Editorial News

বিভাজন-বৈরিতার পাঁচিলটা আমরাও ধসিয়ে দিতে পারি না কি?

প্রায় সাত দশকের বৈরিতা। পূর্ব এশিয়ার এক উপদ্বীপকে ঘিরে তিক্ততার মহাসমুদ্র যেন এক। পরমাণু হামলার শাসানি নিরন্তর। সেই অসীম তিক্ততাও তো সযত্নে সরিয়ে ফেললেন দুই কোরিয়ার দুই শাসক।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০০:৩৬
Share:

ফাইল চিত্র।

দূরত্বটা কি সত্যিই খুব বেশি? বাধার প্রাচীরটা কি সত্যিই দুর্লঙ্ঘ, অনতিক্রম্য? যতটা মনে হয় আপাতদৃষ্টিতে, ততটা না-ও হতে পারে। আরও এক বার ঘা দিয়ে দেখতেই তো পারি আমরা। বলা যায় না, বিভেদ-বৈরিতার পাঁচিলটা হয়ত ধসেও পড়তে পারে।

Advertisement

প্রায় সাত দশকের বৈরিতা। পূর্ব এশিয়ার এক উপদ্বীপকে ঘিরে তিক্ততার মহাসমুদ্র যেন এক। পরমাণু হামলার শাসানি নিরন্তর। সেই অসীম তিক্ততাও তো সযত্নে সরিয়ে ফেললেন দুই কোরিয়ার দুই শাসক। সীমান্ত জনপদ পানমুনজমে তো অভূতপূর্ব, অভাবিত, অপ্রত্যাশিত এবং অমূল্য একটা ছবি তৈরি হল।

শান্তি আলোচনার পরে নিজের নিজের রাজধানীতে ফিরে গিয়েছেন কিম জং-উন এবং মুন জায়ে-ইন। কিন্তু দু’জনেই গোটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিতে শুরু করেছেন, সীমান্তে দুই নেতার কথা কোনও ‘কথার কথা’ ছিল না, ‘কাজের কথা’ই ছিল। দুই কোরিয়াই শান্তির লক্ষ্যে বৃহৎ পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে।

Advertisement

দক্ষিণ এশিয়াতেও কাহিনিটা খানিকটা একই রকম। একদা অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশ আজ খণ্ডিত, বিভক্ত। সাত দশকেরও কিছু বেশি সময় ধরে অসীম তিক্ততা ভারত-পাকিস্তানে। কিন্তু এর পরে কোরিয়ার সঙ্গে ভারত-পাকিস্তানের কাহিনির গতিপ্রকৃতি আর মেলে না। সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ মিলিয়ে আসার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না আপাতত। আটারি আর ওয়াঘার মাঝে দাঁড়িয়ে দুই দেশের দুই শীর্ষনেতা পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করবেন, এমন দৃশ্য এখন কল্পনাও করা যাচ্ছে না।

সহস্র বছরেরও বেশি সময় ধরে একই দেশের অঙ্গ ছিল ভারত-পাকিস্তান। বিভাজন-বৈরিতার ইতিহাস একশো বছরেরও নয়। তা হলে কেন শুধরে নেওয়া যাবে না ভুলগুলো, কেন মেরামত করে নেওয়া যাবে না সম্পর্কের ফাটলগুলো?

ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক মেরামত করার চেষ্টা কখনও হয়নি, এমন নয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বেই খুব বড় একটা পদক্ষেপ করা হয়েছিল। ভারত-পাক বাসযাত্রাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাজপেয়ীর সেই সম্প্রীতি সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই কার্গিলে ঢুকে পড়েছিল পাক-মদতপুষ্ট বাহিনী। ফলে ১৯৯৯ সালে সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধে নামতে হয়েছিল ভারতকে।

বিশ্বাসঘাতকতার সেই স্মৃতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে মিষ্টতা আনার পথে খুব বড় বাধা, এ কথা ঠিক। কিন্তু সেই স্মৃতিকে কি আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ভার দিয়ে দেব? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি আজ।

শান্তি, সুস্থিতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধির চেয়ে বড় লক্ষ্য আর কী-ই বা হতে পারে? এই প্রশ্নটাও ওঠা জরুরি।

প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন আমরা তুলছি। প্রশ্ন পাকিস্তানের 'ডন নিউজ'ও তুলেছে এক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে। প্রশ্ন শীঘ্রই উঠে আসবে আরও নানা শিবির থেকে আশা করা যায়। উত্তরটা আমরা কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খুঁজছি, তার উপরে নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ। শুধু ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নয়, অনেকাংশে গোটা পৃথিবীটার ভবিষ্যতই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement