India

লাদাখ রহস্য

Laগত ছয় বৎসরে মোদী সরকারের সহিত প্রতিবেশীদের তিক্ততা ক্রমশ বাড়িয়াছে। পাকিস্তান, চিন, মায়ানমার তো আছেই, এখন যোগ দিয়াছে নেপাল, এমনকি ভুটানও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০১:২২
Share:

ছবি: সংগৃহীত

কাহিনিতে নূতন মোড়। লাদাখ সীমান্তে ভারত-চিন সংঘর্ষ প্রশমিত করিতে মধ্যস্থতার ইচ্ছাপ্রকাশ করিয়াছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নয়াদিল্লি অবশ্য পত্রপাঠ এই রূপ আলোচনার প্রসঙ্গ অস্বীকার করে। দুই দিন পরে আবার বিদেশমন্ত্রক জানাইয়াছে, সীমান্ত পরিস্থিতি লইয়া দুই নেতার ভিতর সামান্য আলাপ হইয়াছে। কূটনৈতিক স্তরে অবাঞ্ছিত মেঘ-রৌদ্রের খেলা চলিতেছে, সত্যকার ঘটনাপ্রবাহ বুঝিয়া উঠা দায়। তবে, এই বারের বিশৃঙ্খলা যে কোনও সাধারণ খণ্ডযুদ্ধ নহে, এত অস্বচ্ছতার ভিতরও উহা স্পষ্ট। লাদাখ সীমান্তে দুই প্রতিবেশীর দ্বন্দ্ব নূতন নহে। ইতিপূর্বে নিয়মমাফিক বিতর্ক স্থানীয় স্তরেই মিটিয়াছে। কিন্তু এক্ষণে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ-এর জল মাপিবার বৈঠক দেখিয়া অনুমান করা যায় যে ২০১৩-এ উত্তর লাদাখের দেসপাং সমভূমি, ২০১৪-এ পূর্ব লাদাখের চুমার এবং ২০১৭-এ ভুটান সীমান্তে ডোকলাম সংঘাতের পর ইহা এই দশকের চার নম্বর গুরুতর সংঘর্ষ। নিতান্ত নিরামিষ বিতর্ক নহে।

Advertisement

পূর্বকালীন সংঘাত তিনটির নিবৃত্তিতে উচ্চস্তরের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হইয়াছিল। ৭৩ দিনব্যাপী ডোকলাম সংঘাত মিটাইতে নরেন্দ্র মোদী ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-কে একাধিক বার বাক্যালাপ করিতে হইয়াছিল। এই বারের দ্বন্দ্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগ বাড়াইয়া সক্রিয় হইয়াছেন। কারণটি অবশ্য ভিন্ন। বাণিজ্য-যুদ্ধ পার করিয়া ওয়াশিংটন ও বেজিং-এর দ্বৈরথের বিষয় আপাতত অতিমারি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সহিত বারংবার চিন-যোগের অভিযোগ তুলিয়াছেন ট্রাম্প। সম্ভবত লাদাখকে অস্ত্র করিয়া চিনকে খোঁচা দিতে চাহে আমেরিকা, যেখানে ভারত যষ্টিমাত্র। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত এত অকিঞ্চিৎকর নহে, যে দুই বৃহৎ শক্তির ভিতর তাহাকে বোড়ে সদৃশ আচরণ করিতে হইবে। বেজিং-এর সহিত নয়াদিল্লির বলিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মুশকিল হইল, মোদী সরকারের বিদেশনীতির ধরনটি সমস্যাজনক। প্রতিবেশী দেশের সহিত কূটনীতিতে মোদীশাসিত ভারতের বাগাড়ম্বর অনেক, কিন্তু সীমান্ত সঙ্কট মিটাইবার বদলে তাহা বরং সীমান্ত সঙ্কট বর্ধিত করিতেছে। এই কূটনৈতিক ‘দুর্বলতা’ দেখিয়াই হয়তো আমেরিকা এত দূর সাহস করিয়াছে।

গত ছয় বৎসরে মোদী সরকারের সহিত প্রতিবেশীদের তিক্ততা ক্রমশ বাড়িয়াছে। পাকিস্তান, চিন, মায়ানমার তো আছেই, এখন যোগ দিয়াছে নেপাল, এমনকি ভুটানও। বর্তমানে সীমান্ত লইয়া কাঠমান্ডুর সহিত নয়াদিল্লির সংঘাত চলিতেছে। ঐতিহাসিক ভাবে ছোট প্রতিবেশীর উপর ভারতের প্রভাব ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর আমলে শাসকদলের ঘরোয়া রাজনীতির উদ্দেশ্যগুলির নিরিখে বিদেশনীতি নির্ধারিত হইবার ফলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের জোর কমিয়াছে। বাস্তবে সমস্যা হইয়াছে এক প্রকার আর রাজনীতির প্রয়োজনে তাহা অন্য চেহারায় উপস্থাপিত হইয়াছে। লাদাখ সীমান্তে দুই সেনাবাহিনীর বিবাদ চলিতেছে, অতএব দেশবাসীর নিকট চিনা দ্রব্য বয়কটের আহ্বান করা হইল। ইহাতে আর যাহা হউক কূটনীতি হয় না। ডোকলামের ক্ষেত্রেও প্রাথমিক ভাবে মোদী সরকার একই ভুল করিয়াছিল। যথাযোগ্য কূটনৈতিক আলোচনার পথ ছাড়া লাদাখ-সঙ্কট ক্রমশ জটিলতর হইয়া উঠিবে, ইহা যত দ্রুত বুঝিয়া লওয়া যায় ততই মঙ্গল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement