প্রতীকী ছবি।
যত বড় তদন্তই হোক, যত উচ্চ পর্যায়েরই হোক, সজল কাঞ্জিলালকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। সুতরাং চোর পালানোর পরে এই বুদ্ধি বাড়াকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখতে তো পারছিই না। এই মর্মান্তিক ও বীভৎস অকালমৃত্যুর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের কঠোর শাস্তির দাবি করছে।
এ আবার কী ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা! মেট্রো কোচের দরজায় ছোটখাটো কিছু আটকালে সেন্সরে তা ধরা পড়বে না, আটকে থাকা বস্তু আর আধখোলা দরজা নিয়েই ছুটবে ট্রেন— এ কথা নাকি জানাই ছিল। মোটরম্যানদের একাংশ তেমনই বলেছেন। সে ক্ষেত্রে তো এটাই ধরে নিতে হবে যে, এই নতুন রেকগুলোয় প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র নয়। সব জেনেশুনেও কী ভাবে তা হলে এই রেকগুলো চালানো হচ্ছে? যথেষ্ট পরীক্ষানিরীক্ষার পরেই নিশ্চয়ই এই রেকগুলোতে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। মোটরম্যানদের একাংশ যা বলছেন, তাতে এও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, দরজার সেন্সরের দুর্বলতার কথাও আগেই জানা গিয়েছিল। সব জেনেও এই রেক চালানো হল কী ভাবে? যাত্রী নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুর্বলতা না কাটিয়ে রেকগুলো চালু করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেট্রো কর্তৃপক্ষ নিতে পারলেন কী ভাবে? চরম কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কিছু বলতে পারছি না একে।
কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি নিজে কলকাতা মেট্রোর এই দুর্ঘটনার তদন্তে আসছেন বলে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী শনিবার কলকাতা মেট্রোকে হতে হয়েছে, তাকে মোটেই হালকা ভাবে দেখছে না রেল। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টাকে দেখা হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হচ্ছে। ভাল কথা, রেল কর্তৃপক্ষ যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্তের পথে হাঁটছেন সে ভাল কথা। কিন্তু যে ক্ষতিটা হয়ে গিয়েছে, রেলের এই সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কি সেই ক্ষতিটাকে মুছে দিতে পারবে কোনও ভাবেই? পারবে না। সজল কাঞ্জিলালের মৃত্যুর খেসারতটা কাঞ্জিলাল পরিবারকেই দিতে হবে, যাঁদের গাফিলতিতে বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এ ঘটনা ঘটল ক্ষতির বোঝাটা কিন্তু তাঁদের বহন করতে হবে না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এখন তো সন্দেহ আরও বেড়ে যাচ্ছে, কলকাতা মেট্রোর পরিস্থিতি নিয়ে ননা রকম সংশয় তৈরি হচ্ছে। একটা ছিদ্র ধরা পড়েছে মর্মান্তিক মৃত্যুটার জেরে। আরও কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী ছিদ্র রয়ে গিয়েছে, সে তো আমাদের কারও জানা নেই। আরও কোন কোন দুর্বলতাকে অবজ্ঞা-অবহেলা বা ঢাকাচাপা দিয়ে রেখে মেট্রো ছুটছে রোজ, যাত্রী সাধারণের পক্ষে তা বোঝা তো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তা হলে কি আবার কোনও সজল কাঞ্জিলালের মর্মান্তিক পরিণতির জন্য আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হবে পরবর্তী কোনও একটা ছিদ্র বন্ধ হওয়ার জন্য?
শুধু তদন্ত করলে হবে না। শুধু গাফিলতির উৎস খুঁজে বার করে এবং দোষীদের শাস্তি দিয়ে দায় সারলেও চলবে না। যাত্রী নিরাপত্তার সমস্ত খুঁটিনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আবার খতিয়ে দেখতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে। তার পরে সুস্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে, যাত্রীদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণ নিশ্ছিদ্র। রেলের তরফ থেকে এই ঘোষণা অত্যন্ত জরুরি এবং আবশ্যিক। যে কোনও পরিষেবা প্রদানকারীর তরফ থেকেই পরিষেবা গ্রহীতার প্রতি এই প্রতিশ্রুতি থাকা বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থাও যদি সেই প্রতিশ্রুতিটুকু দিতে না পারে, তা হলে ক্রমশ বাড়তে থাকা বেসরকারি পরিষেবা ক্ষেত্রের কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারব?