World News Day

সংবাদের প্রভাব

গত তিন বৎসর ধরিয়া ২৮ সেপ্টেম্বরে এমন একটি দিবস পালিত হইয়া আসিতেছে। এমন দিন পালনের আবশ্যকতা কী?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি

আজ বিশ্ব সংবাদ দিবস। গত তিন বৎসর ধরিয়া ২৮ সেপ্টেম্বরে এমন একটি দিবস পালিত হইয়া আসিতেছে। এমন দিন পালনের আবশ্যকতা কী? উত্তরে বলিতে হয়, কেবল জরুরি নহে, ইহা এখন অত্যাবশ্যক। সংবাদ ও সাংবাদিকতা যে সকল বৃহৎ চ্যালেঞ্জের সহিত যুঝিয়া আসিতেছে, আজ তাহা বৃহত্তর, অধিক সঙ্কটময়। সংবাদ-মাধ্যম চির কালই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান, গণতন্ত্রের স্তম্ভ, যুক্তি ও স্বাধীনতার পৃষ্ঠপোষক, শৃঙ্খলমোচনের আশা। সমাজের খোলনলিচা বদলাইয়া দিতে পারে এই একটি প্রতিষ্ঠানের যথার্থ কার্যকারিতা— অবহেলিতকে আলোয় আনিতে পারে, কৃতীকে সম্মান আনিয়া দিতে পারে, অন্যায়কে জনমানসে পরিস্ফুট করিতে পারে, ন্যায়ের মর্যাদা সর্বসমক্ষে তুলিয়া ধরিতে পারে। মুক্ত সংবাদমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্রের অভিমুখে এক পা অগ্রসর হওয়াও অসম্ভব। আর ঠিক এই কারণেই, চির কালই সংবাদ-মাধ্যমের পথটি ঝুঁকিপূর্ণ, বিপদসঙ্কুল। তাহার সম্মুখে আগাইবার ও আগাইয়া দিবার ক্ষমতা আছে বলিয়াই এক দিকে স্থিতাবস্থা, অন্য দিকে পশ্চাৎমুখী শক্তি ইহাকে ছাড়িয়া কথা বলিতে রাজি নহে। যেখানেই গণতন্ত্র শক্তপোক্ত নহে, সেখানে সম্পাদক, সাংবাদিক ও চিত্র-সাংবাদিকরা নিয়মিত নিগৃহীত হইয়া থাকেন। কখনও মৌখিক ও মানসিক লাঞ্ছনা, কখনও শারীরিক নিগ্রহ, কখনও কারারোধ কিংবা কঠিন শাস্তি। এক এক সময়ে ও পরিস্থিতিতে পাল্লা এক এক দিকে বেশি ঝোঁকে— গত কয়েক বৎসর যাবৎ পাল্লাটি নিগ্রহের দিকেই বেশি ঝুঁকিতেছে। ২০২০ সালে অতিমারি-দীর্ণ মানবসভ্যতা ও গণতন্ত্র অবমাননাকারী ক্ষমতা-চর্চার মধ্যখানে দাঁড়াইয়া তাই বুঝিতে কষ্ট হয় না, সংবাদ ও সাংবাদিকতা মানুষের মনের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করিতে পারে বলিয়াই তাহার মাথার উপর এই বিশাল তরবারি ঝুলিয়া রহিয়াছে— গর্দান গেল গেল ভয়, প্রতি দিন!

Advertisement

এই বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিত যদি আজিকার বিশ্ব সংবাদ দিবস পালন করিবার ‘হেতু’ হয়, ইহার ‘লক্ষ্য’ তবে মানুষকে মনে করাইয়া দেওয়া যে সংবাদ-মাধ্যমের উপর আক্রমণ আসিলে তাহা প্রতিরোধ করা কেবল সাংবাদিকদেরই কাজ নহে, সমগ্র সমাজের দায়িত্ব। বিশেষ করিয়া সৎ সংবাদকে যখন আজ যুঝিতে হইতেছে অসৎ সংবাদ বা ফেক নিউজ়ের সহিত, তখন সংবাদপাঠক বা সংবাদশ্রোতার দায়িত্ব বিরাট। তাঁহাকে বুঝিতে হইবে, বহু অশুভ শক্তি মিথ্যার বেসাতি খুলিয়া বসিয়াছে, বহু প্রকার স্বার্থ মানুষকে ভুল বুঝাইবার কাজে নামিয়াছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ মাস্ক পরিলে ঠেকানো যায় কি না, কিংবা কোনও জনপ্রিয় চিত্রতারকার মৃত্যুর জন্য তাঁহার আত্মজন দায়ী কি না, সকল প্রশ্নেই যাহা শোনা ও পড়া যাইতেছে, নির্বিচারে তাহা গলাধঃকরণ না করাই বাঞ্ছনীয়। সম্প্রতি কালে একাধিক ভারতীয় সাংবাদিককে দেশদ্রোহিতার আইনে জেলে পোরা হইয়াছে। সামান্য বিবেচনা থাকিলে বোঝা যায়, এখানে প্রশ্নটি সংবাদের নহে, রাজনীতির। সংবাদে কিছু ভুল থাকিলেও তাহা দেশদ্রোহিতা হইতে পারে না। সংবাদ মানুষকে ক্ষমতায়িত করিতে পারে, এবং সেই কারণে সংবাদকে দমন করা জরুরি— ইহাই সেই রাজনীতি। সচেতন সামাজিক প্রহরা জারি না থাকিলে এই রাজনীতি মু্ক্ত দুনিয়াকে বিপর্যস্ত করিয়া দিতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement