Coronavirus in India

কর্মফল

প্রতি তিন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হারের যে পরিসংখ্যান ঘোষিত হয়, তাহা বলিতেছে, অতিমারির কবলে পড়িবার পূর্বেই ভারত ধুঁকিতেছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

গত চার দশকে যাহা হয় নাই, বর্তমান অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে হইল। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ কমিল— তাহাও গত অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ। পরিসংখ্যানবিদদের একাংশের মতে, প্রকৃত বিপদের সম্পূর্ণ ছবি ইহাতে ধরা পড়ে নাই। পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর। এই বিপর্যয় কেন, তাহার উত্তর পরিসংখ্যান প্রকাশের পূর্বেই দিয়া রাখিয়াছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁহার মতে, ইহা ‘অ্যাক্ট অব গড’— মারে হরি, রাখে কে! কোভিড-১৯ অতিমারিকে ঈশ্বরের লীলা বলা চলে কি না, সেই আধ্যাত্মিক তর্ক আপাতত মুলতুবি থাকুক। কিন্তু, এই একটি ঈশ্বর বা জীবাণু এক দেশ হইতে অন্য দেশে বিভেদ করেন নাই। গোটা দুনিয়া ভাইরাসের কবলে পড়িয়াছে, বহু দেশেই একই ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হইয়াছে। কিন্তু, সব দেশের অর্থব্যবস্থা সমান গাড্ডায় পড়ে নাই। বস্তুত, বিশ্বের প্রধান অর্থব্যবস্থাগুলির মধ্যে ভারতের ন্যায় বেহাল আর কোনওটিই নহে। অতিমারির প্রকোপ যে হেতু গোটা দুনিয়াতেই সমান, ফলে দেশের আর্থিক ফলাফলের ইতরবিশেষের দায় সেই অতিমারির উপর, বা ঈশ্বরের উপর, চাপাইলে অন্যায় হইবে। গত তিন মাসে দেশে যাহা হইয়াছে, সবই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে। ফলে, বৃদ্ধির হার শূন্যের বহু, বহু নীচে নামিয়া গেলে সেই দায়টিও সরকারকেই লইতে হইবে।

Advertisement

এই বিপর্যয় কেন, সেই কারণটি স্পষ্ট। প্রতি তিন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হারের যে পরিসংখ্যান ঘোষিত হয়, তাহা বলিতেছে, অতিমারির কবলে পড়িবার পূর্বেই ভারত ধুঁকিতেছিল। প্রতি ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির হার কমিয়াছে। অতিমারি তাহাকে অতলে লইয়া গিয়াছে, এইমাত্র। কোভিড-১৯ আসিবার পূর্বেই লগ্নি কমিতেছিল, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা নিম্নমুখী হইয়াছিল, কর্মসংস্থানহীনতার হার অর্ধশতকে সর্বোচ্চ হইয়াছিল। অর্থাৎ, অতিমারি বড় জোর খাঁড়ার ঘা মারিবার সুযোগ পাইয়াছে, অর্থনীতিকে মারিয়া রাখিয়াছিলেন মোদী-সীতারামনরাই। অতিমারির ধাক্কা সামলাইতেও সমান ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার। দেশব্যাপী লকডাউনের ন্যায় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিবার পূর্বে সরকার ভাবিয়া দেখে নাই, অসংগঠিত ক্ষেত্রের উপর তাহার কী প্রভাব পড়িবে, বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের কী অবস্থা হইবে। কমলবনে মত্ত হস্তীর ন্যায়, তাঁহারা অর্থনীতির পরিসর জুড়িয়া দাপাইয়া বেড়াইয়াছেন। পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থব্যবস্থা, পাঁচ বৎসরে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করা ইত্যাদি অন্তঃসারহীন প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় মিলাইয়া গিয়াছে— এখন তাঁহারা অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাইতে ব্যস্ত। সেই কাজটি তাঁহারা বরাবরই করিতে অভ্যস্ত, তবে এই বার নূতনত্ব আছে— এই বিপর্যয়ের জন্য তাঁহারা নেহরুকে দায়ী করেন নাই।

আশঙ্কা, আর্থিক বিপদ শুধু প্রথম তিন মাসের উপর দিয়াই যাইবে না, গোটা অর্থবর্ষেই উৎপাদন হ্রাস পাইবার সম্ভাবনা। ছয় বৎসরের ভুলের মাশুল তিন মাসেই চুকিয়া যাইবে, এ হেন প্রত্যাশা না করাই ভাল। নরেন্দ্র মোদীরা অর্থব্যবস্থার পরিচালনায় অজস্র ভুল করিয়াছেন— কিন্তু প্রকৃত বিপদ সেই ভুলের অন্তর্নিহিত চরিত্রে। নোট বাতিল হইতে জিএসটি প্রবর্তন, আচম্বিত লকডাউন— প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভুল সিদ্ধান্তের পিছনে আছে আলোচনা না করিবার, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না লইবার মানসিকতা। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন হইতে রঘুরাম রাজন, প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে বলিয়াছেন, দেশের যাবতীয় আর্থিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে, কতিপয় ঘনিষ্ঠ জনের পরামর্শে। সেই পারিষদবৃন্দের পক্ষে যে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বিপুলত্বকে সামলানো সম্ভব নহে, এই কথাটি স্বীকার করিবার মতো শিক্ষার অভাবই ভারতকে ডুবাইতেছে। এই ব্যাধি কোভিড-১৯’এর চাহিয়াও মারাত্মক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement