india

উত্তপ্ত সীমান্ত

সাময়িক স্বার্থ সংঘর্ষ ছাপাইয়া শেষ পর্যন্ত দিল্লির সহিত সমঝোতা ভিন্ন পথ কি কাঠমান্ডুর কাছে রহিয়াছে? সেই দিক হইতে দেখিলে, এমন একটি অবিবেচক পদক্ষেপ কাঠমান্ডুকে কূটনৈতিক আলোচনার টেবিলে অনেকখানি পিছাইয়া দিতেছে, এমন কথা বলাই যায়। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০০:০১
Share:

লিপুলেখ, লিমপিয়াধুরা ও কালাপানি। সংসদের অধিবেশন বসাইয়া, সংবিধান সংস্কার করিয়া উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার তিন এলাকা নিজেদের নূতন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করিল নেপাল। কেবল তাহাই নহে, নেপালের সেনাবাহিনী সীমান্তের কাছে অকস্মাৎ একটি হেলিপ্যাড তৈরি করিয়া ফেলিল, তাঁবুও বসাইয়া দিল। ভারতের ক্ষুদ্রকায় নিকট প্রতিবেশীর এই সকল সিদ্ধান্ত নিশ্চিত ভাবেই হঠকারী। ভারত সরকার ঠিকই বলিয়াছে, নেপালের এই কৃত্রিম ভাবে সীমান্ত বাড়াইবার চেষ্টা অসঙ্গত, আপত্তিকর। তবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী খড়্গপ্রসাদ ওলি অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া অসতর্ক ঝুঁকি লইয়াছেন, এমন নহে। তাঁহার হিসাব পরিষ্কার: নিজের রাজনৈতিক স্বার্থের হিসাব। কিছু কাল পূর্বে প্রশ্নাতীত ক্ষমতা ভোগ করা ওলির রাজনৈতিক কেরিয়ারে সঙ্কটের মেঘ ঘনাইতেছিল। সেই যাত্রায় কাঠমান্ডুতে বেজিং-এর কূটনীতিক তাঁহার রক্ষাকর্তা হইয়া উঠিয়াছিলেন। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে ওলির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পুষ্প কমল দহল ‘প্রচণ্ড’ ও মাধব কুমার নেপালের সহিত প্রধানমন্ত্রীর মিটমাটের বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন ওই কূটনীতিক। এক পক্ষ হইতে সুবিধা আদায় করিতে অপর পক্ষের সহিত উদ্দেশ্যমূলক গাঁটছড়া বাঁধার কূটনীতি। কিন্তু বেজিং-এর সহিত ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির খেলাটিতেই ভারতের সহিত কাঠমান্ডুর সম্পর্কে বড় মাপের গোলমাল ঘটিয়া গেল। ভারত ও নেপাল নানাবিধ উপায়ে পরস্পরের সহিত জড়িত। দক্ষিণ এশিয়ায় নেপালের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী ভারত। ভারতের সহিত নেপালের যে বন্ধন, তাহা চিনের সহিতও নাই। সাময়িক স্বার্থ সংঘর্ষ ছাপাইয়া শেষ পর্যন্ত দিল্লির সহিত সমঝোতা ভিন্ন পথ কি কাঠমান্ডুর কাছে রহিয়াছে? সেই দিক হইতে দেখিলে, এমন একটি অবিবেচক পদক্ষেপ কাঠমান্ডুকে কূটনৈতিক আলোচনার টেবিলে অনেকখানি পিছাইয়া দিতেছে, এমন কথা বলাই যায়।

Advertisement

অবশ্য ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপণ লইয়াও প্রশ্ন কম গভীর নহে। মানচিত্র-সঙ্কট তো নূতন নহে। গত বৎসর নভেম্বরে যখন জম্মু ও কাশ্মীরের নূতন সীমানা চিহ্নিত করিতে ভারত মানচিত্র প্রকাশ করিয়াছিল, তখনই তো নেপালের তরফে আপত্তি আসিয়াছিল। কিন্তু তাহার সমাধান না করিয়া ফেলিয়া রাখাই শ্রেয় মনে করিয়াছিল নয়াদিল্লি। গত ৮ মে চিন সীমান্তে লিপুলেখ গিরিখাত যাইবার সড়কটি উদ্বোধন করে ভারত, এবং আরও এক বার উদ্বেগ প্রকাশ করে ওলি সরকার। না মানিয়া উপায় নাই, প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসিবার পর হইতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির কথা বলিয়া আসিলেও দিল্লির তরফে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সহিত সুসম্পর্ক তৈয়ারির কোনও ইচ্ছা দেখা যায় নাই। অপর পক্ষে, বহু বছর ধরিয়া নির্মীয়মাণ একটি সড়ক লইয়া এত দিনে নেপালের এত আপত্তির কারণও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, কূটনীতি নহে। নেপালের এখন ভারতবিরোধী মনোভাব ক্রমবর্ধমান। ভুলিলে চলিবে না, ২০১৫ সালে মাসাধিক কাল ব্যাপী অবরোধের সাক্ষী ছিল নেপাল, নয়াদিল্লির নীরব সম্মতি ব্যতিরেকে যাহা অসম্ভব। দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা যে স্তরে পৌঁছাইতেছে, তাহার দ্রুত প্রশমন দরকার। এক দিকে চিনের সঙ্গে ও অন্য দিকে নেপালের সঙ্গে সঙ্কট বৃদ্ধি করিয়া ভারত নিজের কোনও উপকার করিতেছে না। কোভিডের জন্য কোনও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া স্থগিত না রাখিয়া দিল্লিকেই আগাইতে হইবে। এখনই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করিয়া পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাইতে হইবে। অনেক বিলম্ব হইয়া গিয়াছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অনেক ক্ষতি ঘটিয়াছে। অতি নিকট প্রতিবেশীর সহিত এত ভুল বোঝাবুঝি, এত অপরিণামদর্শী কূটনীতি চলিতে পারে না। দ্রুত পথ সংশোধন জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement