Reservation

ন্যায়ের পথ

সংরক্ষণের সুষম বণ্টন চাহিয়া এমন বিভাজনের দাবি বহু পূর্বেই উঠিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করিয়াছে রাষ্ট্র। কিন্তু সংরক্ষণের বিরুদ্ধে বহুতর অভিযোগের অন্যতম, সুবিধা কুক্ষিগত করিয়াছে বিত্তশালী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলি। জাঠ বা যাদবদের জমি ও প্রতিপত্তি কম নহে। কিন্তু অন্যান্য পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী বা ‘ওবিসি’ তালিকাভুক্তদের জন্য সাতাশ শতাংশ সংরক্ষণের অধিকাংশ তাঁহাদের মতো সম্পন্নরাই দখল করিতেছেন। কী উপায়ে সংরক্ষণের সুযোগের বণ্টন আরও ন্যায্য করা সম্ভব, তাহা বিচার করিতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৭ সালে একটি কমিশন গঠন করে। তাহার সদস্যরা দেখিয়াছেন, পাঁচ হাজারেরও অধিক গোষ্ঠী সরকারি ভাবে ‘ওবিসি’ তালিকাভুক্ত হইলেও, সংরক্ষিত আসনের অধিকাংশ কয়েক ডজন গোষ্ঠীর দখলে। তাই ওবিসি-র অন্তর্গত গোষ্ঠীগুলিকে তিনটি বিভাগে বিন্যস্ত করিবার কথা বলিয়াছে কমিশন। একটি বিভাগ তাহাদের, যাহারা জনসংখ্যার অনুপাতে অধিক সংরক্ষিত আসন দখল করিয়াছে। একটি উপেক্ষিত গোষ্ঠীগুলির, যাহারা আজও স্থান পায় নাই। আর তৃতীয়টি তাহাদের জন্য, যাহাদের সংরক্ষিত আসনে কিছু প্রতিনিধিত্ব আছে কিন্তু যথেষ্ট নহে। ওবিসি-র জন্য সংরক্ষিত আসনগুলিতে এই তিনটি বিভাগ হইতে প্রার্থী চয়ন করিলে প্রভাবশালীরা প্রান্তিকদের কোণঠাসা করিতে পারিবে না। বিভিন্ন বিভাগের অভ্যন্তরে আর্থসামাজিক সমতা থাকিবার জন্য প্রার্থীদের মধ্যে সমানে-সমানে প্রতিযোগিতা হইবে।

Advertisement

প্রস্তাবটি যুক্তিযুক্ত। বস্তুত, সংরক্ষণের সুষম বণ্টন চাহিয়া এমন বিভাজনের দাবি বহু পূর্বেই উঠিয়াছে। তাহার সমর্থকরা মনে করাইয়াছেন যে ‘ওবিসি’ কোনও সামাজিক গোষ্ঠী নহে, তাহা সরকার-সৃষ্ট একটি ধারণামাত্র। তাহাতে শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও সম্পদের নিরিখে অনুন্নত বর্ণগুলিকে একত্র করা হইয়াছে। অতএব তাহাদের ‘খণ্ডিত’ করিলে পরিচিতি বিপন্ন করা হইবে, সেই ভয় নাই। বরং, আর্থসামাজিক অবস্থা অনুসারে উপগোষ্ঠী নির্মাণের কাজ বহু পূর্বেই হইতে পারিত। অভিযোগ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বৃহৎ ভূস্বামী ওবিসি-রা যখন বিজেপির বিরোধী ছিল, তখন নিম্নবিত্ত গোষ্ঠীগুলির সমর্থন পাইতে বিজেপি কমিশন বসাইয়াছিল। অতঃপর ওই বিত্তবান ওবিসি-রা যত বিজেপির দিকে ঝুঁকিয়াছে, তত সংস্কারে টালবাহানা করিয়াছে কেন্দ্র। অভিযোগ উঠিয়াছে, দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জি রোহিণীর নেতৃত্বে গঠিত ওবিসি কমিশনের কার্যকাল মোট নয় বার বাড়ানো হইয়াছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই।

রাজনীতিতে ন্যায়ের বৃহৎ প্রশ্নগুলিও ক্ষুদ্র দলস্বার্থ দ্বারা নির্ণীত হয়। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই সংরক্ষণকে ভোটের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করিয়াছে। কিন্তু আজ সংরক্ষণের ধারণাতেই পরিবর্তন আসিতেছে। সংরক্ষণের মূল ধারণায় সামাজিক অমর্যাদা প্রাধান্য পাইয়াছিল, আয় নহে। শিক্ষা, কর্মনিযুক্তি এবং রাজনীতিতে যাঁহারা ঐতিহাসিক ভাবে বৈষম্যের শিকার, সংরক্ষণ দ্বারা তাঁহাদের প্রতি ন্যায় করিতে চাহিয়াছিল সংবিধান। সংবিধানের দৃষ্টিতে ‘ঐতিহাসিক বঞ্চনা’-ই সংরক্ষণ নির্দিষ্ট করে, সম্পদ মালিকানা নহে। সংরক্ষণ দারিদ্র দূরীকরণের প্রকল্প নহে। বর্ণের সহিত আর্থিক শ্রেণির সাযুজ্য যত কমিবে, সংরক্ষণে কাহার কতটা অধিকার, সেই প্রশ্নটি তত তীব্র হইবে। ন্যায়ের পথ সহজ নহে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement