প্রচারই সার

ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য বৎসরের গোড়া হইতে সক্রিয় হইবার প্রয়োজন— কথাটি বারংবার বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন, মুখ্যমন্ত্রীও বলিয়াছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share:

আপাদমস্তক চেনা প্রশ্নপত্র হাতে পাইয়াও যে প্রতি বৎসর ডাহা ফেল করা সম্ভব, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাহা দেখাইয়া দিল। বিষয়, ডেঙ্গি। প্রতি বৎসর জুলাই মাসে বাংলায় তাহার আগমন হয়, নভেম্বর পর্যন্ত ঘাঁটি গাড়িয়া থাকে। এবং প্রতি বৎসরই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অপ্রতিরোধ্য গতিতে বৃদ্ধি পাইতে থাকে। এই বৎসরেও তাহার ব্যতিক্রম হয় নাই। বর্ষার বৃষ্টি পুরাদমে শুরু না হইলেও হাবড়া-অশোকনগরে প্রতি বৎসরের ন্যায় ডেঙ্গির তাণ্ডব শুরু হইয়াছে। ইতিমধ্যেই ওই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা দশ, ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ। ডেঙ্গির মরসুম ফুরাইতে যে হেতু এখনও অনেক বাকি, অনুমান, আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়িবে। সর্বোপরি, পুরসভার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগটিও নূতন নহে— রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলিয়া যাইবার উপক্রম হইলে পুরকর্মীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাইয়াছে। এত দিন তাঁহারা কার্যত কোনও পদক্ষেপই করেন নাই।

Advertisement

কেন করেন নাই? কারণ, নির্বাচন চলিতেছিল। ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য বৎসরের গোড়া হইতে সক্রিয় হইবার প্রয়োজন— কথাটি বারংবার বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন, মুখ্যমন্ত্রীও বলিয়াছেন। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় ডেঙ্গির উপদ্রব সারা বৎসরই কম-বেশি চলিতে থাকে। কিন্তু জানুয়ারি হইতে তৎপর হইলে বর্ষার প্রারম্ভে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকিবার কথা। করণীয় কী, তাহা বহুআলোচিত। প্রয়োজন, নিয়মানুবর্তিতার। তেল স্প্রে, আবর্জনা পরিষ্কার, মশার সম্ভাব্য আঁতুড়ঘর চিহ্নিতকরণের কাজগুলি নিয়মিত ব্যবধানে চলিলে রোগের মহামারি দশা হয় না। কিন্তু এই বৎসর নির্বাচনের কাজে পুরকর্মীরা ব্যস্ত থাকায় জনস্বাস্থ্য উপেক্ষিত হইয়াছে। শুধু জনস্বাস্থ্য নহে, নির্বাচনের জন্য যে কোনও সরকারি প্রকল্পেরই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। আশা থাকে, নির্বাচনপর্ব মিটিলে সুস্থিত পরিবেশে পুনরায় কাজে হাত পড়িবে। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী রাজ্যের সাম্প্রতিক অস্থিরতা সেই প্রক্রিয়াকেও ব্যাহত করিয়াছে। শাসক-সহ রাজনৈতিক দলগুলি এখনও নির্বাচনী প্রচারপর্বের ঘোর কাটাইয়া উঠে নাই। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি লইয়া ভাবে কে! এ দিকে মশা তো নির্বাচন বুঝে না। নজরদারির অভাবে সে অবাধ বংশবিস্তার করিতেছে।

এখন কামান দাগিয়াও বিশেষ লাভ নাই। মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধের নীতিতে জোর দিয়া থাকেন। জীবাণুবাহক মশা এক বার জন্মাইয়া গেলে ব্লিচিং ছড়াইয়া, তেল স্প্রে করিয়া তাহাদের ধ্বংস করা কার্যত অ-সম্ভব। সমস্যা হইল, সরকারি কর্তাদের একাংশ এখনও সেই অ-সম্ভবের আশাই করিয়া থাকেন। সেই কারণেই প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তারা সারা বৎসর নিশ্চুপ থাকিয়া হঠাৎ ভরা বর্ষায় পরিচ্ছন্ন থাকিবার বার্তা দিতে পথে নামেন। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য স্থায়ী, প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ করা হয় না। ডেঙ্গি মরসুমের শুরুতে অস্থায়ী কর্মীদের দিয়া জোড়াতালি লাগাইবার কাজটুকু হয়। তাঁহাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাটুকুও থাকে না। ইহাতে ‘কাজ করিতেছি’— এই প্রচার চলে, কিন্তু মশা মরে না, ডেঙ্গিও কমে না। বলিবার কিছু নাই। সবটাই বলা হইয়াছে। বিশেষজ্ঞরাও বলিয়াছেন, সাধারণ মানুষও বলিয়াছে। কাজটুকুই যা বাকি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement