পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, রাফাল কাণ্ড বা অন্যান্য অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠতেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে দিলেন নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন পছন্দ নয় একেবারেই। প্রশ্ন করাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না শাসক। বর্তমান জমানাটার অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে এইটা।
দেশের শাসকদলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক চলছে রাজধানীতে। বৈঠকের উপজীব্য সম্পর্কে জানাতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন শাসক দলের বরিষ্ঠ নেত্রী তথা দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, রাফাল কাণ্ড বা অন্যান্য অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠতেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে দিলেন নির্মলা। প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।
উত্তর না দেওয়ার এই প্রবণতাটা মারাত্মক। গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক এই প্রবণতা, আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোর জন্য স্বাস্থ্যকরও নয় একেবারেই। কিন্তু এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসটাই যেন প্রথা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ক্রমশ।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
শুধু নিজের কথাটা বলব, বলা শেষ হলেই সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দেব। যে কথাটা বললাম, তার পাল্টা-ও কারও কিছু বলার থাকতে পারে, কারও কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে বা অসন্তোষ থাকতে পারে— ভাববই না এ সব। পাল্টা কিছু শুনতে আমি প্রস্তুত নই, কোনও অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে রাজি নই, অসন্তোষকে গুরুত্বই দিই না। নিজের কথাটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সবাইকে শুনিয়ে দিয়েছি সেখানেই কথা শেষ। অন্য কারও কথা শুনবই না। শাসকের আচরণ এবং মানসিকতা এখন এই রকমই।
শাসক এখন কারও কথা শুনতে চান না। শাসক মনে করেন, তাঁর কাজ শোনা নয়, শুধু বলা। শুনবেন বাকি সবাই, তাঁরা শুধু শুনেই যাবেন, বলবেন না কিছুই। কেন্দ্র-রাজ্য নির্বিশেষে এই প্রবণতা এখন। প্রশ্ন হল, এই প্রবণতা কি আগে ছিল না? আচমকা উদ্ভব হল? কোনও একটা নির্বাচনের ফল বেরোল, নতুন কোনও মন্ত্রিসভা এল আর আচমকা এ রকম শুরু হয়ে গেল? না, তা নয়, আচমকা শুরু হয়নি। বিরোধী স্বরকে শ্রুত হতে না দেওয়ার এই প্রবণতা শাসকের মধ্যে অনেক দিনের। কিন্তু তা প্রচ্ছন্ন ছিল, আবডালে ছিল। এখন অত্যন্ত প্রকট, সব যেন খুল্লম খুল্লা।
আরও পড়ুন: ‘রাফাল তো সস্তাই হল!’
রাজনৈতিক ক্ষমতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক ঔদ্ধত্যও বোধহয় বাড়ে। কিন্তু সেই ঔদ্ধত্যের এমন বেপরোয়া প্রকাশ বিপদটাকে বাড়াচ্ছে। আগে কোথাও একটা সৌজন্যের বা লোক দেখানো বিনয়ের আব্রু ছিল। এখন সে আব্রুটাও উধাও হয়ে যাচ্ছে শাসকের আচরণ থেকে।
গণতন্ত্রে শাসককে বা জনপ্রতিনিধিকে জনতার কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। জবাব দিতে দায়বদ্ধ তাঁরা। জনতা সরাসরি প্রশ্ন পৌঁছে দিতে পারেন না শাসকের দরবারে। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হয়ে সংবাদমাধ্যম শাসকের সামনে তুলে ধরে জনতার প্রশ্নগুলো। সে প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা শাসকের জন্য আবশ্যিক। কিন্তু শাসক সে সব শিক্ষা ভুলে যাচ্ছেন এবং অগ্রাহ্য করছেন। সমস্যাটা সেখানেই।
উত্তর না দেওয়ার প্রবণতা যদি এ ভাবে বাড়তে থাকে, তা হলে রাজনীতি আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠতে চলেছে।