Delhi Diary

দিল্লি ডায়েরি: শীতের সংসদে রঙিন কংগ্রেস দলনেতা

লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী এ দিক থেকে ব্যতিক্রম। জামা বা নেহরু কোট, তিনি সব রকমের রঙেই স্বচ্ছন্দ।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী, অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩২
Share:

দিল্লি ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।

সাধারণত লোকসভা বা রাজ্যসভার সাংসদরা গরমে সাদা কুর্তা-পাজামা, শীতে তার উপরে নেহরু কোট বা জ্যাকেট, সোয়েটার পরেন। তবে কোনও পুরুষ সাংসদই খুব বেশি রঙিন পোশাকের মধ্যে যান না। ধূসর, নীল, কালোর মধ্যেই জ্যাকেট-সোয়েটারের রং ঘোরাফেরা করে। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী এ দিক থেকে ব্যতিক্রম। জামা বা নেহরু কোট, তিনি সব রকমের রঙেই স্বচ্ছন্দ। শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন তিনি ইট রঙা জামা, তার উপরে আবার লাল ও সাদা রঙের নেহরু কোট পরে এসেছিলেন। সকালে সনিয়া গান্ধী সংসদে এলে অধীর তাঁকে স্বাগত জানান। সে দিনও অধীর ‘গুড মর্নিং’ জানাতেই সনিয়া মুচকি হেসে বললেন, ‘লুকিং ভেরি কালারফুল’! অধীরও লজ্জা পেয়ে কী আর করেন, হাসতে শুরু করলেন।

Advertisement

জাজ্বল্যমান: রংচঙে পোশাকে সনিয়া গান্ধীর নজর কাড়লেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

কল্যাণ-নির্ঘোষ

লোকসভার ভিতরে তাঁর গলার জোর কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে গত ১৪ বছরে। ১৩ ডিসেম্বর লোকসভা কক্ষে দুই ব্যক্তির ঝাঁপ দেওয়ার পর মকরদ্বারের সামনেটা যেন কিছুটা থমথমে ছিল গোড়ায়। হঠাৎ সেখানে বজ্রগর্জন শুরু। এসে গিয়েছেন তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়! নিরাপত্তার এই গাফিলতির অভিযোগে একটানা আধ ঘণ্টা স্বর সপ্তমে চড়িয়ে অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করে সরকারকে আক্রমণ করে গেলেন। তাঁকে ঘিরে ফেলল বহু বৈদ্যুতিন চ্যানেল। একে একে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন বিএসপির দানিশ আলি, আরএসপির এন কে প্রেমচন্দ্রনের মতো নেতারা। তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কল্যাণের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেন সংসদের পুরনো ভবনে, তৃণমূলের আগের অফিসে। বক্তব্য শেষ করে কল্যাণবাবুও এলেন তাঁদের পুরনো ঘরে, মুখে প্রশান্তি। সুদীপবাবুর উক্তি, “তোমার গলার স্বর তো পুরনো ভবনে আমাদের ঘর পর্যন্ত গমগম করেছে!”

Advertisement

কণ্ঠ রুদ্ধ বিরোধী নেতার

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল পাশ হলে কী ভাবে নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাবে, যুক্তি সাজিয়ে বলছিলেন ডিএমকের রাজ্যসভার সাংসদ তিরুচি শিবা। রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনের আসনে তখন জয়া বচ্চন। কিন্তু যতই যুক্তির জাল বুনে সরকারকে আক্রমণ করুন, শিবার কথা কিছুতেই কানে পৌঁছচ্ছিল না বাকিদের। সাংসদরা ইঙ্গিত করলেন তাঁর শালটি এমন ভাবে গলায় জড়ানো যে স্বরপ্রক্ষেপণে বাধা তৈরি হচ্ছে। জয়াও অল্প হেসে ইঙ্গিতে সেটাই বললেন তাঁকে। শেষে অল্প বিরক্ত হয়ে শালটি খুলে ফেলে প্রবীণ সাংসদ বললেন, “কী মুশকিল! শীতকালে শালও পরা যাবে না! বিষয়টি সংসদের নজরে আনা উচিত।”

অপূর্ব একা

‘সন্নাটা’ বা ‘নির্জনতা’ ভালবাসেন বিনোদ সোনকর। লোকসভায় এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান, গাজ়িয়াবাদের এই বিজেপি সাংসদকে এত দিন বিশেষ কেউ চিনত না। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে লোকসভার এথিক্স কমিটি মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ নিয়ে মাঠে নামার পরই সোনকর খবরের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর সঙ্গে মহুয়ার বাদানুবাদও সকলের জানা। সোনকর এখন নতুন সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে মাঝে-মাঝেই পুরনো সংসদ ভবনে ঘুরে বেড়ান। ফাঁকা সেন্ট্রাল হল ঘুরে দেখেন। বলছেন, এ তার পুরনো স্বভাব। এলাকায় কার্ফু জারি হলে তিনি কার্ফু পাস জোগাড় করে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। নির্জন শহর দেখতেন। হোলির দিন বিকেলে সবাই যখন বাড়িতে ঢুকে পড়ে, তখন তিনি রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে ভালবাসেন। এখন পুরনো সংসদ ভবন ছেড়ে সবাই যখন নতুন সংসদ ভবনে, তখন তিনি নির্জনতা উপভোগ করতে সেখানে গিয়ে পুরনো ভবনে ভ্রমণ করেন।

চর্চিত: বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকর। —ফাইল চিত্র।

খামোশ!

লোকসভা তখনও হলুদ গ্যাসে আচ্ছন্ন। দলে দলে সাংসদরা বেরিয়ে আসছেন নতুন ভবনের মকরদ্বার থেকে। চোখেমুখে আতঙ্ক আর বিস্ময়। সমাহিত ভঙ্গিতে বাইরে এলেন ‘বিহারিবাবু’। এতটুকু চাঞ্চল্য নেই। যেমনটা দেখা যেত ভয়ঙ্কর ভিলেনের মুখোমুখি হলেও! বললেন, “আমি পৌঁছনোর ঠিক আগেই এই ঘটনা। লোকসভায় না-ঢুকেই বেরিয়ে এলাম। ২২ বছর আগেও মন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু সংসদ আক্রমণের আগের দিন সম্মেলনে যোগ দিতে বাইরে যাই। সে বারও ছিলাম না!” কিন্তু আজ থাকলে, কী বলতেন লাফ দেওয়া যুবকদ্বয়কে? প্রত্যাশিত উত্তরই দিলেন শত্রুঘ্ন সিন্‌হা, “বলতাম, খামোশ!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement