সম্পাদকীয় ২
Coronavirus in India

এই লৌহকপাট

যে অসুখ ঠেকাইবার একমাত্র উপায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সেই অসুখের কালে সংশোধনাগারেও ভিড় হ্রাসের চেষ্টা করা উচিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যার পরে সম্ভবত আরও একটি বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত টক্কর লইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছে ভারত: কারাবন্দিদের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। আমেরিকার হিসাব বলিতেছে, সাধারণ নাগরিকের তুলনায় সংশোধনাগারের ভিতরে মাথাপিছু আক্রান্তের হার ৫.৫ গুণ অধিক, মৃত্যুর হার তিন গুণ। এ দিকে লকডাউনের পূর্বেই, ১৬ মার্চ সংশোধনাগারে বিপুল সংক্রমণ ঘটিতে পারে বলিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টও। সেই উদ্বেগ সত্য প্রমাণিত করিয়া এখনও অবধি দেড় হাজারের অধিক কারাবন্দি ও কারাকর্মীর কোভিড-১৯ ধরা পড়িয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের জেলেও বহু জন আক্রান্ত। কোনও কোনও সংশোধনাগারে দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনই কঠিন হইয়া পড়িতেছে। সংশোধনাগারে স্থান সঙ্কুলান, ক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত বন্দিকে রাখা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবের ফলেই অতিমারি পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলিয়া যাইতেছে। এমতাবস্থায়, একসঙ্গে অনেকগুলি সমস্যার অভিমুখে নজর দিতে হইবে। তবে, তাহার জন্য সরকারকে বন্দিদের মানবাধিকার স্বীকার করিতে হইবে।

Advertisement

যে অসুখ ঠেকাইবার একমাত্র উপায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সেই অসুখের কালে সংশোধনাগারেও ভিড় হ্রাসের চেষ্টা করা উচিত। সর্বোচ্চ আদালত এই কথা জানাইবার পরে কিছু বন্দি মুক্তি পাইয়াছেন, যদিও সংখ্যাটি এখনও যথেষ্ট নহে। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসাবে কয়েকটি রাজ্যের হাইকোর্ট সকল বন্দির কোভিড পরীক্ষার নির্দেশ দিয়াছে। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জানাইয়াছে, প্রত্যেক বন্দিকে সুরক্ষা দিবার মতো অর্থ, সরঞ্জাম বা প্রশাসনিক উৎসাহ ভারতে অনুপস্থিত। মুশকিল হইল, ভারত যে হেতু নিজেকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলিয়া দাবি করে, যত ঘৃণ্য অপরাধেই কেহ কারাবন্দি হউন, ভারতীয় রাষ্ট্র তাঁহার মানবাধিকার হরণ করিতে পারে না। তাঁহাকে জ্ঞানত বিপদের মুখে ঠেলিয়া দিতে পারে না। কিন্তু, এই মৌলিক কথাটি ভারতের রাজনৈতিক স্তরে যথেষ্ট স্বীকৃত নহে। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি বহু ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন না দিয়া কারাবন্দি করিয়া রাখা রাষ্ট্রীয় প্রতিশোধস্পৃহার প্রকাশও বটে। যে কারণে অশীতিপর, গুরুতর অসুস্থ ভারাভারা রাওকেও হাসপাতালে পাঠাইতে এতখানি সময় লাগিয়া যায়।

অথচ ইউরোপ হইতে শিখিতে পারিত ভারত। করোনার কালপর্বে মহাদেশে ১,৩০,০০০ বন্দি মুক্তি পাইয়াছেন। একই পথে হাঁটিয়া জরুরি ভিত্তিতে সংশোধনাগারের এক-তৃতীয়াংশ খালি করিয়া দিয়াছে তুরস্ক ও ইরান। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সম্পূর্ণ মার্জনা করা হইয়াছে। এই প্রসঙ্গে ভারতের ‘বিচারাধীন বন্দি’দের কথা বিশেষ উল্লেখ্য। নিতান্ত ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ব্যতীত আর সকলেরই জামিন প্রাপ্য হইলেও জামিন নামঞ্জুর করা এই দেশে কার্যত রীতি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। যে দেশের সংশোধনাগারে ১১৭ শতাংশ অতিরিক্ত বন্দি বাস করেন, সেখানে ভিড় কমাইবার স্বার্থেও বিচারাধীন বন্দিদের জামিন দেওয়া বিধেয়। মিশর এবং হন্ডুরাসের কারাগারে কোভিডে আক্রান্ত হইয়া একাধিক রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যু ঘটিয়াছে। আশঙ্কা, যথাযথ বিকল্প পরিকল্পনা করিতে না পারিলে ভারতেও তেমন ঘটিতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement