Artificial Intelligence

নতুন দুনিয়ায় মানিয়ে নেওয়া

ফোর্বস টেকনোলজি কাউন্সিল এমন তেরোটি পেশার কথা উল্লেখ করেছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।

Advertisement

শৈবাল কর

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪১
Share:

ভবিষ্যতে রোবটের জন্য কাজ হারাতে পারেন অনেকে। প্রতীকী চিত্র।

এক খ্যাতনামা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংস্থার কর্ণধার শন চৌ জানিয়েছেন যে, রোবটরা এখনও তেমন বুদ্ধি ধরে না— বিশেষত, নিজস্ব বুদ্ধি ব্যবহার করে কাজ সম্পন্ন করা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাদের এখনও যথেষ্ট সীমিত। তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপুল গবেষণা ও বিপুলতর পুঁজি শুধু কল্পলোকের জোগানদার হয়েই থাকবে, এমন দুরাশা না করাই ভাল। এখনই চ্যাটবট বিবিধ ছোট-বড় কাজের সঙ্গী হয়েছে, শল্য চিকিৎসা থেকে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন, বিভিন্ন পরিসরে রোবটের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান। ফলে, ভবিষ্যতের কাজের বাজারে কৃত্রিম মেধা ঘোরতর প্রভাব ফেলবে বলেই আশঙ্কা।

Advertisement

ফোর্বস টেকনোলজি কাউন্সিল এমন তেরোটি পেশার কথা উল্লেখ করেছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে বিমাক্ষেত্রে দায়ভার নির্ধারণ করার কাজ, গুদাম রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কিংবা কায়িক শ্রম নির্ভর উৎপাদনের কাজ, গ্রাহক পরিষেবার কাজ, ডেটা এন্ট্রির কাজ ইত্যাদি। এ ছাড়া হিসাবরক্ষক, প্যারালিগাল চাকরি, রেডিয়োলজিস্টের মতো কয়েকটি পেশায় চাকরি আর সৃষ্টি না-ও হতে পারে আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে। অর্থাৎ, এমন কিছু কাজ যা শিখিয়ে নেওয়া যায়, তা কৃত্রিম বুদ্ধিনির্ভর মেশিন করতে পারবে প্রচলিত প্রযুক্তির সাহায্যেই। প্রযুক্তি উন্নত হলে গবেষণাগারেও ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করে যেতে পারে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা। ফলে, ২০২৫ সালে প্রায় সাড়ে আট কোটি চাকরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আওতায় চলে যেতে পারে। তবে, কৃত্রিম বুদ্ধি ব্যবহারকারী সংস্থাগুলো সাড়ে ন’কোটি নতুন চাকরি সৃষ্টিও করবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে কিছু পেশায় মানুষের কাজের সুযোগ কমবে, আসল সমস্যা সেটা নয়। এক পেশা থেকে অন্য পেশায় মানুষকে কী ভাবে স্থানান্তরিত করা যায় ন্যূনতম ক্ষতির মধ্যে দিয়ে, তা-ই হল মূল চিন্তার বিষয়। এক ভাবে বললে, প্রশ্নটা এই রকম: এক জন পেশাদার কৃষককে কী ভাবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার করে তোলা যায়? অন্তত, তাঁর পরবর্তী প্রজন্মকে? উন্নত দেশেও এই পরিবর্তন খুব সহজ নয়, অনেক সমস্যা আছে। উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি। কাজেই, অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার সুরাহা করা সহজ হবে না।

Advertisement

তবে আগাম তথ্য এবং বিবেচনা ব্যবহার করে যাঁরা শিক্ষা ও কাজের প্রকৃতি বদলে ফেলতে পারবেন, তাঁদের চাকরির অভাব নেই। যেমন, আগে একটা ভিডিয়ো গেম তৈরি করতে এক জন সর্ব ক্ষণের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ থাকলেই হত। তার পর গেমটি সবাইকে শেয়ার করে দিয়ে কাজ শেষ ছ’মাসের মধ্যে। আর এখন বহুল প্রচলিত ভিডিয়ো গেম তৈরি করতে প্রায় একটা ছোট শহরের মতো পরিকাঠামো লাগে, যেখানে অসংখ্য প্রযুক্তিবিদ এবং কর্মী ফিল্ম স্টুডিয়োর অনুকরণে কাজ করে চলেন বছরভর। আর এর দরুন অন্য শিল্পকর্মীদের চাকরি? পরিষেবা ক্ষেত্রের উপরে প্রভাব? হিসাব কষলে সংখ্যাটা মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো মনে করছে যে, ফরেনসিক বিজ্ঞানী, আর্থিক বিশেষজ্ঞ, ভূতাত্বিক প্রযুক্তিবিদ থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্রে হিসাবরক্ষকের চাকরি— সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনুষঙ্গে ক্রমশ বাড়বে। কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার হবে সীমিত— মনোরোগবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, অপরাধের বিচার, শিক্ষকতা, মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা, গল্প-উপন্যাস-কবিতা লেখার মতো ক্ষেত্রে। কিছু সংস্থা তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে, যাতে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার চালু হলে বা বাড়লে তাঁরা সঙ্কটে না পড়েন।

এই বিষয়ে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন যাঁরা কর্মরত, তাঁদের মধ্যে কত জন কৃত্রিম মেধার প্রসারের ফলে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবেন, বা কাজ হারাবেন, সমীক্ষার মাধ্যমে তার একটি ম্যাপিং করা প্রয়োজন। তার পর সিদ্ধান্ত করতে হবে, এই শ্রমিকদের কত জনকে নতুন পেশায় যেতে সাহায্য করবে সরকার, আর কত জনকে পুরনো পেশায় থেকে যেতে উদ্বুদ্ধ করবে। যাঁরা পুরনো চাকরিতে দক্ষতার নিরিখে উচ্চতম কক্ষে বিচরণ করতেন, তাঁদের পক্ষে নিজস্ব প্রচেষ্টায় নতুন কাজে চলে যাওয়া খুব শক্ত হবে না। তাঁদের আয়ও সম্ভবত বাড়বে। যাঁরা পুরনো চাকরিতে দক্ষতার মাঝের সারিতে রয়েছেন, তাঁরা যদি কৃত্রিম বুদ্ধির দাপটে চাকরি বদলাতে বাধ্য হন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিন্তু নতুন পেশায় নীচের দিকে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, ফলে আয়ও কমতে পারে। তেমন কর্মীদের ক্ষেত্রে অন্তত কিছু দিন ভর্তুকি দিয়ে তাঁদের আয় পুরনো স্তরে বজায় রাখা যেতে পারে। যাঁরা তুলনামূলক ভাবে অদক্ষ কর্মী, তাঁরা উচ্চপ্রযুক্তি-নির্ভর নতুন সংস্থায় সম্ভবত যথেষ্ট উৎপাদনশীল হবেন না। এমন কর্মীদের ক্ষেত্রে সরকার একটা সংস্থা-ভিত্তিক ভর্তুকি দিতে পারে, যাতে পুরনো চাকরিগুলো বজায় থাকে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে অস্বীকার করা অনর্থক, বরং তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মন দেওয়া জরুরি।

অর্থনীতি বিভাগ, সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশাল সায়েন্সেস, কলকাতা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement