Editorial news

আগল ভেঙে বেরিয়ে এসে চমকে দিলেন শাহিন বাগের মুসলিম মহিলারা

এরা সম্পূর্ণ পুরুষনির্ভর, এত দিন এ দেশের মুসলিম মেয়েদের সম্বন্ধে এই রকমই একটা ধারণা সমাজে প্রচলিত ছিল।

Advertisement

রোশেনারা খান

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০১:৩০
Share:

এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আট থেকে আশি, বিভিন্ন বয়সের মহিলারা।

নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে দিল্লির শাহিন বাগের আন্দোলন। আজ শাহিন বাগ এই আন্দোলনের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এই অবস্থান আন্দোলনকারীদের শুধু ‘মহিলা’ বললে সম্পূর্ণ পরিচয় দেওয়া হবে না, এরা বেশির ভাগই মুসলিম মহিলা। এ দেশের মুসলিম মহিলারা পর্দানশীন, এরা অবরোধ প্রথার শিকার, এই কারণেই এরা এ দেশের নারী প্রগতির মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন। এরা সম্পূর্ণ পুরুষনির্ভর, এত দিন এ দেশের মুসলিম মেয়েদের সম্বন্ধে এই রকমই একটা ধারণা সমাজে প্রচলিত ছিল।

Advertisement

আজ যে ভাবে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মুসলিম মহিলারা আগল ভেঙে বেরিয়ে এসে দিল্লির শাহিন বাগে অবস্থান বিক্ষোভে একত্রিত হয়েছে, তা চমকে দেওয়ার মতো বইকি! সাধারণ পরিবারের গৃহিণীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে, ভাবা যায়? কিন্তু এমনটাই ঘটে চলেছে।

আজ এই কালা আইনের প্রতিবাদে কলকাতার পার্ক সার্কাসের প্রতিবাদ মঞ্চ হয়ে উঠেছে আর এক শাহিন বাগ। এখানে সামিল হয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আট থেকে আশি, বিভিন্ন বয়সের মহিলা। মুর্শিদাবাদ জেলার মহিলা বিড়ি শ্রমিকরা রোজগার বন্ধ করে ছুটে এসেছেন এখানে। তাঁদের মধ্যে একই পরিবারের দাদি, মা, মেয়ে, তিন প্রজন্ম এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ ভাবে এদের রুখে দাঁড়াতে আগে কখনও দেখা যায়নি। অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়লে মানুষ বুঝি এ ভাবেই মরিয়া হয়ে ওঠে। নারীর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: আমার ভেতরের নারীকে গড়া আজও শেষ হয়নি

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মুসলিম মহিলাদের আগল ভাঙা প্রতিবাদ, চমকে দেওয়ার মতো বইকি!

শাহিন বাগে অবস্থান আন্দোলনেও শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। এই ধরনের আন্দোলনে শিশুদের সামিল করা বেআইনি কাজ জেনেও দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ছেড়ে আসা সম্ভব নয়, তাই দিল্লির এক আন্দোলনকারী নাজিয়া তাঁর চার মাসের শিশুসন্তান মহম্মদ জাহানকে কোলে নিয়েই রোজ শাহিন বাগে আসতেন। দিল্লির হাড় হিম করা শীতে শিশুটি ঠাণ্ডা লেগে মারা যায়। সন্তান হারিয়েও সে মা হার স্বীকার করতে নারাজ। জানিয়েছেন, আন্দোলন তিনি বন্ধ করবেন না, যত ক্ষণ না সরকার তার কথা ফিরিয়ে না নেয়।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আজ মহিলাদের বাধ্য করছে পথে নেমে প্রতিবাদ করতে।

শাহিন বাগের আন্দোলনকে অন্য মাত্রা দিয়েছে আসমা খাতুন, বিলকিসজি ও সরবরিজি, এই তিন দাদি। ৯২ বছর বয়সি আসমা খাতুনের বক্তব্য, সরকার তাদের পায়ের তলার জমি কেড়ে নিতে চাইছে, যেখানে তার সাতপুরুষের বাস, কাগজ কোথায় পাব? বন্যায়, ঘরে আগুন লেগে, সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার জন্য যদি আমার ছেলে ও নাতিকে দেশ ছাড়া করার কথা বলে, তবে আমার কী হবে? বুড়ো বয়সে দেখবে বলেই না কষ্ট করে ছেলেকে খাইয়ে পরিয়ে বড় করেছি। সরবরিজী সখেদে জানালেন, বাবরি মসজিদ ভেঙেছে কিছু বলিনি, তালাক আইন নিয়ে কিছু বলিনি, নোট বাতিল করেছে, তখনও চুপ থেকেছি। কিন্তু এ বার সরকার যা করতে চলেছে, তা মেনে নেওয়া কোনওমতেই সম্ভব নয়, তাই আমরা এই বয়সে পথে নামতে বাধ্য হয়েছি।

আরও পড়ুন:

ওরা তোমার লোক? অ মা, আমরা কার লোক তবে?

নারী-পুরুষ এবং বিভাজনের বোধ রোজ ভাঙছে-গড়ছে বলিউড

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আজ মহিলাদের বাধ্য করছে পথে নেমে প্রতিবাদ করতে। এই আন্দোলনের সঙ্গে কোথায় যেন ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুতোকলের মহিলা শ্রমিকরা সম কাজে সম মজুরি, ভোটাধিকার ও দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ না করার দাবিতে যে পথে নেমে আন্দোলন করেছিল, তার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তী কালে এই দিনটিকে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আশা রাখি, শাহিন বাগের আন্দোলনও এ দেশের বিপন্ন নাগরিকদের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে। হয়তো ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবসের’ সার্থকতা এটাই।

-ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement