প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ব্যর্থতার প্রতিবাদ করিয়া মিছিল বাহির করিয়াছিল বিজেপি। অতঃপর পুলিশের লাঠিচার্জ, জলকামান, বিরোধী-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, দীর্ঘ যানজট মিলাইয়া পরিচিত দৃশ্য অভিনীত হইল। ভোগান্তি হইল যথেষ্ট। মিছিলের প্রয়োজন ব্যাখ্যা করিয়া বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলিয়াছেন, বিধানসভায় বিরোধীরা ডেঙ্গি বিষয়ে বার বার প্রশ্ন করিলেও সন্তোষজনক উত্তর পান নাই, তাই রাস্তায় নামিয়াছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম বলিবে, ডেঙ্গি অজুহাতমাত্র— যে কোনও কারণে, এমনকি অকারণেও, শহর অচল করিবার জঙ্গি রাজনীতিই আপাতত দিলীপবাবুদের অস্ত্র। কিন্তু, একই সঙ্গে স্বীকার করিতে হয়, ডেঙ্গি সম্পর্কে তাঁহাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নহে। গত কয়েক বৎসর বিরোধী বিধায়কদের ডেঙ্গি-সম্পর্কিত প্রশ্নগুলিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় নাই তৃণমূল সরকার। আলোচনার দাবি এড়াইয়াছে। সংবাদে প্রকাশ, এ বৎসরও ডেঙ্গির মরসুমের পূর্বেই বিরোধী বিধায়করা সতর্ক করিয়াছেন সরকারকে। উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করিয়া চিঠি দিয়াছেন, ডেঙ্গি লইয়া বিধানসভায় বিস্তারিত আলোচনার প্রস্তাব জমা করিয়াছেন, বিধানসভা চলাকালীন সরকারের উদ্দেশে নানা প্রশ্নও করিয়াছেন। সরকার আলোচনা এড়াইয়াছে, কখনও বা পরস্পর-বিরোধী নানা পরিসংখ্যান পেশ করিয়াছে। ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ কত ব্যাপক, কত রাজ্যবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে, কী করিলে সমস্যার মোকাবিলা সম্ভব, এই সকল বিষয়ে বিতর্কের সুযোগই হয় নাই বিধানসভায়।
মন্ত্রী, মেয়র, এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এক কথার মানুষ— তাঁহারা শুধু বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’ অথচ আবর্জনায় নিয়ন্ত্রণ নাই, অবরুদ্ধ খালবিলে জল জমিতে থাকে। মশার উৎপাতে নিয়ন্ত্রণ নাই, তাহাদের সংখ্যা কমিবার লক্ষণ দেখা যায় নাই। মৃত্যুও নিয়ন্ত্রণ করা যায় নাই। ডেঙ্গির মরসুম শুরু হইলেই সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলিয়া যায়। হাসপাতালের শয্যা ছাপাইয়া ভূমিতেও স্থান সঙ্কুলান হয় না ডেঙ্গি আক্রান্তদের। রক্ত এবং চিকিৎসার খোঁজে হয়রান হইয়া ঘুরিয়া ফেরেন রোগীর আত্মীয়। রাজ্যের কর্তারা নিয়ন্ত্রণ হারান নাই শুনিয়া রাজ্যবাসী চমৎকৃত। রোগ যখন পরিচিত, সমাধানও অজানা নহে, এমনকি ডেঙ্গি তাড়াইবার ‘নীল নকশা’-ও যখন প্রস্তুত আছে, তখন রোগ নিয়ন্ত্রিত হয় নাই কেন? সরকার নানা আশ্বাস দিয়াছে, কিন্তু উত্তর দেয় নাই।
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের পুরসভা ব্যর্থ, এমন সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম রাজি নহেন। বিরোধীদের উড়াইতে তিনি তাঁহাদের প্রশ্নও উড়াইয়াছেন। পদস্থ ব্যক্তিদের এই মনোভাবটিই একটি অসুখ। ইহার জন্যই ডেঙ্গি কেবলই ‘অজানা জ্বর’ বলিয়া চিহ্নিত হইতেছে, হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার ‘প্রোটোকল’ বা ক্রমিক নির্দেশাবলি পৌঁছায় নাই। কেন্দ্রের নিকট পতঙ্গবাহিত রোগে আক্রান্তদের পরিসংখ্যান দিবার কর্তব্যও লঙ্ঘন করিতেছে রাজ্য। তাহার ফলে এক দিকে মানুষের জীবন বিপন্ন হইতেছে, অপর দিকে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ প্রশাসনের মূল শর্তগুলি লঙ্ঘিত হইবার জন্য গণতন্ত্র বিপন্ন হইতেছে। ডেঙ্গি লইয়া বিজেপি অসঙ্গত রাজনীতি করিতেছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজিবার পূর্বে রোগ নিয়ন্ত্রণের পন্থা খোঁজা বিধেয়।