Health

জনস্বার্থ ও চিকিৎসক

জনস্বার্থে কাজ করিতে গিয়া চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা, সরকারের গাফিলতি প্রকাশ করিলেই শোরগোল পড়িয়া যায়

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২০ ০২:০৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

মহামারির সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি সঙ্কট দেখা দিয়াছে। বেঙ্গালুরুর বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক হাসপাতাল-মালিকের রোষের মুখে পড়িয়াছেন। ওই চিকিৎসকের অপরাধ, জ্বরাক্রান্ত রোগী সরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করাইতে রাজি না হইলে তিনি ওই রোগীর পরিচয় জানাইয়াছেন স্বাস্থ্য দফতরকে। চিকিৎসকের এমন ‘অতি-সক্রিয়তা’য় ক্ষুব্ধ হইয়া হাসপাতাল কর্তা সেই চিকিৎসককে কাজ হইতে খারিজ করিয়াছেন বলিয়া অভিযোগ। এমন ঘটনা ব্যতিক্রম নহে। এই রাজ্যেও অভিযোগ উঠিয়াছিল, ডেঙ্গির প্রকোপ গোপন করিতে চিকিৎসকদের ‘ডেঙ্গি’ না লিখিয়া ‘অজানা জ্বর’ লিখিতে চাপ সৃষ্টি করিতেছে স্বাস্থ্য দফতর। ২০১৭ সালে এক সরকারি চিকিৎসক বিষয়টি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করিলে তাঁহাকে সাসপেন্ড করা হয়। দুই বৎসর ‘তদন্ত’ করিয়া অতি সম্প্রতি তাঁহাকে পুনর্বহাল করিয়াছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু কী ভুল তিনি করিয়াছিলেন? রোগ কত ব্যাপক হইয়াছে, চিকিৎসা-ব্যবস্থার দুর্বলতা কোথায়, তাহা প্রকাশ করিবার দায়িত্ব কি চিকিৎসকের নহে? চিকিৎসক কি নেতা-ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আঘাত করিবার ভয়ে জনস্বাস্থ্য বিপন্ন করিবেন? ইবসেনের অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল নাটক অনুসরণে সত্যজিৎ রায়ের ‘গণশত্রু’ ছবিতে দেখা গিয়াছে: মন্দিরের দূষিত জল হইতে পেটের অসুখ ছড়াইতেছে, এ সত্যটি প্রকাশ করিতে এক চিকিৎসকের উপরে তীব্র আঘাত নামিয়াছিল।

Advertisement

সেই চিত্রনাট্যের পুনরভিনয় হইতেছে। জনস্বার্থে কাজ করিতে গিয়া চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা, সরকারের গাফিলতি প্রকাশ করিলেই শোরগোল পড়িয়া যায়। কোভিড-১৯ সংক্রমণ তাহার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। ভারতে হাসপাতালের সহিত চিকিৎসকের সংঘাত বাধিয়াছে নীতি অনুসরণের প্রশ্নে। অন্যত্র সংঘাত বাধিয়াছে নীতির ভ্রান্তি লইয়া। উত্তর ইটালির বেরগামো শহরে এক চিকিৎসক সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তুলিয়াছেন, এই ভয়ানক অতিমারির সম্মুখে দাঁড়াইয়া রোগের আতঙ্কের বিরুদ্ধে প্রচার করা সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়, না কি অসাবধানতা এবং অবহেলার সহিত লড়াই করা? বেরগামোতে করোনা সংক্রমণ তীব্র হইয়াছে। এক ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবিলা করিতে হইতেছে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের, চব্বিশ ঘণ্টাই কাজ করিতেছেন তাঁহারা। এই চরম বিপদের সময়ের জন্য কেমন বার্তা যথাযথ, সেই প্রশ্ন তুলিয়াছেন ওই চিকিৎসক। জেনিভার এক চিকিৎসকও লিখিয়াছেন, ‘ইউরোপে সংবাদমাধ্যম আশ্বস্ত করিতেছে, নেতারা আশ্বস্ত করিতেছেন, অথচ খুব সামান্যই আশ্বাস দেওয়া যাইতে পারে।’ অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছেন, সরকারি স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রচারিত বার্তা অকারণ পরীক্ষা করাইবার ঝোঁক বাড়াইতেছে। আপৎকালে প্রয়োজন স্থৈর্যের। মহামারি করাল রূপ ধারণ করিতেছে, তাহার মোকাবিলায় সুসংহত, সুশৃঙ্খল উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেই উদ্যোগে ত্রুটি কোথায় থাকিতেছে, তাহার প্রতিও সতর্ক দৃষ্টি প্রয়োজন। চিকিৎসকের বিচারে যে সমস্যাগুলি গুরুত্বপূর্ণ মনে হইতেছে, তাহা স্বাস্থ্যকর্তাদের বিবেচনায় স্থান না পাইলে মহামারির মোকাবিলায় ফাঁক থাকিয়া যাইবে। অনেক প্রাণ অপচয় হইবে। চিকিৎসকের ভূমিকাটি কেবল পরিষেবা দানের নহে, পরামর্শ দানেরও। চিকিৎসকদের কথার মর্যাদা দিতে হইবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement