Lok Sabha Election 2024 Result

তৃতীয় বার শপথগ্রহণের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাল্পনিক ‘মন কি বাত’ শুনলেন প্রাক্তন আমলা

এই প্রথম গণতান্ত্রিক ভারতে কোনও প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় বারের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ উদ্দীপিত। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ইমেল পাঠাচ্ছেন অভিনন্দন জানিয়ে।

Advertisement

অর্ধেন্দু সেন

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪ ০৯:০১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

আজি হতে সহস্রবর্ষ পরে

Advertisement

কে তুমি শুনিছ বসি আমার ‘মনের কথা’

শ্রদ্ধা-ভক্তি ভরে?

Advertisement

আজি হতে সহস্রবর্ষ পরে!

আজ দেশে মহোৎসব। লক্ষ মানুষের ভিড় রাস্তায়। কারও হাতে কাঁসর-ঘণ্টা। কেউ বা বাজায় ভেরী। আদিবাসীরা ধামসা-মাদল নিয়ে উল্লাসে মত্ত। আজ তাদের সকলের প্রিয় নেতার প্রধানমন্ত্রিত্বে তৃতীয় বারের অভিষেক। এই প্রথম গণতান্ত্রিক ভারতে কোনও প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় বারের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ উদ্দীপিত। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ইমেল পাঠাচ্ছেন অভিনন্দন জানিয়ে। ইতিমধ্যেই আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়ার পুতিন, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী— চিঠির উত্তর দিতে দিতেই দিন চলে যাচ্ছে! কাজ করব কখন?

আমি কিন্তু নিজেকে শুধু আজকের ভারতের নেতা বলে মনে করি না। আমি জানি, হাজার বছর ধরে ভারতের মানুষ আমায় পুজো করবে। ইংরেজ কবি বার্নার্ড শ অবশ্য বলেছেন, আগামী প্রজন্ম বিশ্বাসই করবে না এত ভাল মানুষ কোনও দিন এই পৃথিবীতে হেঁটেচলে বেড়িয়েছেন। তা-ও আমি নিশ্চিত, আমার যা কাজ, যা পরিকল্পনা, তার প্রভাব থাকবে হাজার বছর। হাজার বছর ধরে মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। এবং কৃতজ্ঞচিত্তে আমাকে স্মরণ করবে। আজ আমার ‘মন কি বাত’ সেই অচেনা বন্ধুর উদ্দেশে, যার হৃদয়ে আমি হাজার বছর পরেও বিরাজমান। আমি নির্দেশ দিয়েছি, আজকের দিনটা প্রতি বছর বিজয় দিবস হিসাবে পালন করতে। সে নির্দেশ ঠিকমতো পালিত হচ্ছে তো? দেখার দায়িত্ব কিন্তু তোমাদের।

ভারত হিন্দুদের দেশ। এই সহজ কথাটা দেশবাসীকে বোঝাতে আমায় এবং আমার সহকর্মীদের প্রাণপাত পরিশ্রম করতে হয়েছে। শেষমেশ আমরা সফল হয়েছি। কিন্তু অনেক ফাঁক রয়ে গেছে। তোমরা জানতে চাইবে, ঠিক কবে, কোন সালে তোমাদের এই প্রিয় নেতা রাজত্ব করেছেন? কেউ দেবে খ্রিস্টাব্দের হিসাব, কেউ বলবে শকাব্দ। হিন্দুর দেশে খ্রিস্টাব্দ কেন? মহারাজ বিক্রমাদিত্য শুরু করেছিলেন বিক্রম সম্বত। কিন্তু তার হিসাব সর্বসম্মত নয়। তাই আমার মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র সম্বত চালু করার। এই বছরই তার শুভারম্ভ। তোমাদের ‘বার্থ সার্টিফিকেট’ নিশ্চয়ই লেখা হয়েছে এই নতুন দিনপঞ্জি অনুযায়ী। আজকের এই বিশেষ দিনটির সম্মানে অল্পসংখ্যক স্বর্ণমুদ্রাও ছাড়া হয়েছে বাজারে। সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের পরে এই প্রথম।

এ দেশে এখনও প্রতি সপ্তাহে রবিবার ছুটি। ইংল্যান্ড, আমেরিকায় রবিবার ছুটি দেওয়া যেতেই পারে। কারণ বাইবেল বলে, ঈশ্বর ছয় দিনে বিশ্ব সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। কিন্তু বাইবেল তো হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ নয়! আমাদের আছে ঋগ্বেদ, সামবেদ, ভগবদ্‌গীতা, রামায়ণ, মহাভারত। এই গ্রন্থেও নিশ্চয়ই ছুটির নির্দেশ আছে। আমাদের উচিত, গবেষণায় তা আবিষ্কার করা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কি রবিবার বন্ধ থাকত? খড়্গপুর আইআইটি দায়িত্ব নিয়ে খুঁজে বার করুক। হিন্দুদের একটা বদ অভ্যাস, বশ্যতা স্বীকার করা। সারা জীবন আমাকে লড়তে হয়েছে এই ‘মাইন্ডসেট’-এর বিরুদ্ধে। আর লড়তে হয়েছে আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমলাদের কথাও বলব। তবে আর এক দিন।

হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে তোমরা নিশ্চয়ই অবগত। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন, সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং শ্রেষ্ঠ ধর্ম। সনাতন ধর্ম বলেও পরিচিত এই ধর্ম অন্য ধর্মের বিরোধিতা শেখায় না। এর মন্ত্র হল বসুধৈব কুটুম্বকম্‌। জ্যোতির্বিজ্ঞান, আয়ুর্বেদ, বাস্তুশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে হিন্দুরা অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। পৃথিবীতে যখন মোটরগাড়ি চালু হয়নি, হিন্দুরা তখন মহাকাশযানে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দিয়েছে। চরক, সুশ্রুতের নেতৃত্বে চিকিৎসায়, শল্যচিকিৎসায় আমরা ছিলাম সকলের আগে। সিদ্ধিদাতা গণেশের নিজের মাথার পরিবর্তে নিখুঁত ভাবে হাতির মাথা বসিয়েছিলেন আমাদেরই সার্জন। তোমরা অবশ্য এ সব দেখে অভ্যস্ত।

ভারতের বিপুল সম্পদের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। দস্যু-লুটেরা চলে আসে সেই সম্পত্তির লোভে। মুহুর্মুহু বিদেশিদের আক্রমণে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। আমার শাসনের ৭০ বছর পূর্বে দেশ স্বাধীন হলেও দুর্বলতা রয়ে যায়। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমি একাধিক পদক্ষেপ করি। দেশের সুরক্ষা নিরাপত্তায় চালু হয় ‘আত্মনির্ভর’ প্রকল্প। ভারতেই তৈরি হয় নৌবাহিনীর জাহাজ কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট এবং বিভিন্ন ধরনের ড্রোন। অস্ত্রশস্ত্রের রফতানি এ বছর ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আমাদের সেনাবাহিনীর নামে বিদেশের শত্রুরা কম্পমান। ২০২০ সালে চিন চেষ্টা করেছিল লাদাখ সীমান্ত আক্রমণ করার। এমন শিক্ষা পেয়েছে যে, চার বছর আর ওমুখো হয়নি।

দেশের উত্তর ও পশ্চিমে হিন্দুদের গড় অটুট আছে। রানাপ্রতাপ ও শিবাজির পরাক্রমের কথা তোমাদের স্কুলের পাঠ্যসূচিতে আছে তো? পূর্বে আর দক্ষিণে আমাদের শক্তি এখনও কম। অতি সম্প্রতি আমরা কলিঙ্গ দেশে অভিযান চালিয়ে সে দেশ জয় করেছি। ভয় নেই। আমি সম্রাট অশোকের মতো বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করছি না। তবে শিলালিপির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে আমি উৎসাহী। তাতে নাগরিকেরই উপকার হবে সন্দেহ নেই। দেখি রেল মন্ত্রকের সেল্‌ফি পয়েন্টগুলো এ কাজে লাগানো যায় কি না!

তোমরা জানো কি ২০২০ সালের কোভিড অতিমারি গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে তছনছ করে দেয়? এখনও সব দেশ পারেনি সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে। বলতে গর্ব হচ্ছে যে, ভারত অতিমারির প্রকোপ থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসেছে। ভারতের সরবরাহ করা কম দামি ভ্যাক্সিন তৃতীয় বিশ্বকে বাঁচিয়ে দেয়। ভারত দেশ ও তার প্রধানমন্ত্রী পরিচিত হয় ‘বিশ্বগুরু’ নামে। সেই সঙ্গে ভারত সর্বসম্মতিক্রমে জি২০ সম্মেলনের প্রধান নির্বাচিত হয়। প্রত্যাশিত ভাবেই এর পরে বিশ্বে ভারতের সম্মান বাড়তে থাকে। দায়িত্বও বাড়ে। যেখানেই যুদ্ধ শুরু হয়। ভারতের ডাক পড়ে মধ্যস্থ হয়ে যুদ্ধ থামিয়ে দিতে। ইউক্রেনেও তাই হয়। প্যালেস্টাইনেও তাই। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আমার নেতৃত্বে হিন্দুদের অপ্রতিরোধ্য উন্নতিতে সকলেই খুশি হয়নি। ভারতের সম্মান যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে শত্রুদের ঈর্ষা। আমরা এখন নানা ধরনের আজগুবি প্রচারের শিকার। কেউ বলে আমাদের দেশে অসাম্য সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। কেউ বলে গণতন্ত্র অস্তমিত। কোনও রিপোর্ট বলছে, দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। কারও মতে, ক্ষুধার সূচক অনুযায়ী আমাদের স্থান একেবারে নীচের দিকে। বলা বাহুল্য, এ সবই হল পাগলের প্রলাপ। এ সব কথা তোমাদের কানে যায়নি। তার কারণ, দুরভিসন্ধিমূলক অপপ্রচারের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

(লেখক পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব। মতামত নিজস্ব।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement