Corona Vaccination

টিকার অধিকার

যদিও প্রদীপের নীচে রহিয়া গিয়াছে কিছু উদ্বেগ, কিছু অনিশ্চয়তা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

দেশ জুড়িয়া টিকাকরণের রাজসূয় যজ্ঞ চলিতেছে। টিকা লইতেছেন অতিমারির বিরুদ্ধে প্রথম সারির সংগ্রামী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা, সেই ছবি ছড়াইয়া পড়িতেছে দিকে দিকে, ভরসা পাইতেছে জনগণ। যদিও প্রদীপের নীচে রহিয়া গিয়াছে কিছু উদ্বেগ, কিছু অনিশ্চয়তা। কাহারা টিকা পাইবেন, কাহারা বিনামূল্যে পাইবেন, কাহাদের গাঁটের কড়ি খরচ করিয়া কিনিতে হইবে, কাহারা আগে পাইবেন ও কাহারা পরে— ইত্যাকার প্রয়োজনীয় বিষয়ে অদ্যাবধি কোনও ঘোষণা করে নাই সরকার। অর্থাৎ, ‘বিশ্বের বৃহত্তম’ টিকাকরণ প্রকল্প সকল ভারতবাসীর জন্য কি না, কিংবা তাহা ২০০ টাকা খরচ করিয়া কিনিতে হইবে কি না, ইহা স্পষ্ট নহে।

Advertisement

কোভিড সংক্রামক ব্যাধি, তাহার বিপদ কেবল ব্যক্তির নহে— সমাজের। ইহাকে আন্তর্জাতিক ভাবে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা বলিয়া ঘোষণা করিয়াছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অতএব, প্রাথমিক ভাবে কেবল গণস্বাস্থ্যের নিরিখেই করোনার টিকা প্রত্যেক নাগরিকের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া প্রয়োজন। যে হেতু এই অসুখ সারাইবার কোনও দ্বিতীয় পন্থা নাই, অতএব বিশ্বকে স্তব্ধ করিয়া দেওয়া ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাইবার একমাত্র হাতিয়ারটির অমোঘ প্রয়োজনীয়তা সরকার নিশ্চয়ই বুঝিবে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপু ঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশ্বজনীন ঘোষণায় বলা হইয়াছিল, প্রতিটি মানুষেরই সুস্বাস্থ্য লইয়া বাঁচিবার এবং সুচিকিৎসা পাইবার অধিকার আছে। গত সাত দশকে ভারতের গণটিকাকরণ অভিযান কেবল এই ঘোষণার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ নহে, বিশ্ব দরবারে নজিরস্বরূপ। করোনার টিকার ক্ষেত্রে তাহার অন্যথা হইবে কেন? বিরোধীরা যথাযথ ভাবেই সরকারের নিকট প্রশ্ন তুলিয়াছেন: কবে টিকা পাইবেন গরিব মানুষ? আদৌ বিনামূল্যে পাইবেন কি? স্মরণীয়— ভারতে পাঁচ বৎসরের কম বয়সি সকল শিশু বিনামূল্যে পোলিয়োর টিকা পাইয়া থাকে। দেশকে একশো শতাংশ পোলিয়োমুক্ত করিতে ১৯৯৫ সালে ‘পালস পোলিয়ো’ টিকাকরণ প্রকল্পের সূচনা হয়। কোনও শিশু যেন বাদ না পড়ে, সেই দায়িত্ব লয় সরকার। পর্যবেক্ষণেরও অভাব নাই।

প্রশ্ন উঠিতেছে, কেননা এক্ষণে টিকার যাহা মূল্য, তাহা দেশের একটি বড় অংশের পরিবারের দৈনিক আয়ই নহে। অর্থাৎ, ভারতের নাগরিকদের একটি বৃহৎ অংশ অর্থের বিনিময়ে এই টিকা লইতে পারিবেন না। দায়িত্বটি, এমতাবস্থায়, রাষ্ট্রের। কেহ গরিব বলিয়া টিকা পাইবেন না এবং অবশিষ্ট সমাজ অসুখে বিপন্ন হইয়া উঠিবে, এই পরিস্থিতিটি সৃষ্টি হইলে তাহা রাষ্ট্রের দ্বিমুখী ব্যর্থতা হইবে— এক দিকে দরিদ্র নাগরিকের জীবনের অধিকার নিশ্চিত করিতে না পারা; অন্য দিকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত না করিতে পারা। সেই কারণেই দাবি করা সঙ্গত যে, রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করিবে। তাহা সম্ভব না হইলে, দারিদ্রসীমার নীচে থাকা নাগরিকদের নিকট সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করোনার টিকা পৌঁছাইয়া দিতে হইবে। আর্থিক সামর্থ্য নাই বলিয়া কেহ সুস্বাস্থ্যের অধিকার হইতে বঞ্চিত হইলে, তাহা দেশের লজ্জা। সমগ্র সমাজই বা সঙ্কটে পড়িবে কেন? সকলের নিকট খাদ্য ও শিক্ষা পৌঁছাইয়া দেওয়া যেমন আইন মোতাবেক সরকারের অলঙ্ঘনীয় কর্তব্য, তেমনই পৌঁছাইতে হইবে করোনার টিকাও। ইহা সভ্যতার দাবি। নান্যঃ পন্থাঃ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement