JK Rowling

অভিনব প্রকাশ

উপন্যাসটি প্রকাশের ক্ষেত্রেও রাওলিং অভিনব পন্থা অবলম্বন করিয়াছেন। অতীব জনপ্রিয় সাহিত্যিকের ক্ষেত্রে যাহা কল্পনাও করা যায় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০০:০১
Share:

জোয়ান ক্যাথলিন রাওলিং

ইংরেজি ‘ফেমাস ফর বিইং ফেমাস’ শব্দবন্ধটি জোয়ান ক্যাথলিন রাওলিং সম্পর্কে খাটে না। ইদানীং কালে তাঁহার ন্যায় সফল সাহিত্যিকের তুলনা মেলা ভার। হ্যারি পটার সিরিজ়ের কাহিনি লিখিয়া তিনি জগৎপ্রসিদ্ধ। তাঁহার রচিত এক একটি উপন্যাস লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হইয়াছে। এমনকি, প্রকাশ হইবামাত্র উপন্যাস ক্রয় করিবার নিমিত্ত নির্দিষ্ট তারিখের পূর্ব রাত্রি হইতে ক্রেতাগণ বিপণির সামনে প্রবল শীত উপেক্ষা করিয়া লাইন দিয়াছেন, এমন সংবাদও আমাদের দৃষ্টি এড়ায় নাই। যে সংবাদ আমরা পাই নাই, তাহা হইতেছে এই যে, রয়্যালটি বাবদ কী পরিমাণ অর্থ এই সাহিত্যিক উপার্জন করিয়াছেন। তথাপি পরিমাণটি যে পাহাড়প্রমাণ হইবে, তাহা অনুমান করিতে কিছু মাত্র কষ্ট হয় না। তিনি এক জন সেলেব্রিটি সাহিত্যিক। ঐন্দ্রজালিক কাহিনির আকর্ষণক্ষমতা তাঁহার পূর্বে আর কাহারও লেখনীতে এমন করিয়া ধরা পড়ে নাই। জনপ্রিয়তা যদি সাহিত্যিকের দক্ষতার মানদণ্ড হয়, তাহা হইলে রাওলিং যে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী, সেই কথা মানিতে হয়।

Advertisement

হ্যারি পটার সিরিজ়ে রাওলিং আর উপন্যাস রচনা করিবেন না, এবম্বিধ ঘোষণায় যাঁহারা ব্যথিত হইয়াছিলেন, তাঁহাদের নিকট খুশির সংবাদ অবশ্যই লেখিকার সাম্প্রতিক ঘোষণা। তিনি জানাইয়াছেন, হ্যারি পটার কাহিনি যাহাদের খুব প্রিয় ছিল, সেই শিশুদের জন্য তিনি এক নূতন উপন্যাস রচনা করিয়াছেন। আগামী নভেম্বরে পুস্তকাকারে প্রকাশিতব্য উক্ত উপন্যাসটির নাম ‘দি ইকাবগ’। ইন্দ্রজাল এই নূতন উপন্যাসের বিষয়বস্তু নহে। রাওলিং জানাইয়াছেন, সত্য কী এবং ক্ষমতাবানেরা কী রূপে তাহার অপব্যবহারে প্রবৃত্ত হন, তাঁহার নব্য উপন্যাসের উপজীব্য তাহাই। বিষয় দুইটি যে প্রাপ্তবয়স্কদিগের, শিশুদের সুপাচ্য নহে, তাহা বলাই বাহুল্য। তথাপি রাওলিং আপন লেখনীশক্তিবলে তাহাকে কী রূপে শিশুপাঠ্য করিয়া তুলেন, তাহা দেখিবার বিষয়। তিনি জানাইয়াছেন, শিশুপাঠ্যের পরিবর্তে প্রাপ্তবয়স্কদের নিমিত্ত একটি উপন্যাস রচনা তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল, যদিও ‘ইকাবগ’-এর চিন্তা পুরাতন। প্রাপ্তবয়স্কদের নিমিত্ত উপন্যাসটি লিখিতে শুরু করিবার পূর্বে তিনি উক্ত উপন্যাসের খসড়া রচনায় কিয়দ্দূর অগ্রসর হইয়াছিলেন। তৎপরে ‘ইকাবগ’ শিকায় তুলিয়া রাখিয়া রাওলিং প্রাপ্তবয়স্কদিগের উপন্যাসটি রচনায় মন দেন। তাহা হইলে ‘ইকাবগ’ আসিয়া পড়িল কী করিয়া? ইহার পিছনে কোভিড-১৯’এর প্রাদুর্ভাব হেতু লকডাউনের ভূমিকা আছে। লকডাউন পর্ব আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার পক্ষে কষ্টকর হইয়াছে সন্দেহ নাই, তন্মধ্যে শিশুরা অসহনীয় দুঃখে পড়িয়াছে। গৃহে আবদ্ধ জীবনযাপন তাহাদিগের পক্ষে শাস্তির সমতুল। লকডাউন পর্বে রাওলিং ‘ইকাবগ’-এর কাহিনি তাঁহার সন্তানদিগকে শুনান। উক্ত কাহিনি তাহাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাহারা কিছু পরিমার্জনের পরামর্শ দিলে রাওলিং তাহাও গ্রহণ করেন। এই প্রক্রিয়ায় উপন্যাসটি লেখা হয়।

উপন্যাসটি প্রকাশের ক্ষেত্রেও রাওলিং অভিনব পন্থা অবলম্বন করিয়াছেন। অতীব জনপ্রিয় সাহিত্যিকের ক্ষেত্রে যাহা কল্পনাও করা যায় না। নূতন উপন্যাস ছাপার পূর্বে কাজ়ুয়ো ইশিগুরো কিংবা সলমন রুশদি কি কখনও সেই উপন্যাসটি ইন্টারনেটে প্রকাশ করিবেন? উপন্যাস রচনা এক শ্রমসাধ্য কাজ। লেখক সেই শ্রমের বিনিময়ে কাঞ্চনমূল্যের প্রত্যাশা করিয়া থাকেন। ইহাতে অন্যায় কিছু নাই। রাওলিং সমকালীন সাহিত্যিকগণ অপেক্ষা এক কাঠি আগাইয়া গিয়াছেন। নভেম্বর মাসে প্রকাশিত হইলে রাওলিংয়ের নূতন উপন্যাসটি যে বিনামূল্যে বিতরিত হইবে না, তাহা না বলিলেও চলে। তথাপি লেখিকা তাঁহার প্রকাশিতব্য উপন্যাসের এক অধ্যায় দুই অধ্যায় করিয়া ইন্টারনেটে আগাম পোস্ট করিবেন। এই রূপে আগ্রহী পাঠকগণ পুরা উপন্যাসটি বই হিসাবে বাজারে আসিবার পূর্বেই পড়িয়া ফেলিতে পারিবেন। তাহার পরে ছাপা বই কেনা অথবা না কেনা পাঠকদের অভিরুচির ব্যাপার। শ্রমের বিনিময়ে কাঞ্চনমূল্য জলাঞ্জলি দিবার এ হেন সাহস প্রশংসনীয়। ইহাই শেষ নহে। রাওলিং জানাইয়াছেন, ইন্টারনেটে কিস্তিতে উপন্যাস পড়িবার কালে শিশু পাঠকগণ কাহিনির মধ্যে মধ্যে চিত্রায়ণেরও সুযোগ পাইবেন। এই চিত্রায়ণের এক প্রতিযোগিতা হইবে এবং মনোনীত চিত্রগুলি ছাপা বইয়ের শোভাবর্ধন করিবে। ইহাকেই বোধহয় ‘পার্টিসিপেটরি রিডারশিপ’ বলা যায়। দ্বিবিধ অভিনবত্বের সন্ধান দিতেছেন রাওলিং। সাধুবাদযোগ্য।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement