঁ, সুস্থ সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার দায় ও দায়িত্ব অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠের বেশি, বরং তার উল্টোটা আশা করলেই তা হয়ে ওঠে সংখ্যালঘুর বশ্যতা দাবি করার অসুস্থ এবং অগণতান্ত্রিক আবদার। বিশ্বাস করি, সাতে-পাঁচে না-থাকা সাধারণ মানুষ হাওয়া বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রং বদলানো বিপ্লবীদের ‘মানুষের জন্য কাজ করার’ আকুল তাড়নাকে কমিক রিলিফ হিসেবেই গ্রহণ করবেন। পরমব্রত নতুন কথা বলেননি, কিন্তু এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যুক্তি, বোধ, বিচক্ষণতা ও মানবিকতা-সঞ্জাত সহজ কথাগুলি সহজ করে বলার কঠিন কাজটি করেছেন।

তরুণ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-৪২

ছাতা

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের মনের কথাই তুলে ধরেছেন। যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করছেন, তাঁরা বলছেন, তৃণমূলে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। এই দলে থেকে মানুষের জন্য কাজ করা যায় না। মানুষের জন্য কাজ করতেই আজ তাঁরা বিজেপির ছাতার তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। সত্যিই, মানুষের জন্য এই নেতাদের কত দরদ! কিন্তু প্রশ্ন হল, মানুষের জন্য কাজ করতে হলে রাজনৈতিক দলে থেকেই করতে হবে, এ কথা কোথায় লেখা আছে? বাম, কংগ্রেস, এসইউসি-ও তো রাজনৈতিক দল। এই সব দলে কেউ যোগদান করে তো মানুষের সেবার কথা বলছেন না! মানুষের জন্য কাজ করতে হলে একমাত্র বিজেপিতে গিয়েই করতে হবে? আসলে যে দলে থেকে সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে, সেখানেই ভিড়টা হওয়া স্বাভাবিক। মানুষের সেবা, দেশের জন্য কাজ— ও সব ছেলেমানুষি গল্প।

রতন চক্রবর্তী

উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

দাম চড়ছে

চার দিকে ভোটের দামামা। এ দিকে মধ্যবিত্তের সংসারের বারোটা বেজে গিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। প্রায় প্রতি দিন সর্ষের তেল, চাল, ডাল, আটা, সুজি ইত্যাদির দাম বেড়েই চলছে। রান্নার গ্যাস, পেট্রল, ডিজ়েলও দামের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সরকারের এই নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। গরিব মানুষের জীবনযন্ত্রণার কথা তারা কি অনুভব করছে?

স্বপন আদিত্য কুমার

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

অশ্রাব্য

পশ্চিমবঙ্গের ভোট যত এগিয়ে আসছে, দলবদলু নেতাদের তড়পানিও তত বাড়ছে। উচ্চ মাপের নেতারা আবার জানিয়ে রাখছেন, দল ছাড়ার অপেক্ষায় অনেকেই। দেশে দলত্যাগ নিবারণে কঠোর আইন না-থাকায় সার্কাস দেখতে হচ্ছে জনগণকে। সবচেয়ে বিরক্ত লাগছে, প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের উদ্দেশে কাদা ছোড়া আর তরজাপর্ব।

এহেন কুৎসিত দ্বন্দ্বে সাধারণ নাগরিক বিরক্ত, পীড়িত বোধ করছেন অনেকেই। কারণ, ভব্যতাহীন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত নন তাঁরা। জনগণের এখন জিজ্ঞাসা, দেশে বা রাজ্যে আইন-প্রশাসন বলে কি কিছুই নেই? নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, একের পর এক জনসভা, রোড-শো চলতে থাকবে। এই খেউড় বাড়বে আরও। নির্বাচন কমিশনের হাতে বিশেষ ক্ষমতা থাকলেও, তা কার্যত কাজে লাগে না। নিরপেক্ষ পদক্ষেপ করার সাহস সদস্যদের আছে কি না, সন্দেহ আছে। কিন্তু জনগণ এ সব সহ্য করতে বাধ্য হবে কেন? ব্যক্তিগত আক্রমণ, গালাগালি না-শোনার অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত হবে?

এখন রাজনীতি মানেই ভোটের পাটিগণিত। এই ‘ভোট’ নামক হাস্যকর উৎসবে শামিল হতে হবে জনগণকে। কিন্তু কোন দলকে ভোট দেবেন তাঁরা? বেশির ভাগ প্রার্থীই ‘চোর’, ‘তোলাবাজ’ বা অন্য কিছু। নিরপেক্ষ থাকার রাস্তাও বন্ধ। ‘নোটা’-কে রাখা হয়েছে গুরুত্বহীন করে। কী অবিশ্বাস্য অসহায়তা!

সবুজ সান্যাল

ধাড়সা, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement