Editorial News

আর কত দিন উদাসীন থাকবে প্রশাসন?

প্রশ্নটা হল এখানেই। আমাকে-আপনাকে এতগুলো দিন ধরে এ হেন অন্যায়ের শিকার হতে হয়েছে কেন? প্রশাসন কি জানত না, নাকি প্রশাসনের একটা অংশের প্রচ্ছন্ন মদতেই দীর্ঘ দিন ধরে চলে এসেছে এই অসামাজিক কারবার।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০৬
Share:

উদ্ধার করা ভাগাড়ের মাংস। —ফাইল চিত্র।

ভাবলেই অবাক হয়ে যাচ্ছি, এত বড় একটা ভাগাড়-কাণ্ড যার জাল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়ানো, তার বিন্দুবিসর্গও জানা ছিল না প্রশাসনের! রহস্যের জাল যে ভাবে পরতে পরতে খুলছে, তাতে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে এই ভাগাড়-চক্রের হাত কতটা লম্বা। স্পষ্ট নয় এখনও, কত দিন অথবা মাস অথবা বছর ধরে এই পচা-গলা মাংস খেয়ে যেতে হয়েছে নিরীহ সাধারণ নাগরিককে।

Advertisement

নাগরিক নিশ্চিন্ত ভরসায় দোকান থেকে কিনে এনেছেন মাংস। এটা জেনেই যে, আইনের শাসন কোথাও একটা আছে, অতএব যথোচিত প্রাপ্যটুকু তিনি স্পষ্ট কড়ির বিনিময়ে বুঝে নিচ্ছেন। সেই বোঝা যে ভুল হতে পারে, তাঁর খাবারের প্লেটে উঠে আসতে পারে ভাগাড়ের মরা মাংস, এ কথা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেনি আম জনতা। কারণও খুব স্পষ্ট, এটা আগেই বলেছি, প্রশাসনের উপর ভরসা করে নিশ্চিন্ত জীবন কাটানোর পরিকল্পনাটাই ছিল। ভাগাড়-কাণ্ড তাঁকে যে শুধু যথাযোগ্য খাবারের থেকে বঞ্চিত করল তাই নয়, সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি আস্থাবোধেও বড় ফাটল ধরাল। ভাগাড়ের মাংস শারীরবৃত্তীয় ভাবেই শুধু ক্ষতিকর হল তাই নয়, সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত এক অসহায় একলা মানুষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিল।

সহজ করে কথাটা বোঝা যাক। আপনি-আমি যে নিরাপত্তা কর্মীদের অতন্দ্র প্রহরার কথা মাথায় রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যাই, তার মধ্যে একটা যৌথতার বোধ আছে, পারস্পরিক আস্থায় বেঁচে থাকা জীবন কাহিনিও। অকস্মাৎ আপনি আবিষ্কার করলেন, আপনার কোষাগার লুঠ হয়ে গিয়েছে, কারণ যে অতন্দ্র প্রহরার কথা জানতেন সেটা একটা ভ্রম মাত্র, তার অস্তিত্ব কোনও কালেই ছিল না। আপনার নিশ্চিন্ত অস্তিত্বের ভিতটা যাবে নড়ে, আস্থাভিত্তিক যৌথতার বোধ থেকে চ্যুত হবেন আপনি। মিলিয়ে দেখুন, ভাগাড়-কাণ্ড আপনাকে সে রকমই এক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কি না।

Advertisement

প্রশ্নটা হল এখানেই। আমাকে-আপনাকে এতগুলো দিন ধরে এ হেন অন্যায়ের শিকার হতে হয়েছে কেন? প্রশাসন কি জানত না, নাকি প্রশাসনের একটা অংশের প্রচ্ছন্ন মদতেই দীর্ঘ দিন ধরে চলে এসেছে এই অসামাজিক কারবার। উত্তরটা দেওয়ার দায় প্রশাসনেরই। আরও আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, এ ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক স্তরে বিরাট কোনও হেলদোলের অভাব দেখে। অন্যায় দেখতে দেখতে এবং সহন করতে করতে আমরা কি এমনই এক উদাসীন অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছি, যেখানে কোনও কিছুতেই হেলদোল হয় না আর।

অপরাধের জালটাকে খুঁজে বার করা দরকার, আরও দরকার সেই জালের চরিত্রটাকে বুঝে নেওয়ারও। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হোক, এ দাবি নিতান্ত ন্যায্য এবং সংগত। প্রশাসনের বোঝা দরকার, তার একটা দায়বদ্ধতা আছে। প্রহসনটা হল, যার প্রতি দায়বদ্ধতা সেই মানুষকে নিয়েই খেলা চলছে নিরন্তর। এই কলঙ্কের দায় প্রশাসনেরই। কলঙ্কমুক্তির দায়ও তাঁদেরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement