এ ভাবেই ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালে।
সাধ আর সাধ্যের মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব হয়, তখন সাধকে বিসর্জন দিয়ে সাধ্যকেই বেছে নিতে হয়। কিন্তু দ্বন্দ্বটা যখন বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সাধ্যের, তখন বাধ্যবাধকতাই অগ্রাধিকারে।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাওয়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা। সাধ্যাতীত জেনেও অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হতেই হয়। সাধ করে কেউ অসুস্থ হন না, খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা পরিষেবাও কেউ সাধে নেন না, নেন আপৎকালীন প্রয়োজনীতায়। আর আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নাগরিকের পাশে থাকা সরকারের কর্তব্য। অতএব, বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিলের উপর নজরদারির যে তোড়জোড় রাজ্য সরকার শুরু করেছে, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হচ্ছে।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। অনেকেই অপারগতার কারণে বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবা নেন না। অনেকে আবার অপারগতা সত্ত্বেও উপায়ান্তর না দেখে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। তবে সে সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই সব হাসপাতালে তাঁদের সংখ্যাই বেশি, যাঁরা জানেন যে এই সব হাসপাতাল থেকে পরিষেবা নেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের রয়েছে। তা সত্ত্বেও কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষোভ জন্ম নেয়। সামর্থ্য যাঁদের রয়েছে, হাসপাতালের বিল হাতে পেয়ে তাঁদের চোখও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কপালে ওঠে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার খরচের বহর সম্পর্কে খোদ মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের বিধানসভা তদন্ত কমিটি গড়েছে। নবান্নের তরফেও নজরদারির তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পদক্ষেপ সত্যিই জরুরি ছিল। অনেক দিন ধরেই এর প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল।
কোনও কোনও বেসরকারি হাসপাতালের তরফে ঘুরিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, চিকিৎসা খরচসাপেক্ষ যখন জানেন, তখন কেন আসেন? যাঁরা এই প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁরা যে কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং তাঁরা যে চিকিৎসা শাস্ত্রের সারকথাই বুঝতে পারেননি, সে নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই। তবু আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া যাক, সাধ করে কেউ খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা পরিষেবা নিতে যান না। বাধ্যবাধকতা থেকেই যান।
নানা ধরনের কারচুপির কথা শোনা যায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। বিল বাড়াতে অপ্রয়োজনে চিকিৎসার বহর বাড়ানো, যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই, সে সবও করানো, আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নে পান থেকে চুন খসলেই চিকিৎসা আটকে রাখা— এমন নানা অভিযোগ উঠে আসে। এ কথা ঠিক যে কোন পদক্ষেপটি চিকিৎসকরা প্রয়োজনে করছেন, কোন পরীক্ষাটিকে তাঁরা সত্যিই জরুরি মনে করছেন, সে কথা সাধারণের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। অপ্রয়োজনে বিল বাড়ানো বা অযথা খরচ করানোর প্রতিটি অভিযোগ সর্বৈব সত্য, তেমনটাও ধরে নেওয়া যায় না। তবু অভিযোগ যখন উঠছে এবং বার বার উঠছে, তখন সতর্ক হওয়া জরুরি, নজরদারি জরুরি।
বর্তমানে বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পরিষেবা প্রদানকারী এবং পরিষেবা গ্রাহকের সম্পর্কটা বেশ টানাপড়েনের। একটা অবিশ্বাসের বাতাবরণ রয়েছে বলেই এই টানাপড়েন। সরকারের নজরদারি কিন্তু এই অবিশ্বাসের বাতাবরণ কাটিয়ে পরিষেবা প্রদানকারী এবং গ্রাহকের সম্পর্কে একটা ভারসাম্য আনতে পারে। সেই ভারসাম্য যদি আসে, তা হলে শুধু সাধারণ নাগরিকের কল্যাণ হবে না, বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্যও তা মঙ্গলজনকই হবে।