কুলভূষণ যাদব। -ফাইল ছবি।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে প্রহসনে পরিণত করার খেলা শুরু করল পাকিস্তান। ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্তানের জেলে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিক তথা ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মী কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের কর্তাদের দেখা করতে দেওয়ার যে নির্দেশ দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালত দিয়েছে, সে নির্দেশকে ঘুরপথে অকেজো করার চেষ্টায় ইসলামাবাদ। অর্থাৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিসরে যে চূড়ান্ত দ্বিচারিতার জন্য পাকিস্তানের ‘খ্যাতি’ রয়েছে, সেই দ্বিচারিতা আবার পূর্ণাঙ্গ স্বরূপে নৃত্যরত।
কুলভূষণ যাদবকে গ্রেফতার করার পর থেকেই পাকিস্তান এক নাগাড়ে গোটা বিশ্বকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছিল যে, ধৃত ব্যক্তি ভারতীয় গুপ্তচর। পাকিস্তানের সামরিক আদালত সে তত্ত্বে সিলমোহরও দিয়েছিল এবং কুলভূষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পাক তত্ত্বে বিশ্ব যে বিশ্বাস রাখেনি, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়েই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কুলভূষণকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের জেলে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের দেখা করতে না দিয়ে পাকিস্তান যে ভিয়েনা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে, সে কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। অবিলম্বে কূলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের সাক্ষাতের বন্দোবস্ত করার জন্যও পাকিস্তানকে নির্দেশ দিয়েছে ওই আদালত।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মতামত যে দিশাতেই যাক, পাকিস্তান রয়েছে পাকিস্তানেই। ভিয়েনা চুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন বা প্রথা, ইতিবাচক কূটনীতি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক— পাকিস্তানের কাছে এসব খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দশকের পর দশক ধরে জঙ্গি কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দেওয়া, নিরন্তর বিশ্বশান্তির বিপরীতে কাজ করে যাওয়া, ক্রমশ সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক রাজধানীতে পরিণত হওয়া পাকিস্তান এখন কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের সাক্ষাতের বিষয়টাকে শর্তাধীন করে তুলতে চাইছে। পাক সরকারের কোনও প্রতিনিধির সামনে কুলভূষণের সঙ্গে কথা হবে ভারতীয় কূটনীতিকদের এবং গোটা সাক্ষাৎ পর্ব সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে থাকবে— এইভাবে সাক্ষাৎ করতে বলা হচ্ছে ভারতীয় কূটনীতিকদের। কিন্তু কনসুলার অ্যাকসেসের অর্থ এই নয় মোটেই। ভারতীয় কূটনীতিকরা পাক জেলে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে একান্তে কথা বলবেন— রীতি এমনটাই। তাই পাকিস্তানের চাপানো অযৌক্তিক এবং অনৈতিক শর্ত ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাস মানেনি। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কেও পাকিস্তান যে ভাবে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা করছে, ভারতীয় দূতাবাস তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং পাক নজরদারির আওতায় থেকে কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: পাক শর্তে আপত্তি, কুলভূষণ-কূটনীতিক সাক্ষাৎ হল না
এই দৃঢ়তা দেখানো জরুরি। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা পাওয়া পাকিস্তান এখন আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নানা বিষয়ে কৃপাপ্রার্থী হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রথা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি যে তারা এখনও নির্লজ্জের মতো লঙ্ঘন করে চলেছে, তা গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া জরুরি। তাই পাকিস্তানের চাপানো শর্ত মুখের উপর প্রত্যাখ্যান করে ভারত উচিত কাজই করেছে। আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কুলভূষণ যাদবকে নিয়ে টানাপড়েন যে ভাবে জিইয়ে রাখতে চাইছে পাকিস্তান, তার বিরুদ্ধে নয়াদিল্লি কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে নিয়ে যাবে বলেই গোটা ভারত আশা করছে।