নূতন বাস্তব

হিসাব একটিই, ট্রাম্পের সহিত বন্ধুত্ব পাতাইতে হইবে। দোষারোপ করিব, আবার বিপদকালে সহায়তা প্রার্থনা করিব— এই রূপ ‘দ্বিচারিতা’ ট্রাম্প পছন্দ করেন না। অতএব, তাহার মিত্র হইলে আর ভর্ৎসিত হইবার আশঙ্কা নাই। ইহাই মার্কিন দেশের নূতন বাস্তব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্ধ হইয়াছেন। এবং জানাইয়া দিয়াছেন: প্রলয় বন্ধ। তাঁহার দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সত্য ফাঁস করিয়া বলিয়াছে, সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনে সরাসরি যুক্ত সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। অথচ, সেই হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের ভূমিকা মানিতে নারাজ ট্রাম্প। অডিয়ো নথি হাতে আসিবার পর বলিয়াছেন, উহা শুনিবার প্রয়োজন নাই। যুবরাজ যুক্ত থাকিতেও পারেন, কিংবা না-ও পারেন, কেহ তাহা যথার্থ রূপে জানেন না। দার্শনিকসুলভ মন্তব্য, সন্দেহ নাই। কিন্তু, ট্রাম্প দার্শনিক নহেন, রাজনীতিক। বাস্তবে মোক্ষম কূটনৈতিক চাল দিয়াছেন প্রেসিডেন্ট। অর্থাৎ, যুবরাজ দোষী হইলেও তাহা লইয়া বিন্দুমাত্র বিব্রত নহে মার্কিন প্রশাসন। বস্তুত, ট্রাম্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হইল ইরানকে কোণঠাসা করা। ইতিমধ্যেই তেল, আর্থিক ও ব্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে ইরানের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই পদক্ষেপ কার্যকর করিতে হইলে মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধু হিসাবে সৌদি আরবকে তাঁহাদের একান্ত প্রয়োজন। অতএব, সলমনকে দোষারোপের ছোঁয়া হইতে আগলাইয়া রাখা ট্রাম্পের কর্তব্য। স্পষ্ট পদক্ষেপ। ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্টদের সহিত গোয়েন্দাদের মতবিরোধ হয় নাই, এমন নহে। ইরানের সহিত পরমাণু চুক্তির যাথার্থ্য বুঝাইবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই-এর পরমাণু অস্ত্রবিরোধী ফতোয়ার উল্লেখ করিয়াছিলেন বারাক ওবামা, যাহা গোয়েন্দাদের মতের সহিত মেলে নাই। কিন্তু, তখন সমালোচনার ঝড় এই রূপ তীব্র হয় নাই। অবশিষ্ট বিষয়ের ন্যায় ইহাতেও ট্রাম্পের দাম্ভিক উচ্চারণই প্রাথমিক ভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়াছে।

Advertisement

ট্রাম্পের বিদেশনীতি কঠোর বাস্তববাদীও বটে। ইতিপূর্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী শাসকদের সহিত ঘনিষ্ঠতা করিয়াছে আমেরিকা। তবে তাহাতে ভাবমূর্তি রক্ষার দায় ছিল। চিলির অগুস্তো পিনোশে, ইরানের শাহ কিংবা মিশরের হোসনি মুবারকের অন্তিম পরিণতিতে মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকার আলোকে তাহা সুবিদিত। কিন্তু ট্রাম্পীয় বাস্তবে বলে, শুভ-অশুভ বিচার নহে, অধিক গুরুত্বপূর্ণ আপন বাণিজ্যিক স্বার্থ। এগারো হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের অস্ত্র কিনিবার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রিয়াধ, দাম কমাইবে তেলেরও— সুতরাং, উহাই বিবেচ্য। ভূতপূর্ব প্রেসি়ডেন্টরাও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ধিক্কার জানাইতেন। শেষাবধি বাণিজ্যের স্বার্থে সৌহার্দ্য রক্ষা করিতেন, তবে চক্ষুলজ্জা ভুলিয়া নহে। ইহা নিঃসন্দেহে অস্বচ্ছতা, তবে নৈতিকতার মুখোশটি খসিয়া পড়িলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হইবার আশঙ্কা করা চলে। আপন নাগরিকদের উপর শত বেড়ি পরাইয়া পাশ্চাত্য দেশগুলির আতঙ্কে কিঞ্চিৎ দুশ্চিন্তায় থাকে চিন বা রাশিয়া। মার্কিন মানদণ্ড বদলাইয়া গেলে কোনও নাগরিককে ‘গায়েব’ করিবার পরেও নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাইবেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ এল-সিসি। হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিবেন শি চিনফিং বা ভ্লাদিমির পুতিনও। হিসাব একটিই, ট্রাম্পের সহিত বন্ধুত্ব পাতাইতে হইবে। দোষারোপ করিব, আবার বিপদকালে সহায়তা প্রার্থনা করিব— এই রূপ ‘দ্বিচারিতা’ ট্রাম্প পছন্দ করেন না। অতএব, তাহার মিত্র হইলে আর ভর্ৎসিত হইবার আশঙ্কা নাই। ইহাই মার্কিন দেশের নূতন বাস্তব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement