Pool Car Accident

ছেলেখেলা

দুর্ঘটনামাত্রেই আকস্মিক। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে স্কুলের পুলকারের দুর্ঘটনাকে সেই গোত্রে ফেলা মুশকিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০২
Share:

মাত্র আট বৎসর বয়সেই দুই বালকের অভিজ্ঞতা হইয়া গেল ভেন্টিলেশন-এ দিনযাপন করিবার। তাহারা জানিয়া গেল ইকমো (একস্ট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন) কী, ‘ট্র্যাকিয়োস্টমি’ কাহাকে বলে। তাহাদের ক্ষুদ্র, কোমল জীবনে এবংবিধ কঠিন শব্দগুলি যে ঝড়ের বেগে অনুপ্রবেশ করিল, তাহার মূলে হুগলির পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনা। অবশ্য ইহাকে ঠিক ‘দুর্ঘটনা’ বলা উচিত নহে। ইহা চূড়ান্ত অবহেলা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার একটি উদাহরণমাত্র, যাহার মূল্য চোকাইতে হইতেছে অসহায় কিছু স্কুলপড়ুয়াকে। দুই ছাত্র গুরুতর আহত। সত্য বলিতে, বাকিরা বরাতজোরে বাঁচিয়াছে। বস্তুত, প্রতি দিন যে অসংখ্য ছেলেমেয়ে পুলকারে চাপিয়া স্কুলে যায় এবং ফিরে, তাহাদের প্রাণও বরাতেরই হাতে। কারণ, তাহাদের রক্ষা করিবার দায়িত্ব যাহাদের, সেই প্রশাসন তাহাদের নিরাপত্তার কথা ভাবিয়াও দেখে না। কোনও প্রশাসনের যদি একটিমাত্র দায়িত্ব থাকে, তবে তাহা শিশুদের রক্ষা করা, কারণ শিশুরাই সর্বাপেক্ষা অসহায়, আত্মরক্ষার ক্ষমতাহীন। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন সেই দায়িত্ব স্বীকার করে নাই।

Advertisement

দুর্ঘটনামাত্রেই আকস্মিক। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে স্কুলের পুলকারের দুর্ঘটনাকে সেই গোত্রে ফেলা মুশকিল। যাহা বারংবার হইতে থাকে, পূর্বের ঘটনা হইতে শিক্ষা লইয়া যাহা রুখিবার কোনও চেষ্টা করা হয় না, তাহাকে ‘সাধারণ দুর্ঘটনা’ বলা চলে না। তাহা জঘন্য অপরাধ। শিশুদের জীবন লইয়া খেলা করিবার ন্যায় অপরাধের কোনও ক্ষমা নাই। অবাক হইতে হয়, যে গাড়ির সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ডাহা ফেল করিবার কথা, যাহার মালিকের খোঁজ নাই, চালকও নির্দিষ্ট দূরত্বের পর বদলাইয়া যায়, সেই গাড়ি এত দিন চলাচল করিতেছিল কী উপায়ে? অবশ্য রাজ্যের পুলকারগুলির অবস্থা জানিলে অচিরেই সেই চমক কাটিবে। নিয়ম ভঙ্গ করাই সেখানে দস্তুর। অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় কাগজ, অনুমতি ছাড়া অবৈধ ভাবে গাড়িগুলি শিশুদের লইয়া যাতায়াত করে। গাড়ির নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। কার্যত স্কুলপড়ুয়াদের জীবন লইয়া এক ট্রাপিজ়ের খেলা চলিতেছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত হইতে প্রায়শই যে পুলকার দুর্ঘটনাগুলির কথা শুনা যায়, তাহা এই চূড়ান্ত অপদার্থতারই সামান্য কিছু নিদর্শনমাত্র।

সন্তানকে এই ভাবে নিয়তির হাতে সঁপিয়া দেওয়া ভিন্ন অনেক অভিভাবকেরই গত্যন্তর নাই। বড়জোর তাঁহারা গাড়ির কাগজপত্র দেখিতে চাহিতে পারেন। কিন্তু কিছু অতিরিক্ত লাভ এবং পুলিশি হয়রানি এড়াইতে প্রায়শই যে অসততার আশ্রয় লওয়া হয়, তাহা অভিভাবকদের অনভিজ্ঞ চোখ ধরিতে পারে না। এই ক্ষেত্রে মালিক-চালকদের লাগামটি টানিয়া রাখিবার কথা ছিল পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের। প্রশ্ন যেখানে শিশুর জীবনের, সেখানে সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে সমস্ত পুলকারের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট নিয়মাবলি প্রস্তুতের এবং তাহা পালিত হইতেছে কি না, সেই বিষয়ে কঠোর নজরদারির প্রয়োজন ছিল। তাহা হয় নাই। নিয়ম নিয়মের স্থানেই আবদ্ধ রহিয়াছে। পুলিশকে সন্তুষ্ট করিতে পারিলেই নিয়ম হইতে মুক্তির পথও খোলা আছে। কোন পথে কারচুপি হয়, পুলিশ-পরিবহণ দফতর তাহা যথেষ্ট জানে। প্রতি বারই দুর্ঘটনা ঘটিবার পর পুলিশ শীতঘুম ভাঙিয়া উঠে, দুই-চারটি ধরপাকড় করে, কর্তারা বুলি আওড়ান, নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, এবং সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা হইতে দুর্ঘটনার খবরটি সরিয়া যাওয়ামাত্র সকলেই ঘুমাইয়া পড়েন। পুলিশ-প্রশাসনের কাজ শুধুমাত্র আটক করা এবং দুর্ঘটনার পর সহানুভূতি জ্ঞাপনেই শেষ হইয়া যায় না। দুর্ঘটনা যাহাতে আর না ঘটে, তাহা নিশ্চিত করাও তাহাদেরই দায়িত্ব। আরও কত দুর্ঘটনা ঘটিলে তবে সেই দায়িত্বজ্ঞান জাগ্রত হইবে, ভাবিলে আতঙ্ক হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement