প্রতীকী ছবি।
ভারতকে আজ অবহেলার খেসারত দিতে হইতেছে প্রাণের মূল্যে। যক্ষ্মা বা ডায়াবিটিসের মতো রোগের অতি দ্রুত বিস্তার ঘটিতেছে ভারতে, তাহা জানিয়াও সরকার প্রতিরোধে গা করে নাই। আজ সেই সকল রোগই মাথাব্যথার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে, কারণ সেগুলি কোভিড-সংক্রমিত রোগীর প্রাণের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়াইতেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশ দিয়াছে, সকল যক্ষ্মা রোগীর কোভিড পরীক্ষা করাইতে হইবে, এবং সকল কোভিড রোগীর যক্ষ্মা ও ডায়াবিটিসের পরীক্ষা করাইতে হইবে। ইহার একটি কারণ চিকিৎসাশাস্ত্রে নিহিত— যক্ষ্মারোগীদের কোভিড-সংক্রমণের আশঙ্কা দ্বিগুণেরও অধিক। তাঁহাদের ক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমণ অতি দ্রুত বাড়িয়া চলে, এবং মারাত্মক হইয়া ওঠে। তাই নূতন ও পুরাতন, সকল যক্ষ্মা রোগীরই কোভিড পরীক্ষা আবশ্যক। একটি প্রশাসনিক কারণও রহিয়াছে। গত বৎসরের তুলনায় এই বৎসর যক্ষ্মা রোগী নির্ণয় হইয়াছে ছাব্বিশ শতাংশ কম। রোগ কমে নাই, কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত হইয়া পড়িবার জন্য যক্ষ্মার পরীক্ষা কমিয়াছে। যাহা বস্তুত কোভিড হইতে মৃত্যুহার বাড়াইয়া দিতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ইহাও মনে করাইয়াছে যে, যক্ষ্মা রোগীর যে-সকল আনুষঙ্গিক উপসর্গ সাধারণত দেখা যায়, যথা অপুষ্টি, ধূমপান, কিংবা এইচআইভি সংক্রমণ, সেইগুলিও কোভিড রোগীকে বিপন্ন করিবে। তেমনই, ডায়াবিটিস বা মধুমেহ রোগের উপস্থিতি কোভিড রোগীর অসুস্থতা গুরুতর হইয়া উঠিবার একটি প্রধান কারণ।
অচিকিৎসিত রোগের বিপুল বোঝা যে ঝুঁকি বাড়াইতেছে, সে তথ্য নূতন নহে। রক্তাল্পতা ও অপুষ্টির এক নীরব মহামারি নিরন্তর চলিতেছে। তদুপরি রহিয়াছে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। গত বৎসরও ২৪ লক্ষ যক্ষ্মারোগী মিলিয়াছে, যাহার ৯০ শতাংশ নূতন সংক্রমণ। যক্ষ্মা নির্মূল করিবার লক্ষ্য হইতে ভারত বহু দূরে। সংক্রমণ বা নিরাময়ের সম্পূর্ণ চিত্রও সরকারের কাছে নাই, কারণ অনেকের চিকিৎসা হইতেছে বেসরকারি ক্ষেত্রে। তাঁহাদের মধ্যে অনেকের তথ্য নথিভুক্ত নহে। বৎসরে এখনও সাড়ে চার লক্ষ মৃত্যু ঘটিতেছে যক্ষ্মায়। ডায়াবিটিসও দ্রুত হারে বাড়িয়াছে, ভারতের ৭.৭ কোটি মানুষ আক্রান্ত, বিশ্বে প্রতি ছয় জন রোগীর এক জন ভারতীয়। ইহার অর্থ, এই দুইটি প্রধান রোগ, যাহা অন্য বহু রোগের সম্ভাবনা বাড়াইয়া দেয়, এবং প্রাণের ঝুঁকিও বাড়াইয়া দেয়, ভারতে অপ্রতিহত।
তাহার প্রধান কারণ অবশ্যই সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও দুর্বলতা। জনস্বাস্থ্যে সরকার কখনও যথেষ্ট বিনিয়োগ করে নাই। দ্বিতীয় কারণ, রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রকল্পগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যায় প্রশিক্ষিত কর্মী নিযুক্ত করা হয় নাই। সর্বোপরি, রোগ নিয়ন্ত্রণের কার্যসূচি লক্ষ্যভ্রষ্ট হইতেছে জানিয়াও সরকার প্রতিকারের কোনও উদ্যোগ করে নাই। ফলে সংক্রামক ও অসংক্রামক, দুই ধরনের ব্যাধিই নীরবে বাড়িয়া ক্রমাগত জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করিতেছে। কর্মক্ষম ব্যক্তিদের অকালপ্রয়াণ বা রুগ্ণতা ঘটাইয়া শ্রমশক্তির উৎপাদনশীল তা কমাইতেছে, চিকিৎসাব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করিতেছে। কোভিড-১৯ অতিমারি যদি উপেক্ষিত রোগগুলির প্রতি দৃষ্টি ফিরাইতে পারে, জনস্বাস্থ্যের কিঞ্চিৎ উপকার হইবে।