Madrasa

সত্য চিত্র

সুদীর্ঘ কাল হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বসবাস করিয়া আসিবার পরেও যে এই খবরে বিস্ময় জাগিতে পারে, তাহাই প্রমাণ— অপরিচয়ের অন্তরাল এখনও সরে নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০০:০২
Share:

—ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষৎ-এর অধীনে এই বৎসর রেকর্ড সংখ্যক হিন্দু ছাত্রছাত্রী মাদ্রাসার চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসিয়াছিল। সত্তর হাজারের অধিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ। হিন্দু-মুসলমান লইয়া সাম্প্রতিক কালে এই দেশে যে কাণ্ড চলিতেছে, তাহার প্রেক্ষিতে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের এই তথ্যটি উপস্থাপন করিলে যুগপৎ বিস্ময় ও আশ্বাস উদ্রেক হয়। বিস্ময়ের কারণ, মাদ্রাসা শিক্ষায় হিন্দু শিক্ষার্থীদের দেখিবার মতো উপস্থিতি। বৃহত্তর সমাজের, এবং বিশেষত সংখ্যাগুরু হিন্দু নাগরিকদের নিকট ‘মাদ্রাসা’ বলিতেই মানসচক্ষে যে চিত্র ভাসিয়া উঠে, তাহার সহিত বাস্তবের এই তথ্যটি ‘সুসমঞ্জস’ নহে, তজ্জনিত বিস্ময়। এবং আশ্বাস— দীর্ঘ কাল লালিত ভুল ভাঙিয়া নূতন বোধে উত্তরণের।

Advertisement

সুদীর্ঘ কাল হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বসবাস করিয়া আসিবার পরেও যে এই খবরে বিস্ময় জাগিতে পারে, তাহাই প্রমাণ— অপরিচয়ের অন্তরাল এখনও সরে নাই। অপরিচয়ই অজ্ঞানতা ও ক্রমে আতঙ্কের জন্ম দেয়, ‘মাদ্রাসা’ শুনামাত্র তাহাকে রক্ষণশীলতা কুসংস্কার ও সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরস্বরূপ ভাবিয়া লওয়া ও আজীবন বিশ্বাস করিয়া যাওয়া তাহারই ফল। অথচ মাদ্রাসা আসলে কী, তাহার পাঠ্যক্রম কী রূপ, ‘হাই মাদ্রাসা’ ও ‘সিনিয়র মাদ্রাসা’র ভিতর তফাত কোথায়, এই সকল প্রশ্ন করিলে শিক্ষিত নাগরিক সমাজের অধিকাংশই নিরুত্তর থাকিবে। উত্তরগুলি জোগাইলেও বিস্ময়ের মাত্রা বাড়িবে বই কমিবে না। দেখা যাইবে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন হাই মাদ্রাসাগুলির পাঠ্যক্রমও প্রায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রমেরই অনুবর্তী, এমনকি বারো বৎসরের উপর হইল সেগুলিতে স্বাস্থ্য সচেতনতার পাঠ, আবৃত্তি অঙ্কন নাটক বিতর্ক এমনকি ক্রীড়া, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষরোপণের ন্যায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রকল্পকে পাঠ্যক্রম-অতিরিক্ত বা ঐচ্ছিক নহে, আবশ্যিক করা হইয়াছে। যাঁহারা মাদ্রাসা অর্থে উর্দু-আরবির পীঠস্থান ও লিঙ্গবৈষম্যের প্রসারভূমি মনে করিয়া থাকেন, তাঁহাদের উদ্দেশে বলা যায়, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন ছয় শতাধিক মাদ্রাসার মধ্যে মাত্র বারোটি উর্দু মাধ্যম অবলম্বী, এবং সাড়ে পাঁচশতেরও বেশি প্রতিষ্ঠানে ছেলে মেয়ে উভয়েই পড়িতে পারে। সেই শিক্ষার্থীরাও প্রধানত মুসলমান তাহা বলা যাইবে না, বরং বর্ধমান বীরভূম বাঁকুড়া পুরুলিয়ার বহু মাদ্রাসায় অমুসলমান ছাত্রছাত্রীই বেশি। হিন্দু শিক্ষকেরা মাদ্রাসায় পড়াইতেছেন, ইহাও অপরিচিত ঘটনা নহে। স্থানীয় মানুষের নিকটেও ইহা স্বাভাবিকতায় পরিণত হইয়াছে। পড়াশোনার পরিবেশ ও পরিকাঠামোই অভিভাবকদের বিবেচ্য— বিদ্যালয় না মাদ্রাসা তাহা লইয়া ভাবিবার সময় তাঁহাদের নাই।

তাহা বলিয়া সমস্যা নাই, তেমনও নহে। অঞ্চলবিশেষে ধর্মীয় গোঁড়ামি মাদ্রাসাগুলিকে কুক্ষিগত করিতে চাহিয়াছে, টানাপড়েন কম হয় নাই। সেই সব হইতে মুক্ত হইয়া, শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষায় শিক্ষিত করিবার পথে অগ্রসর করিবার কাজটি কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নহে— দেখাইয়া দিয়াছে এই রাজ্যের কয়েকটি মাদ্রাসা। ইংরাজি বা গণিত ক্লাসে যেমন, তেমনই স্বাধীনতা দিবস হইতে শিক্ষক দিবস উদ্‌যাপনে তাহারা সঙ্কীর্ণ ধর্মতান্ত্রিকতার বোধ নিয়ত পিছনে ফেলিয়া যাইতেছে। তথাকথিত শিক্ষিত অথচ একদেশদর্শী নাগরিকেরা তাহা শিখিলে মঙ্গল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement