কোথাও একটা কাঁটা যে খচখচ করছে, সেটা দলের সকলে জানেন। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ
কাজকর্ম সেরে চেতলার বাড়িতে ফিরে ইদানীং প্রায় রোজ রাতেই নাতনিকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যান তিনি। ইদানীং তাঁর কণ্ঠে শোনা যায়: বয়স হয়েছে। শোনা যায়: আর কত দিন আছি, জানি না। কল হো না হো! শোনা যায়: এর পর বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা এসে সমাজের মাথা হবে।
ফিরহাদ হাকিমের হল কী!
এলাকায় অবিসংবাদিত নেতা। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সুসম্পর্ক। এখনও সময় পেলে চেতলা বাজারে ‘মহামিলনের ঠেক’-এ গিয়ে বসেন। যেখানে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আড্ডা দেন ফিরহাদের পাড়াতুতো সিপিএমের ভাই এবং দাদারা। কাউন্সিলর থেকে ধাপে ধাপে উঠে এসে বিধায়ক। তার পরে মন্ত্রী। কলকাতার মেয়র। গড়গড়িয়ে চলছিল তাঁর রথের চাকা। হঠাৎ কেন তাতে টান পড়ল? সম্প্রতি কেন একটু বেসুরে বাজছেন তিনি? নিছক অভিমান? না কি পরোক্ষে একটু চাপ?
যে ভাবে মেয়র ফিরহাদকে কলকাতার রাস্তায় পার্কিং ফি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটানো হল, তার কাছাকাছির উদাহরণ হতে পারে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে দিয়ে বর্ধিত রেলভাড়া প্রত্যাহার করানো। তবে কিনা দীনেশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং দলনেত্রী! আর ফিরহাদকে পরোক্ষে নির্দেশ দিলেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। যিনি সর্বসমক্ষে ফিরহাদের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর অগোচরে হয়েছে বলে জানালেন (যা নিয়ে শুধু আনন্দবাজার অনলাইনের কাছেই মুখ খুলেছিলেন ফিরহাদ। বলেছিলেন, ‘‘এটা না করে দলের ভিতরে বললেও চলত। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিলে আমি প্রত্যাহার করে নিতাম।’’)। দ্বিতীয়ত, কুণাল বলে দিলেন, ওই দিনই ওই সিদ্ধান্ত বাতিল হবে। তৃতীয়ত, সন্ধ্যায় তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডল থেকে বর্ধিত পার্কিং ফি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য কলকাতা পুরসভাকে ধন্যবাদও জানিয়ে দেওয়া হল। অথচ, তখনও সেই মর্মে কোনও বিজ্ঞপ্তি পুরসভার তরফে দেওয়া হয়নি। ঘটনাচক্রে, সে দিন ‘গুড ফ্রাইডে’। সরকারি ছুটি। পুরসভা খোলা ছিল না। ফলে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার উপায় ছিল না। কিন্তু তা-ও হল! কী করে হল? পুরসভা সূত্রের তথ্য বিশ্বাস করলে, ছুটির দিন ইভনিং শো দেখাকালীন পুরসভার পদস্থ আধিকারিককে হল থেকে তুলে এনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করানো হয়েছিল।
মমতার প্রতি তাঁর আনুগত্য ‘হনুমানসুলভ’। সেই কারণেই পার্কিং ফি সংক্রান্ত কিলটি খেয়েও আপাতত হজম করেছেন তিনি। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
কিন্তু এ সবই তো প্রতিক্রিয়া। ক্রিয়াটা কেন হল?
মেয়র ফিরহাদ কেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা না-করে কলকাতার রাস্তায় পার্কিং ফি বাড়ানোর মতো একটি নীতিগত এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাববিস্তারকারী সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ অন্তত তৃণমূলে কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না!
বস্তুত, ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ফিরহাদ এমন কিছু কিছু কথা ইদানীং প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, যা দলের ‘লাইন’-এর পরিপন্থী। এতটাই তার অভিঘাত যে, দলীয় বৈঠকের মধ্যেই সর্বময় নেত্রী মমতা তাঁকে বলেছেন, পুরসভা ছাড়া কোনও বিষয়ে তিনি যেন প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করেন! একান্তই করতে হলে যেন নেত্রীর কাছ থেকে (দলের বক্তব্য) জেনে নেন।
আচম্বিতে মমতার ওই নির্দেশ সেই বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ নেতাকে হতচকিত, বিস্মিত এবং বাক্রুদ্ধ করেছিল। কারণ, ফিরহাদ দলের অন্দরে বরাবর মমতার ‘আস্থাভাজন’ বলেই পরিচিত। নইলে শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়রের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বিধানসভায় বিল এনে, আইন বদলে ফিরহাদকে তিনি কলকাতার মেয়র করতেন না। যত দূর মনে পড়ে, মমতা-ফিরহাদ প্রাচীন সমীকরণে এক বারই চিড় ধরেছিল। যখন তৎকালীন আলিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁর বদলে অধুনাপ্রয়াত তাপস পালকে টিকিট দেওয়ায় ফিরহাদ লোক জুটিয়ে কালীঘাটে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর আদিগঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। সেই নবজলধারায় ফিরহাদের অপ্রাপ্তির ইতিহাস ধুয়েমুছে গিয়েছে। তাপসকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট দেন মমতা। ফিরহাদ পান আলিপুর। যা এখন বন্দর বিধানসভা কেন্দ্র। ফিরহাদ যেখানকার বিধায়ক। তখন থেকে সব কিছুই মসৃণ চলছিল।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক খুব ‘মসৃণ’ নয় ফিরহাদের। যদিও মুখোমুখি দু’জনেই পরস্পরের সঙ্গে সহবতপূর্ণ ব্যবহার করেন। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
তা হলে কী হল?
তৃণমূলশ্রুতি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক খুব ‘মসৃণ’ নয় ফিরহাদের (শাসক শিবিরের মতে, আরও এক মন্ত্রীর সঙ্গেও অভিষেকের সম্পর্ক তেমনই ‘মধুর’ ছিল। কিন্তু সেই মন্ত্রী অতীব বুদ্ধিমান। তিনি নাকি এখন মেসির মতো খেলছেন। মূল বাঁ পা। কিন্তু ইদানীং ডান পায়ের কুঁচির কাজও শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন)। মেয়রের কিছু অনুগামী জনান্তিকে এমনও বলেন যে, অভিষেক চান, ফিরহাদও শুভেন্দু অধিকারীর মতো দল ছেড়ে চলে যান! যদিও মুখোমুখি দু’জনেই পরস্পরের সঙ্গে সহবতপূর্ণ ব্যবহার করেন।
দলের অন্দরে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি কার্যকর করা নিয়ে দুই প্রজন্মের দুই নেতার মধ্যে ফাটল খানিক চওড়া হয়েছিল। তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, ফিরহাদকে নাকি মন্ত্রী বা মেয়র— কোনও একটি পদ বেছে নিতে বলা হয়েছিল। ফিরহাদ নাকি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি নাকি জানিয়েছিলেন, শুধু মেয়র থাকতে তাঁর আপত্তি নেই। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে ফিরহাদের দফতর ছাঁটা পড়েছে। এ সবই ‘নাকি’, ‘যদি’ ইত্যাদি শব্দের আবডালে গচ্ছিত। এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন কোনও কালে মেলে না। এখানেও মেলেনি। কিন্তু কোথাও একটা কাঁটা যে খচখচ করছে, সেটা দলের সকলে জানেন।
সেই কণ্টকাকীর্ণ পথে কি আর চলতে চাইছেন না ফিরহাদ? তিনি কি তৃণমূলে তাঁর ফিনিশিং পয়েন্ট দেখতে পাচ্ছেন? তিনি কি কংগ্রেসে যেতে পারেন? সিপিএমে? না কি কোথাও না গিয়ে একটা নতুন দল বা মঞ্চ গড়ে রাজনীতিতে থাকতে পারেন? যেমন চারদিকে জল্পনা, আলোচনা, বিলোচনা চলছে?
মনে হয় না। মমতার প্রতি তাঁর আনুগত্য ‘হনুমানসুলভ’ (সম্প্রতি যখন একই দিনে রেড রোডে মমতা ধর্না দিয়েছেন এবং অভিষেক শহিদ মিনারে সভা করেছেন, তখন ফিরহাদকে একনিষ্ঠ ভাবে মমতার পাশটিতে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে দিনভর। তৃণমূলের অনেক নেতা-মন্ত্রী দুই মঞ্চেই ফিল্ডিং করেছেন। কিন্তু ফিরহাদ-সহ কয়েক জন রেড রোডেই থানা গেড়েছিলেন। কারণ, ফিরহাদ তাঁর দেবতার থানটি চেনেন)। সেই কারণেই পার্কিং ফি সংক্রান্ত কিলটি খেয়েও আপাতত হজম করেছেন তিনি (কুণালও ‘ক্লোজ্ড চ্যাপ্টার’ বলে বিষয়টির ইতি টানার সদিচ্ছা দেখিয়েছেন)। কিন্তু ভক্তি প্রবল বলে ফিরহাদের অভিমানও গন্ধমাদনপ্রমাণ (‘কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে, বাঁশি সংগীতহারা’ মন্তব্য স্মর্তব্য)। পুরসভায় মেয়রের একেবারে নিজস্ব এবং ঘনিষ্ঠ বৃত্তে তা ছুটকোছাটকা বেরিয়েও পড়ছে। সে কারণেই মমতা তাঁকে সর্বসমক্ষে পাশে নিয়ে নবান্নের সামনে সরকারি কর্মসূচিতে গেলেন। একান্তে কিছু কথা বললেন। দেখা গেল। ছবিও হল। তার পরে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে চা খাওয়ালেন। বলা বাহুল্য, ফিরহাদের ক্ষতে মলম দিতেই। কারণ, ইদানীং ফিরহাদ ঈষৎ দ্রব হয়ে আছেন। ঈষৎ বিমর্ষ। ঈষৎ দার্শনিক।
এর পাশাপাশিই ইদানীং তিনি খানিক তপতপেও হয়ে আছেন বুঝে ফিরহাদকে নিয়ে ইতিউতি কিছু প্রচারও হচ্ছে। কিন্তু তাতে মূল প্রশ্নের সুরাহা হচ্ছে না যে, মমতার সঙ্গে বিনা আলোচনায় কেন ফিরহাদ ঝপ করে পার্কিং ফি বাড়িয়ে দিতে গেলেন!
তৃণমূলের অন্দরে যাঁরা দীর্ঘ দিন রয়েছেন, তাঁরা জানেন, মমতা হলেন শোয়েব আখতারের মতো। ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতির ডেলিভারিতে বোলার্স ব্যাকড্রাইভ মারতে গেলে ব্যাট ভেঙে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু সেই বিভীষণ গতিকেই ব্যবহার করে, হাঁটু সামান্য মুড়ে, বলের গতিপথের নীচে ব্যাটটা পেতে দিয়ে আপার-কাট মারলে প্রায় বিনা চেষ্টায় থার্ডম্যানের উপর দিয়ে ওভার বাউন্ডারি হতে পারে। যেমন সচিন তেন্ডুলকর করেছিলেন। ফিরহাদের তৃণমূলীয় প্রজ্ঞা এবং মমতা-অভিজ্ঞতা এত কম নয় যে, তিনি সেটা বুঝতে পারবেন না বা সেই স্কিল তিনি দেখাতে পারবেন না। ইচ্ছে থাকলে পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েই করিয়ে নেওয়া যেত। কেন করলেন না ফিরহাদ?
তার আগে মন্ত্রিসভার সতীর্থ উদয়ন গুহের ‘চিরকুটে চাকরি’ মন্তব্যটিই বা কেন প্রকাশ্যে খণ্ডন করলেন? তা-ও অত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে? তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা বলছিলেন, ‘‘উদয়ন নিজের বাবার সম্মান বাজি রেখে দলের লাইন প্রতিষ্ঠা করেছে। সেটা ববি কেন বুঝল না? ওর মতো সিনিয়র নেতার তো বোঝা উচিত ছিল যে, ওটা নেত্রীরই লাইন।’’
কেন পুরসভার কাজে ‘স্বচ্ছতা’ ফেরাতে মেয়র ফিরহাদ ই-দরপত্র বাধ্যতামূলক করে দিলেন? কেন বললেন, ‘‘পার্কিং দফতর-সহ সমস্ত পুর দফতরে ই-টেন্ডার ডাকা হবে। পার্কিং দফতরে সম্প্রতি ফিজ়িক্যাল টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। তা নিয়ে অভিযোগ আসায় সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের অর্থ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী সমস্ত বিষয়ই ই-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আসতে হবে। বিগত দিনে ফিজ়িক্যাল টেন্ডারে অনেক সময় অস্বচ্ছতা ধরা পড়েছে। তাই সকলকে ই-টেন্ডারেই অংশ নিতে হবে।’’
ফিরহাদ কি ইচ্ছে করেই তৃণমূলের মধ্যে থেকেও একটা আলাদা এবং নিজস্ব ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করতে চাইছেন? নিজের আলাদা ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাইছেন যে, তৃণমূলের মধ্যে তিনিই বিবেক। কর্মদক্ষ তো বটেই। তিনি একই সঙ্গে স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। প্রগতিবাদী, যুক্তিবাদী এবং বাস্তববাদী।
ফিরহাদ নিজের দলকে চেনেন। তাই কি নিজের চারদিকে একটা অদৃশ্য বেড়া বানাচ্ছেন? তিনি কি গুড় থেকে খেজুর হয়ে উঠছেন ক্রমশ?
বিজ্ঞজন এবং ভোজনরসিকেরা জানবেন, খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় দুধে ফেলা হলে সেটা দুধে মিলেমিশে যায়। দুধ মিষ্টি হয়। কিন্তু গুড়ের আর কোনও অস্তিত্ব থাকে না। সে দুধেরই অংশ হয়ে যায়। কিন্তু খেজুর মেশে না। সে দুধে একটু হলদেটে ভাব, একটু মিষ্টি গন্ধ আনে বটে। কিন্তু আলাদাই থেকে যায়। তাকে দুধে মিশিয়ে ফেলা যায় না।
ফিরহাদ কি খেজুরের গুড় থেকে খেজুর হয়ে উঠছেন? উল্টো রাস্তায় হাঁটছেন? ফিরহাদ কি দুধের মধ্যে থেকেও দুধে মিশে যেতে চাইছেন না?
ইতিহাস এবং স্মৃতি বলছে, কলকাতার মেয়র থাকাকালীন একই চেষ্টা করেছিলেন অধুনাপ্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়। হকার-উচ্ছেদ, বস্তি-উচ্ছেদের মতো বিবিধ বিষয়ে ‘প্রশাসক’ সুব্রতের সঙ্গে ‘রাজনীতিক’ মমতার লাগত। অন্তত তিন বার দু’পক্ষের অনড় মনোভাবে বোর্ড ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ‘বানরসেনা’ হয়ে সেতুবন্ধন করেছিলেন (জল) শোভন। কিন্তু এখন সময় বদলে গিয়েছে। এখন তৃণমূলে শোভন নেই যে, ঝাঁপিয়ে পড়ে গোললাইন সেভ করবেন! মমতাও এখন নিছক বিরোধী নেত্রী নন। তিন-তিন বার কঠিন থেকে কঠিনতর নির্বাচন জিতে তিনি বাংলার দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্রী। আর ফিরহাদও আর যা-ই হন, ‘সুব্রত’ নন।
তবে তৃণমূলেরই অনেকে মনে করেন, তর্কযোগ্য ভাবে ফিরহাদ সম্ভবত স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল মুসলিম নেতা। তাঁরা বলেন, সফল ছিলেন গনি খানও। কিন্তু সেটা মালদহ-কেন্দ্রিক। সফল ছিলেন আবদুস সাত্তারও। কিন্তু সেটা তাঁর নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে। ফিরহাদের প্রতাপ এবং প্রভাব তার চেয়ে অনেক বেশি। আবার ফিরহাদ ধর্মনিরপেক্ষও বটে। নইলে ভক্তিভরে কালীপুজো (ফিরহাদ তাঁর চেতলার ক্লাবে বিখ্যাত দুর্গাপুজোও করেন, কিন্তু সেটা অনেক বেশি ‘উৎসব’। কালীপুজোটা ভক্তির) করতেন না। এমন নেতা দলে না থাকলে তৃণমূলের পক্ষে সেটা কি ভাল হবে? আবার তৃণমূলে না থাকলে সেটা কি ফিরহাদের পক্ষেও ভাল হবে? মনে হয় না। বাস্তব বলে, উভয়েরই উভয়কে প্রয়োজন। দলের এই সঙ্কটসময়ে আরও বেশি প্রয়োজন।
তবে কিনা ফিরহাদ অভিজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান রাজনীতিক। তিনি বিলক্ষণ জানেন, উড়তে গেলে প্যারাসুটটাও তৈরি রাখতে হয়। যাতে পতন হলেও সেটা সহনীয় হয়। যাতে হাড়গোড় না ভাঙে। যাতে আবার নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ানো যায়।
আপাতত তিনি কি সেই প্যারাসুট তৈরিতে ব্যস্ত?
(গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ)