Urban Development

দিল্লির পর এ বার মুম্বই, নগরায়নের চেহারা ক্রমশ বদলাচ্ছে দেশে, উন্নয়নের কেমন চেহারা দেখা যাচ্ছে?

নগরায়নের পিছনেই রয়েছে এক প্রতিশ্রুতি। যার মোদ্দা বক্তব্য— বিপুল কর্মযজ্ঞ শহরগুলির ভিত্তিগত ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবহণ ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেবে।

Advertisement

টি এন নাইনান

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০৯
Share:

দূষণ বাড়ছে দেশের বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।

বেশ কিছু দশক ধরে ভারতের রাজধানী এলাকা (দিল্লি এবং গুরুগ্রাম ও নয়ডার মতো উপনগরী)-কে দেশের নির্মাণশিল্পের রাজধানী বলেও ধরা হয়। গত ১৫ বছরে এই এলাকা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমানবন্দরকে ধাপে ধাপে তৈরি হতে দেখেছে। সেই সঙ্গে দেখেছে এক সুবিস্তৃত মেট্রো রেল পরিকাঠামোর নির্মাণপর্বকেও। উপনগরীর আবাসন এবং অফিস টাওয়ারগুলি এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রো রেল দ্বারা সংযুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে সেই সব অঞ্চলের বাসগৃহগুলি ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে ক্রমেই বহুতল আবাসন কমপ্লেক্সে রূপ পেতে শুরু করেছে। সাদামাঠা জমির মাপ থেকে চড়া দামের ফ্লোর এরিয়া অনুপাতের দিকে বদলে গিয়েছে হিসেব-নিকেশ। বাড়িগুলি রূপান্তরিত হয়েছে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে। জনঘনত্ব ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করেছে। উড়ালপুল, মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শহর-টপকানো সড়ক— কোনও কিছুই মানুষ আর গাড়িঘোড়ার সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত তাল রাখতে পারেনি। শেষমেশ শহর (ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ির বল্গাহীন সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে) দূষিত বাতাসে দমবন্ধ করা পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।

Advertisement

এ বার মুম্বইয়ের পালা। দেশের বাণিজ্য রাজধানী খানিক দেরিতে হলেও পরিকাঠামো নির্মাণ আর রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায় দিল্লিকে টপকে গিয়েছে। শহরের যে কোনও দিকেই যাওয়া যাক না কেন, দেখা যাবে দানবাকৃতি সব যন্ত্রপাতি বিপুল পরিমাণ মাটি খুঁড়ে চলেছে। মেট্রো রেলের লাইন আর উড়ালপুলগুলিকে ধরে রাখার জন্য মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশালাকৃতি থাম আর মাচা। এর সঙ্গে রয়েছে শহরের তলা দিয়ে যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন দিকে ভূগর্ভপথের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি। এ হেন নির্মাণ মহাযজ্ঞের কারণে সেই শহরেও বায়ুদূষণ বাড়ছে এবং তা যে এক দিন দিল্লির চেয়েও খারাপ পরিস্থতির দিকে এই শহরকে নিয়ে যাবে, তার আভাস এখন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।

এ সমস্ত কিছুর পিছনেই রয়েছে এক প্রতিশ্রুতি। যার মোদ্দা বক্তব্য— এই বিপুল কর্মযজ্ঞ এই শহরের ভিত্তিগত ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবহণ ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেবে। শহরতলিতে এই মুহূর্তে তিনটি মেট্রো রেলপথ চালু রয়েছে। তাদের সম্প্রসারণের কাজও চলছে। সমদ্রতীর বরাবর সড়ক নির্মাণের এক সুবিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে বাস চলাচলের জন্য পৃথক পথ চিহ্নিত থাকবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে চালু ট্র্যাফিক করিডরগুলিকে পাশ কাটানো সম্ভব হবে এবং এর ফলে বর্তমানের তুলনায় চার গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করতে পারবে। মুম্বইয়ের মধ্যভাগ থেকে সমুদ্রের উপর দিয়ে মূলভূমির সঙ্গে ২২ কিলোমিটারের একটি ট্রান্স-হারবার লিঙ্কের কাজ শীঘ্রই শেষ হবে। একটি নতুন বিমানবন্দরও নির্মিত হচ্ছে। শহরের পুর্ব থেকে পশ্চিমে মাথার উপর দিয়ে বয়ে চলা সড়কপথের নির্মাণকাজ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছে। সেই সঙ্গে চলছে ভূগর্ভ এবং সমুদ্রগর্ভ দিয়ে সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের কাজ। এই সমস্ত কাজের মধ্যেই এমন গতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা থেকে মনে হতেই পারে যে, আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে এই সমস্ত কিছু তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু এই কর্মযজ্ঞে যে কাজটি বাকি থেকে যাচ্ছে, সেটি শহরতলির রেল পরিষেবা-পরিকাঠামোর উন্নয়ন। যা কার্যত মুম্বই নগরীর জীবনরেখা।

Advertisement

সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণকার্যের বহর বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক, বান্দ্রা-কুরলা ফিনানশিয়াল ডিস্ট্রিক্ট বা নরিম্যান পয়েন্টের মতো বাণিজ্য এলাকা তৈরির মতো আগেকার প্রকল্পগুলিকে ম্লান করে দিয়েছে। পরিবহণ প্রকল্পগুলি ছাড়াও রিয়্যাল এস্টেটের নির্মাণকাজ (শোনা যাচ্ছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বর্গফুট বিস্তৃত) নরিম্যান পয়েন্টের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। সমুদ্র তীরবর্তী সড়কপথের কাজে সাগরপারে যে পরিমাণ জমি কাজে লাগানো হয়েছে, তেমন আগে কখনও হয়নি।

পরিবহণ প্রকল্পগুলি উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত নতুন করিডরের জন্ম দেবে এবং পূর্ব-পশ্চিমে রেল ও সড়ক যোগাযোগকে উন্নত করবে। সেই সঙ্গে এই দ্বীপনগরীকে মূলভূমির সঙ্গে আরও দৃঢ় ভাবে যুক্ত করবে। একই সঙ্গে সংযুক্ত হবে নতুন বিমানবন্দর এবং নহ্‌বা-শেবা বন্দর। বছর দুয়েকের মধ্যে শহরের ভিতরে যাতায়াত আরও সাবলীল হবে। কার্যত, বেঙ্গালুরু এবং দিল্লির ক্ষেত্রে এবং মধ্য মুম্বইয়ের কাপড়কলের জমি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেও যা দেখা গিয়েছে তার সারমর্ম এই— ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙঅগে তাল রেখেই প্রকৃতপক্ষে পরিবহণ পরিকাঠামোর বিবর্তন ঘটে।

এর পিছনে যে কারণগুলি রয়েছে, সেগুলি হল— পরিবহণের যোগসূত্রগুলি শহর ও তার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে দেশের বিপুল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সমর্থ হয়। যে ভাবে গুরুগ্রাম এবং নয়ডা দিল্লির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক নতুন নাগরিক বিস্তারকে সম্ভব করে তুলেছে, তা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উন্নততর যোগাযোগ শহরে জমির অভাবজনিত সঙ্কটের মোকাবিলা করবে। শহরের প্রসারণে যে বাধাগুলি রয়েছে, তাদের দূর করতে সমর্থ হবে। একই ভাবে, বাসস্থান এবং অফিসের স্থান সঙ্কুলানের জন্য হঠাৎ শুরু হওয়া উদ্দীপনা কিন্তু ইতিমধ্যেই জনবহুল এক শহরের জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধিকেই বোঝায়। এই সুত্রে ধারাভি বস্তি অঞ্চলের পুনর্বিন্যাস ঘটতে পারে। জল সরবরাহ এবং বর্জ্য নিষ্কাশন এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অবশ্য এ সব কিছুই আরম্ভ মাত্র। দিল্লি থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মেরঠের সঙ্গে দ্রুতগতির রেল যোগাযোগ সবে সম্পন্ন হয়েছে। আলওয়ার ও অন্যান্য জায়গার সঙ্গে এমন রেল যোগাযোগের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। মুম্বই, ঠাণে এবং নভি মুম্বইয়ের মধ্যে যাত্রী চলাচল ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কিছুটা সময় দিলে হয়তো আমরা দক্ষিণ চিনের শেনঝেন এবং গুয়াংঝৌ এবং হংকংয়ের মধ্যে সংযোগ সাধনকারী গ্রেটার বে এরিয়ার মতো পরিকাঠামো এ দেশেও দেখতে পাব। চিনের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ১২ শতাংশ এ দেশের ৭০ মিলিয়ন মানুষের দ্বারা সম্পন্ন হয়। এখনও পর্যন্ত ভারতীয় শহরগুলিতে যে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে, আমরা কি তার চেয়ে আর একটু বেশি আশা করতে পারি না?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement